বিশ্ব মহামারী প্রতিরোধে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে চলে এসেছে ভ্যাকসিন। মানুষ ধীরে ধীরে ভয় থেকে বেরিয়ে আসছে, আশায় বুক বাঁধছে। তবে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, এধরনের অ্যালার্জির ইতিহাস যাদের রয়েছে তারা যেন ভ্যাকসিন গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
এরই মধ্যে ফাইজার ও বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন ওষুধ সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, বাহরাইন-এ পাঁচটি দেশ। যুক্তরাজ্যে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ। কানাডায় পৌঁছে গেছে ভ্যাকসিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্ডার দিচ্ছে ভ্যাকসিনের। এরই মধ্যে মডার্নার ভ্যাকসিনও অনুমোদন পাওয়ার সবুজ সংকেত পেয়েছে এফডিএ’র।
তবে ভ্যাকসিন ট্রায়াল ও চূড়ান্ত প্রয়োগে দেখা যাচ্ছে, গ্রহণকারীর দেহে একাধিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে সামনে আসছে বিভিন্ন প্রশ্ন, যেমন- এসব ভ্যাকসিন কী পরিমাণে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম? ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কি অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে পারে? ভ্যাকসিন ব্যাপক হারে প্রয়োগ হওয়ার পর মহামারী কীভাবে প্রশমিত হবে এবং ভ্যাকসিনের সুরক্ষামূলক প্রভাব কতদিন স্থায়ী হবে ইত্যাদি।
ভ্যাকসিন গ্রহণের পর যুক্তরাজ্যের দু’জন স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে ‘এনাফিল্যাক্সিস’ নামক একধরনের তীব্র অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাদের উভয়েরই এই অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে বলে পরে জানা গেছে। আবার আরেকজনের হার্টবিট বেড়ে গেছে। পরে তাদেরকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।

ছাড়াও ভ্যাকসিন গ্রহণের পর মাথা ব্যথা, গায়ে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা এধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাদের মতে, এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমস্যা নয়, বরং আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরের যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে তার দৃষ্টান্ত। ভ্যাকসিন গ্রহণের পর এধরনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
ফিলাডেলফিয়ার শিশু হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ পল অফিট বলেন, একটা ভ্যাকসিন যখন তৈরি করা হয় তখন আপনি এর সবকিছু জানবেন তা নয়। তবে একেবারেই যে কম জানেন তাও নয়।
ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের ইমিউনোলজিস্ট এলেন এফ ফক্সম্যান বলেছেন, ডোজ নেওয়ার পর জ্বর বা ব্যথার মতো বিষয়গুলো স্বাভাবিক এবং তা প্রকৃতপক্ষে আপনার শরীরে ভ্যাকসিন কাজ করছে-এমনটা ইঙ্গিত দেয়। সেটা একটা ভালো দিক।
তিনি এটাকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফৌসি বলছেন যে, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়াটা ফাইজারের ভ্যাকসিনের জন্য হাততালির মতো উৎসাহিত হওয়ার কিছু নয়। দ্রুত অনুমোদনের কারণে এর কিছু বিষয় এখনো চূড়ান্ত সুরক্ষার দিক পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। প্রয়োজনীয়তার জন্য সাধারণ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করতে হচ্ছে আবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষণও অব্যাহত রয়েছে।