করোনা: কলকাতায় আটকে আছেন তাঁরা, দেশে ফিরবেন কবে?
ছবির কাজে কলকাতায় গিয়ে করোনার কারণে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশের পাঁচ অভিনেতা ও কলাকুশলী…
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে চলচ্চিত্র নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরীর একটি ভৌতিক ছবির জন্য ভারতে গিয়েছিলেন অন্তত ১৫ জন শিল্পী ও কলাকুশলী! কিন্তু সেখানে গিয়ে প্রায় আড়াই মাস ধরে আটকে আছেন অভিনেতা শিপন মিত্র, ইমতু রাতিশ ও সাঞ্জু জনসহ মোট পাঁচ জন।

মূলত ইফতেখারের ওই ছবির জন্য আইসল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিলো পুরো টিমের। সেখানে যেতেই দিল্লিতে আইসল্যান্ডের ভিসা অফিসে পাসপোর্ট জমা দেন তারা। কিন্তু এরমধ্যেই করোনার হানা! আটকে যায় সকলের পাসপোর্ট।
পরবর্তীতে দশ জনের পাসপোর্ট ফেরত আসলেও অভিনেতা শিপন, ইমতু, জন ও তন্ময়ের ভিসা আসেনি। বাধ্য হয়েই ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতার একটি হোটেলে আটকে থাকতে হচ্ছে তাদের।
এই দলের বাকি ১০ জন ফেরত এসেছেন বাংলাদেশে। তাদের মধ্যে চন্দন রায় পাসপোর্ট পেলেও তিনি নিজের সুরক্ষার জন্য স্বেচ্ছায় থেকে গেছেন কলকাতায়। বাকি চারজন আছে বাধ্য হয়ে! ভারতে বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে কবে হাতে পাসপোর্ট পাবেন আর কবেই বা দেশে আসবেন বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নন এই অভিনেতারা।
কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার একটি হোটেলে আছেন তারা। সেখান থেকে ইমতু, সাঞ্জু ও চন্দন তাদের অবস্থানের কথা জানান চ্যানেল আই অনলাইনকে।
ইমতু বলেন, গ্রুমিং ও ভিসার উদ্দেশ্যে এসেছিলাম। গ্রুমিং ঠিকঠাক হলেও ভিসা-পাসপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা যে প্রোডাকশনের হয়ে কাজের জন্য এসেছিলাম, তারা খুবই সাপোর্ট দিচ্ছেন আমাদের। একজন সচেতন অভিভাবকের মতোই টেক কেয়ার করছেন। উনি তার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ করছেন। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ তার কাছে। আমাদের জন্যই হোটেলটা খোলা রাখা হয়েছে। সকলের দোয়ায় সুন্দর ও ঠিকঠাক আছি।
তিনি বলেন, ইউটিউব দেখে দৈনিক শরীর চর্চা করি, হোটেলের ছাদে দুবার হাঁটাহাঁটি করি। রমজান শুরু হয়েছে, ইচ্ছে রয়েছে এ মাসে কোরআন খতম দেব। তিনি বলেন, আমরা এ কজন আছি প্রত্যেকেই রান্না বান্না করছি। নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ফেসবুকে যারা আছেন তারা হয়তো দেখেছেন এখানে কয়েকজন মিলে একটা ভিডিও তৈরি করেছি, প্রশংসাও পেয়েছি। মোবাইলে ধারণ করে মোবাইলেই এডিট করি। কীভাবে জানি সুন্দর সময় কেটে আচ্ছে।
দেশে ফেরা প্রসঙ্গে ইমতু বলেন, অ্যাম্বাসির সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু পাসপোর্টটা অন্য জায়গায় আটকে আছে, তাই খুব বেশি কিছু করার নেই। একটা সমাধানে আসার চেষ্টা করছি। যদিও করোনা ইস্যুতে এখন ঘর থেকে বের হওয়া মোটেও উচিত না। তবে এখানে নিরাপদে আছি।
সাঞ্জু জন বলেন, দিল্লিতে আইসল্যান্ড অ্যাম্বাসিতে আমার, ইমতুর, শিপন ও তন্ময়ের পাসপোর্ট রয়েছে। যেদিন হাতে পাওয়ার কথা সেদিন থেকে লকডাউন শুরু হয়। তাই পাসপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোথাও মুভ করতে পারছিনা। বহুদিন হয়ে যাচ্ছে এখানে আটকে আছি। কোথাও বের হতে না পারলেও কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।
দেশে ফেরার বিষয়টি আপাতত অনিশ্চিত, এমনটা বলে সাঞ্জু বলেন: কবে ফিরতে পারবো এটা বলতে পারছিনা তবে চেষ্টায় আছি। ১৫ জনের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশে ফিরে গেছে কিছুদিন আগে। তাদের বেনাপোলে ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছিল। আমরা যারা পাসপোর্ট পাইনি তারা আটকে আছি। তবে এখানে অবস্থানের সবকিছু আমাদের প্রোডাকশন বহন করছে। ভালো আছি নিরাপদে আছি।
চন্দন রায় চৌধুরী এ ইউনিটের অংশ হলেও তিনি কলকাতায় আছেন মাস দুয়েক। পরে যুক্ত হয়েছেন তাদের সঙ্গে। পাসপোর্টও হাতে পেয়েছেন, কিন্তু থেকে গেছেন কলকাতায় শিল্পী রাজ বর্মনের বাড়িতে।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, পাসপোর্ট পেলেও ভিসা পাইনি। তবে মেইল পেয়েছি, অবস্থা স্বাভাবিক হলে তারপর আমাদের ভিসা দিবে।
২২ দিন হোটেলে থাকার পর এখন শিল্পী রাজ বর্মনের বাড়িতে উঠেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, চাইলে আগেই দেশে ফিরতে পারতাম। কিন্তু বেনাপোলে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। বর্ডার পার হলে এখান থেকে যারা গেছেন তাদের কোয়ারেন্টাইনের অবস্থা দেখে আর সাহস পাইনি। তাই রয়েছি এখানেই।
তিনি বলেন, দেশে ফেরায় চেষ্টায় থাকলেও খুবই টেনশনে আছি কারণ একের পর এক লক ডাউন বাড়ছে। লক ডাউনের মধ্যে সুন্দরভাবে আসা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়েই থাকতে হচ্ছে।