মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্ণ হয়ে ৪৬ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে উন্নয়ন ও গণমাধ্যমকর্মী মোহাম্মদ গোলাম নবী আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জন-ব্যর্থতা ও করণীয় বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখছেন চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য। পর্ব-৫ (ডিসেম্বর ৩, ২০১৬)
ঘুষ, দুর্নীতি, অবৈধ আয়ের সুযোগের সঙ্গে ক্ষমতা, গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ এবং চাকরির নিশ্চয়তা বাংলাদেশের চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে তো বটেই পরিবারের কাছেও সরকারি চাকরির কদর বাড়িয়েছে। যে কারণে তুলনামূলকভাবে বেতন কম হওয়া সত্যেও বাংলাদেশের চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে নাম্বার ওয়ান পছন্দ সরকারি চাকরি।
সংবাদপত্রে আপনারা অনেকসময়ই আমলাদের নানান মুখরোচক কাহিনী পড়বেন। যেমন, কালের কণ্ঠ একবার লিড নিউজ করল “প্রকল্প শেষ, গাড়ি উধাও”। গাড়ি হলো আমলাদের দ্বিতীয় প্রিয় বিষয়। গাড়ি নিয়ে হাজারো গল্প আছে সরকারি অফিসগুলোতে। যার বেশিরভাগই ক্ষমতার অপব্যবহারের গল্প। এই ধরনের অপরাধের বিস্তৃতি একদিনে এককভাবে গড়ে উঠেনি। এখানে তাদের জিগির দোস্ত হলো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আসলে আমলা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একে অন্যকে ব্যবহার করতে পছন্দ করে। প্রকল্পগুলোতে কি হয় সে ব্যাপারে একটা উদাহরণ দেই। ঢাকার নিকেতনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প অফিসে একসময় চারটি গাড়ি ছিলো। তিনটি হোন্ডা সিআরভি আর একটি ল্যান্ড ক্রুজার।
বিএনপির শাসনামল। খন্দকার মোশাররফ তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রী। ল্যান্ড ক্রুজারটি ব্যবহার করতেন প্রজেক্ট ম্যানেজার আর অন্য তিনটি প্রজেক্টের ডেপুটি ম্যানেজার এবং একজন কনসালটেন্ট। বৃহস্পতিবার এলেই তারা ঠিক করতেন এই সপ্তাহে কোন একটি বা দুটি গাড়ি যাবে মন্ত্রীর সেবায়। বিভিন্ন প্রকল্প থেকে মন্ত্রী তার সাঙ্গপাঙ্গদের বহর অনুযায়ী ১০-১৫টি গাড়ি রিকুইজিশন দিতেন। মন্ত্রীতো তার দলবল নিয়ে তেল পোড়ালেন, এই তেলের হিসেব তো দিতে হবে আমলাকে। কিভাবে দেবে সে? চিঠি ডেলিভারিসহ নানান মিথ্যা লিখে লগবই ভর্তি করার দরকার হতো তখন। এই যে তিনি মন্ত্রীসেবা করলেন তার প্রতিদানে মন্ত্রী তাকে ওই পদে রেখে দিচ্ছেন। তখন তিনি ক্ষমতাধর হলেন। সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রকল্পের অর্থ এদিক-সেদিক করতে লাগলেন। ওই অফিসের অধীনে বিশ্বব্যাংক থেকে সুদে টাকা এনে কাজ করা হচ্ছিল তখন। তো অর্থের অপচয় হলো আর ঋণ শোধের দায় বর্তালো জনগণের উপর। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।

আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক। এবারের ঘটনার সময়কাল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। ঢাকার মিরপুরে প্রাথমিক অধিদপ্তরের প্রকল্পের গাড়ি চেয়ে পাঠিয়েছে স্বয়ং মন্ত্রণালয়ের সচিব। প্রায়ই তিনি এভাবে চান। তার অধস্তন কর্মকর্তা সেটি না পাঠিয়ে পারেন না। অথচ সচিবের ফুলটাইম গাড়ি আছে তবুও কেন এই গাড়ি? কারণ তার স্ত্রীর জন্য পৃথক গাড়ি দরকার। প্রকল্প কর্মকর্তা কায়দা কানুন করে গাড়ি দেয়া থেকে বিরত থাকেন কিন্তু তাতে তার সঙ্গে সচিবের দূরত্ব বাড়ে মাত্র। সচিব তার ছেলেমেয়ের জন্য অন্য আরেকটি প্রকল্প থেকে গাড়ি নেন। এতে তার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের আরেকটি ঘটনা বলি। এবারেরটা বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের রুমে কিছুদিনের মধ্যে অবসরকালীন প্রস্তুতিতে যাবেন এমন একজন উপ-সচিব এসে বললেন “স্যার আমাকে থাইল্যান্ডের এই ট্রেনিংয়ে পাঠাতে হবে?” অতিরিক্ত সচিব বললেন, কিন্তু আপনি তো এই ট্রেনিং নিয়ে এসে কাজে লাগাতে পারবেন না। রিটায়ার্ডমেন্টে যাচ্ছেন। উপসচিবের ত্বরিত জবাব, “সেজন্যই তো যেতে চাচ্ছি স্যার। জানেন তো স্যার এটাই শেষ। আর তো জীবনে কোথাও যেতে পারবো না।”
কোন একটি প্রকল্পে সরকারি কর্মকর্তা ও দাতা সংস্থার মধ্যে নেগোসিয়েশন চলছে। দাতা সংস্থার কিছু শর্ত কোনমতেই মানতে রাজী নন সরকারি পক্ষ। শেষ পর্যন্ত আরো একটি ফরেন ট্রেনিং এবং তিনটি সফর যুক্ত করার মাধ্যমে দাতা সংস্থার শর্তগুলো মেনে নিল সরকারি কর্মকর্তাগণ। এই ধরনের ঘটনা প্রতিদিন কোন না কোন মন্ত্রণালয়ে ঘটছে। সম্প্রতি একটি ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার আগে ইন্সপেকশনের জন্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছে। যাই হোক। সরকারি চাকরির মান মর্যাদা তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে।
ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে তাদের ভাষায় “নেটিভদের” শাসন করার সুবিধার্থে ভারতীয় বেসামরিক প্রশাসন (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) চালু করেছিল। শুরুতে অফিসার পদে মূলত ব্রিটিশরাই ছিল, পরে বিশ শতকে ধীরে ধীরে স্বদেশীরা ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস)-এ জায়গা করে নিতে শুরু করে। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সেই চাকরি পেতে হতো বলে শুধু মেধাবী ও চৌকস ছেলেমেয়েরাই আইসিএস চাকরিতে ঢুকতে পারত। ভারতবর্ষ ভেঙ্গে যখন ভারত পাকিস্তান নামের দুটো রাষ্ট্র হলো তখন পাকিস্তানী শাসকেরা আইসিএস-এর নাম বদলে করল সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসেস অফ পাকিস্তান (সিএসএসপি)।
আমরা জানি ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়া পাকিস্তান নামের দেশটির দু’টো অংশ ছিল। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান, যা পরে বাংলাদেশ হলো। যেহেতু পাকিস্তানের শাসকরা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী সেকারণে সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দাদের অবস্থা ব্রিটিশ আমলের ভারতীয়দের মতোই হলো। অর্থাৎ সিএসএসপি অফিসার হওয়া পূর্ব পাকিস্তানীদের জন্য কঠিন ছিল। তাই পাকিস্তান আমলে যারা সিএসএসপি অফিসার হয়েছেন তারা ছিলেন মেধাবী ও চৌকস । ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশী শাসকেরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী ধারা বজায় রেখে তৈরি করলেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস (বিসিএস)। আর বিসিএস অফিসার নিয়োগের জন্য তৈরি করা হলো বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন।
বৃটিশ আমলে আইসিএস অফিসারদের কাজ ছিল বৃটিশদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। সিএসএসপি অফিসারদের কাজ ছিল পাকিস্তানী শাসকদের সহায়তা করা। কিন্তু বিসিএস অফিসারগণ সেই ধারা ভেঙ্গে নতুন ধারা তৈরি করেন। কী সেটা বলার আগে একথা বলা দরকার যে, ভারতবর্ষ ভেঙ্গে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার পর এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানে মূলত মিলিটারি শাসন ছিল। সেই অর্থে সিএসএসপি অফিসারদের কাজ ছিল সামরিক জান্তাদের সহায়তা করা। এমনকি বাঙালী সিএসএসপি অফিসারগণ ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী গঠনসহ পাকিস্তানী শাসকদের বাংলাদেশীদের নিপীড়ন ও নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করেছেন। বিতর্কিত সেই সব অফিসারদের অনেকেই পরে স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারনী পদে আসীন হয়েছেন। জীবতদের মধ্যে এখনো কেউ কেউ আওয়ামী লীগ রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দাপ্তরিক কাজে সহায়তা করা ও প্রশাসন চালানোর জন্য সদ্য স্বাধীন দেশে দক্ষ লোকের অভাব দেখা দেয়। তখন আইন করে ঠিক করা হয় মন্ত্রী ও এমপিরা আইন প্রণয়ন করবেন এবং জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেই আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনায় প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করবেন। তখন দু’টি ঘটনা ঘটল- (১) ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের শাসনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সিভিল সার্ভিস ধারণাটি রেখে দেয়া হলো। (২) ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদেশ অমান্য করে পাকিস্তান সরকারের গোলামী করা এবং পাকিস্তানীদের শাসন কাজে সহায়তাকারী ও স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন সরকারি কাজে নিয়োজিত থেকে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করা এবং পাকিস্তানী ভাবধারায় বিশ্বাসী সরকারি কর্মকর্তারা স্বাধীন বাংলাদেশে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পেলো। এভাবে একদম স্বাধীনতার সূচনালগ্নেই স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধীদের অবস্থান তৈরি হলো, যাদের অনেকেই ছিলেন রাজাকার বাহিনীর নিয়োগকারী ও পৃষ্ঠপোষক। ওই সময়ে এই ধরনের পুনর্বাসনের বিরোধীতা করেছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদসহ আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা কিন্তু তাদের সেই বিরোধীতা ধোপে টেকেনি। কেউ কেউ মনে করেন পাকিস্তান আমলের সেই সব সিএসপি অফিসারদের কারণেই ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তারা দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি বলেই দেশকে বারবার বিপদগ্রস্ত করতে চেয়েছে। তারা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত চাকরি করেছে এবং দেশের শাসন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। কেউ কেউ এটাও মনে করেন, জাতির পিতার হত্যাকান্ডের সঙ্গেও এরাই জড়িত ছিল। এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার।
তবে, স্বাধীন বাংলাদেশে “ঘাঘু” ও পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা অতি অল্প সময়েই নিজেদের একটা পৃথক ঘরানা তৈরি করে নেয়। তারা যেহেতু লেখাপড়া জানা এবং অপরদিকে জনপ্রতিনিধিদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তুলনামূলকভাবে কম ছিল সরকারি কর্মকর্তারা প্রথমেই নিজেদের মন্ত্রীদের আস্থায় নিয়ে ধীরে ধীরে মন্ত্রানলয়গুলোকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয়। এভাবে স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যে সরকারের মধ্যেই আরেকটি সরকার তৈরি করে আমলারা। তারা কতোটা বেপরোয়া হতে পারে এবং রাষ্ট্রের নিয়ম নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারে তার একটি নগ্ন প্রকাশ দেখা যায় ১৯৯৬ সালে সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে। এরপর আর বাংলাদেশী আমলাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই ঘটনার উপযুক্ত ব্যবস্থা না হওয়ায় বাংলাদেশে আমলা ও এমপি মন্ত্রীরা দুর্নীতির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব এক ধরনের মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে একে অপরের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। যারা এই চক্রের বাইরে আছে তাদের সংখ্যা কম এবং তাদের কণ্ঠও সেভাবে শোনা যায় না। এখন এটা ধরেই নেওয়া হয় যে, একজন সচিব অবসর নেওয়ার পর রাজনীতির খাতায় নাম লেখাবেন এবং এমপি ইলেকশন করবেন। আমলাদের এই যে রূপান্তর সেই রূপান্তরের খেসারত দিয়ে চলছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।
সরকারি কর্মকর্তাদের এই দুর্নীতির পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারীদের দৌরাত্মের কথা না বললেই নয়। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তথাকথিত সিবিএ নামের সংগঠনের মাধ্যমে প্রথমত সরকারি কর্মকর্তাদের জিম্মি করে এবং শেষ পর্যন্ত জনগণকে শোষণ করে থাকে। তারা তাদের দাবী দাওয়া আদায়ের নামে বাংলাদেশের সরকারি সেবা সংস্থাগুলো যেমন, ওয়াসা, বিদ্যুত, গ্যাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।
বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে এই দেশের গণমানুষের রাজনীতিকে কলুষিত করতে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘুষখোর আমলারা যুক্ত হয়েছেন শুধুমাত্র মেধা ও বুদ্ধির জোরে। রাজনীতিতে মেধাশূণ্য লোকদের পদচারণা বাড়ার ফলে কিংবা মেধাবীদের রাজনীতি বিমুখতার সূত্র ধরে স্বাধীন বাংলাদেশে কতগুলো চতুর ও ধূর্ত মানুষ রাজনীতিতে ভীড়ে গিয়ে যে গুটিকয়েক সৎ রাজনীতিক আছেন তাদেরকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। সভ্য সমাজে কিছু প্রতিষ্ঠান থাকে যারা মন্দের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সমাজে সত্যকে সমুন্নত রাখে। আমাদের দেশে এমন প্রতিষ্ঠান নব্বইয়ের দশকের আগে থাকলেও এখন আর আছে কিনা সেটা বড় ধরনের প্রশ্নসাপেক্ষ ও বিতর্কের বিষয়। ফলে বাংলাদেশের সভ্যতা যে ইতোমধ্যেই হুমকির সম্মুখীন সেটা বলাই বাহুল্য। এমন একটি দেশে সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ খাবেন, ছাত্রনেতারা টেন্ডারবাজি করবেন, এলাকার সরকার দলীয় নেতারা সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করবেন এবং অন্যরা এসব স্বাভাবিক বলে মনে করবেন। ইতোমধ্যে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সত্য-মিথ্যার বাক্সে পরিণত হয়েছে। মিথ্যা বলতে বলতে একসময় মিথ্যাকেই মানুষ সত্য বলে ধরে নেয় যদি তাহলে অসভ্যতার ষোলকলা পূর্ণ হয় আর কি।
এই লেখাতে একটি কথা সুস্পষ্টভাবে বলা দরকার। এই দেশে মহৎ প্রাণ ও দেশ দরদি আমলারাও আছেন। যারা কোন সময় বেধে কাজ করেন না। কোন ধরনের লোভে পা দেন না। যাদের বাড়িতে মাস শেষে চা বানানোর চিনি থাকে না। এমনই একজন ইউএনও বলেছিলেন, “আমরা তো সরকারি চাকরি করি। ফুলটাইম কাজ করি। আমাদের আবার কাজের সময় কি?” আরেকজন ডিজি বলেছিলেন, “সময় বেঁধে কাজ না করার পরও জঞ্জাল সাফ করতে পারিনি। কারণ সিস্টেমের মধ্যে একবার জঞ্জাল তৈরি হলে পুরোপুরি কখনো সাফ করা যায় না। অবসর গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় আর সতর্ক থাকতে হয় নতুন করে যেন জঞ্জাল ঢুকতে না পারে।”
শেষ কথাটি বলি, জনগণ রাজনীতিক দ্বারা চালিত একটি আধুনিক দেশ চায়, আমলা নির্ভর ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়ন্ত্রিত পঙ্গু কোন দেশ জনগণ আর চায় না৷ জনগণ আরো দেখতে চায় যারা জনগণের অধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তারা শাস্তি পাচ্ছে৷ হয়তো এভাবেই একদিন একটি উন্নত ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ পাবে বাংলাদেশের জনগণ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)