রাজধানীর নিকেতন এলাকায় সোমবার রাতে শাকিল নামে এক নিরাপত্তাকর্মী খুন হন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরাফাত নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানিয়েছে, ইয়াবার টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরেই শাকিলকে হত্যা করা হয়।
এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও মাদককে কেন্দ্র করে খুনের অনেক ঘটনার কথা আমরা জেনেছি। তবে এ ঘটনায় যে মাদক দ্রব্যটির নাম এসেছে, তা এখন সর্বনাশা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। শুধু নামেই নয়, কাজেও তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও ধারণা করা হয়, কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের অন্তত কয়েক লাখ মানুষ এই মরণ নেশায় আসক্ত।
বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালের আগে ইয়াবার নাম খুৃব একটা শোনা যায়নি। তবে ২০০১ সালের পর তার পরিচিতির সাথে সাথে ব্যবহারও বাড়তে থাকে। কক্সবাজার সীমান্ত হয়ে মিয়ানমার থেকে আসা মেথাফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি এ মাদকের আবিষ্কার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। বলা হয়, জার্মান এক নায়ক অ্যাডলফ হিটলারের নির্দেশে তা তৈরি হয়। তখন দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেনাদের ক্লান্তি দূর করে তাদের মধ্যে উদ্দীপনা ফিরিয়ে আনতে মূলত ইয়াবার ব্যবহার শুরু হয়।
বেশি দামের কারণে এক সময় ইয়াবা উচ্চবিত্তের মাদক ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে তা সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দেশের এমন কোনো এলাকা নেই; যেখানে ইয়াবা পাওয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা ৪০ কোটি পিস ইয়াবা বাংলাদেশে আসে। যার ১০ ভাগও তাদের হাতে ধরা পড়ে না। শুধু ২০১৭ সালেই ৩ কোটি ৮০ লাখ ৯১ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে অাইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
মোট কথা, দেশে ইয়াবায় আসক্তদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা অাসার সংখ্যাও। আর এর সঙ্গে জড়িত আছে বিভিন্ন পর্যায়।
আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরে তা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে বলেছেন। তারপরও ইয়াবা অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিস্তার লাভ করছে।
কিন্তু কেন? এর একটাই উত্তর, কয়েক হাজার কোটি টাকার ইয়াবা ব্যবসা চলছে প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে। এই মহলে যেমন আছেন রাজনীতিবিদ, আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাও। তাই শত পদক্ষেপের পরও ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধ করতে পারছে না সরকার।
তাহলে আমরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারি এই মরণ নেশার আগ্রাসন থেকে? অামাদের যুব সমাজ কি ইয়াবার স্রোতে হারিয়ে যাবে? আমরা মনে করি, আর বিলম্ব নয়, এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ নিন ইয়াবার বিরুদ্ধে। না হলে এর ফল হবে ভয়াবহ।