নির্বাচনের আগে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার অন্যতম ভূমিকায় থাকা বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়েই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এ জোটে আছে – বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি এবং নাগরিক ঐক্য। কিন্তু এ জোটে কেন রাখা হলো না বিকল্পধারাকে? সেই প্রশ্ন এখন অনেকের মুখে।
শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে সেই ব্যাখ্যাই দেয়া হয়েছে।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার বাসায় অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আজকের স্বেচ্ছাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে। যেখানে থাকবে না একক কোনো রাজনৈতিক দলের একক আধিপত্য।’
সেখানে বিকল্পধারার পক্ষে দেয়া ঘোষণা পাঠ করেন দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।
এতে বলা হয়, এ সময় বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর কোনো ষড়যন্ত্রে বিকল্পধারা যোগ দেবে না।
তবে এতকিছুর পরও নিজেদের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে বিকল্পধারার পক্ষ থেকে চেষ্টা থাকবে বলে জানান বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন: বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জেএসডি এবং নাগরিক ঐক্যকে সঙ্গে নিয়ে আমরা জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, বারবার ওই ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করার জন্য একটি চক্র কাজ করেছে।
‘‘বিগত বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বাধা হিসেবে আমাদের দিকে অঙ্গুলি দেয়া হয়েছে। আমাদের জন্য ঐক্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে! তারপরও আমরা কোনো কথা বলিনি। যাতে এই ঐক্য প্রক্রিয়া যেন নষ্ট না হয়ে যায়। ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে যে সমোবেশটি করা হয়েছিল সেটার জন্য আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। তারপরও আমরা উপস্থিত ছিলাম। সেখানে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়, কিন্তু আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনায় করা হয়নি।’’
মাহির অভিযোগ, ৭ অক্টোবর একটি মানববন্ধন কর্মসূচিতে তাদেরকে ৪০ মিনিট আগে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ঐক্যের স্বার্থে আমরা কোনো কথা বলিনি। হঠাৎ আমাদের জানানো হলো ঐক্যের পক্ষ থেকে ৭ দফা পেশ করা হবে। কিন্তু আমরা কিছুই জানতাম না। জাফরুল্লাহ চৌধুরীও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি যোগ করেন, ‘‘সমাধানে পৌঁছাতে বিকেল সাড়ে তিনটার মধ্যে কামাল হোসেনের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। পৌঁছানোর পর দেখতে পেলাম বাসায় কোনো লোক নেই। এমনকি তার বাসার দরজা খোলার কোনো লোক নেই। থেকে ফোন দিয়ে বলা হয় আমাদেরকে চেম্বারে আসতে! আমরা বললাম, এটা অসম্ভব। দেশ এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র স্বার্থগুলো এতোদিন উপেক্ষা করে এসেছি।”
এরপরই নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘গত এক বছর ধরেই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার একটি চেষ্টা করছিলাম। শুরুতে ড. কামাল হোসেন নাগরিক ঐক্য প্রক্রিয়াকে আসতে দিতে চাননি। কয়েক মাস লেগেছে তাকে রাজি করতে। মান্নার মতো কেউ যদি নেতৃত্ব আসে তাহলে আমরা একটা ইয়াংগার ভয়েস পাবো। সে অর্থে আমরা মান্নাকে ডাকি। কাদের সিদ্দিকী এবং ড. কামাল হোসেন যুক্তফ্রন্টে আসতে রাজি হননি। বিকল্পধারা বাংলাদেশ আসম আব্দুর রব এবং নাগরিক নাগরিক ঐক্যের মান্নাকে সঙ্গে নিয়ে তিনজন মিলে আমরা যুক্তফ্রন্ট গঠন করি। এরপর যাতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হতে কোনো বাধা না থাকে সেভাবে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে গেলাম। ড. কামাল হোসেন প্রথমে গণফোরাম নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান। এরপর ঐক্য প্রক্রিয়া নামে তাদের একটি সংগঠন আছে সেটা নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে আসতে চাইলেন।’
‘‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। অনেক কথা হতো। শেষে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আসার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি তাকে স্পষ্ট বলেছি, আমাদের দুইটি ব্যাপার আছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, শুধু তাদের সঙ্গে ঐক্য করতে চাই। যারা আমাদের মা-বোনদের মানচিত্রকে অস্বীকার করবে, মা-বোনদের ত্যাগকে অস্বীকার করবে, এখন পর্যন্ত যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না তাদেরকে বাদ দিয়ে আসতে হবে।’’
বি. চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এক দলীয় শাসন দেখেছি, এক দলীয় গণতন্ত্র দেখেছি। জোটের সরকার এলো, মহাজোট এলো… আমাদের ঐক্য নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। শেষ পর্যন্ত একটি দলের প্রাধান্য থাকে একম কোন ঐক্য আমরা চাই না। আজ আমরা যে স্বেচ্ছাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি তাদের সরকারে নাকি ১৪টি দল আছে। তাকিয়ে দেখবেন, যত অভিযোগ একটি দলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ একটি দলের এমপিদের বিরুদ্ধে, একটি দলের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। তার মানে কি জোট হলেও একটি দলই সব নিয়ন্ত্রণ করছে।’
বিএনপির বিষয়ে তিনি সব সময় আন্তরিক ছিলেন জানিয়ে বলেন, ‘বিএনপি যখন এখানে ঢোকার প্রশ্ন আসলো, তখন আমি খুবই আন্তরিক ছিলাম। কারণ, বিএনপির প্রতি আমার একটি আলাদা সহানুভূতি কাজ করে। আমি বিএনপির প্রথম মহাসচিব ছিলাম। বর্তমান বিএনপিকে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা আমাদের সঙ্গে একমত হতে পারেন নাই। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।’