বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা মহামারি বিষয়ে কিছুটা সুখবর দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচও বলছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে করোনার ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়লেও বিশ্বে সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, করোনা মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২১ কোটি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আর করোনার মারা গেছেন ৪৪ লাখের বেশি মানুষ। তারা বলেছে, ২২ আগস্টে শেষ হওয়া সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় নতুন করে ৪৫ লাখ মানুষ সংক্রমিত। এক সপ্তাহ আগেও নতুন সংক্রমণ সংখ্যা প্রায় একই রকম ছিল। দুই মাসের পর্যালোচনার ভিত্তিতে করোনা সংক্রমিতের হার বর্তমানে স্থিতিশীল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুও কমছে। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিও অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ৭০ দিন পর গতকাল বুধবার দেশে রোগী শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের নিচে নেমেছে। এবছরের জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের বেশি সংক্রমণ হলেও বর্তমানে তা ৫ হাজারের ঘরে। মৃত্যুর সংখ্যা অবশ্য কোনোদিন বাড়ছে, কোনোদিন কমছে। লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ তুলে দেয়াতে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি সংক্রমণ হারে। পাশাপাশি ভ্যাকসিন কার্যক্রমও চলছে জোরেশোরে। গতকাল একদিনেই ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৬২ জন মানুষকে। আর শুরুর পর থেকে দেশে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫৮ ডোজ। এরমধ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৪ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৭২ লাখ ১ হাজার ৯৬৪ জন। সবমিলিয়ে বিষয়গুলো বেশ ইতিবাক বলে আমরা মনে করি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন কয়েকদিন আগে করোনার গতি প্রকৃতি বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা খুবই আশাব্যাঞ্জক। তিনি ভারতকে উদারহরণ হিসেবে ধরে বলেন, “একটি জাতি করোনাভাইরাস এর সঙ্গে বসবাস করতে শিখে গেছে। প্রথম দিকে এই ভাইরাস জীবনকে প্রভাবিত করেছে। এখন মানুষ এই ভাইরাসকে প্রভাবিত করছে। এই অবস্থাটিকেই বিজ্ঞানীরা ‘এন্ডেমিক’ বলেন। ”
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়, তখন চারিদিকে আক্রান্ত-মৃত্যুর সংবাদে বিরাট এক আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল সবার মনে। বাস্তবতার নিরীখে ওই অবস্থা থেকে সবাই ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শুরু করেছে। জীবন ও জীবিকাকে পাশাপাশি রেখে সাবধানতার সঙ্গে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে দেশের মানুষ। আমাদের আশাবাদ, খুব শীঘ্রই পুরোবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে।