
উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীকে মারাত্মক আহত করা চালকের সঙ্গে পরিবারের ‘আপোস’ হয়েছে, এমন খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে আহতের পরিবার। চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের সমঝোতার খবর এবং অভিযোগ না করায় চালককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ যে কথা বলেছে তাতেও আহত জুবিন ফয়সালের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তাকে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং পরিবারের জন্য অসম্মানজনক বলে মন্তব্য করেছেন জুবিনের বাবা-মা।
রাজধানীর স্কয়ার হসপিটালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) আছেন গুরুতর আহত জুবিন। তখন তার আরও এক ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন।
ডাক পেয়ে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ছেলেকে দেখতে এইচডিইউ’র ভেতরে ঢোকেন তার মা সাঈদা আক্তার জাহিদ।

তখন দরোজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা জাহিদ আনোয়ার। সেখানেই চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

জুবিনের বাবা জানান: চার ব্যাগ রক্ত লেগেছে। এখন আরও লাগবে। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে বিচারপতির গাড়িচালক কিংবা বিচারপতির সঙ্গে সামনাসামনি কোন আলাপ হয়নি।
যে গাড়ি রং সাইড দিয়ে আসার কারণে দুর্ঘটনা সেই গাড়ির মালিক দ্বারা চিকিৎসা খরচ বহন কিংবা ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত সমঝোতার যে খবর কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা নাকচ করে জাহিদ আনোয়ার বলেন, ‘আমি নিজেই ব্যবসায়ী, ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কয়ারে নিয়ে এসেছি। আমারতো কারও টাকা নিয়ে ছেলের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে না।’
চালক কিংবা গাড়ির মালিকের সঙ্গে আপোসের কথিত খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যার গাড়ি তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। তখন জুবিনের অপারেশন চলছে। আমি শুধু তাকে দোয়া করতে বলেছিলাম।’
তার সঙ্গে কথা বলার সময়েই এইচডিইউ থেকে বের হন আহত জুবিনের মা সাঈদা আক্তার জাহিদ।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: অস্ত্রপোচার মোটামুটি সফল হয়েছে। ওর একটি পা চারভাগ হয়ে গেছে। একটি আঙুল পুরো কেটে ফেলতে হয়েছে। হাটু গুঁড়া হয়ে গেছে। হেলমেট থাকায় শুধু মাথায় গুরুতর কোন আঘাত লাগেনি।
পরিবারের এমন ক্ষতির জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন জুবিনের বাবা-মা। তবে আগে ছেলের সংকট কাটিয়ে ওঠাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
জুবিনের মা বলেন, ‘গাড়িতে বিচারপতি নিজে ছিলেন না। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই আমাদের। কিন্তু চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি এইরকম উল্টোপথে চলাকে যারা নিয়ম বানিয়েছেন তাদের শাস্তি হওয়া জরুরি।’
পরিবার অভিযোগ না করায় পুলিশ চালককে ছেড়ে দিয়েছে বলে যে খবর প্রসঙ্গে আহতের মা-বাবা বলেন: আমরা আপাতত ছেলেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন।

আর পুলিশের সামনেই ওই ঘটনা ঘটেছে, তাহলে পুলিশ কেন অভিযোগ দায়ের করল না? বিচারপতি নিজেও আইনের মানুষ, এমন একটি ঘটনায় তিনি নিজেই তো চালককে আইনের হাতে তুলে দিতে পারতেন।
পুলিশ বলছে, অভিযোগ না থাকায় চালককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে কোন সাংবাদিককে ‘আপোস হয়েছে’ বলে তারা কিছু জানাননি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘অভিযোগ না থাকায় বিচারপতির গাড়িচালককে জিম্মার ভিত্তিতে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে আহত ব্যক্তির পরিবার থেকে অভিযোগ করা হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।’
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা ও সাবেক শেরাটন) মোড়ে উল্টোপথ দিয়ে আসা এক বিচারপতির গাড়ির নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন মোটরসাইকেল আরোহী জুবিন ফয়সল। তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন।
বিচারপতির গাড়িটি উল্টোপথে চালানোতে দুর্ঘটনা ঘটে। সেসময় গাড়িতে বিচারপতি ছিলেন না। দুর্ঘটনায় আহত জুবিন ফয়সালকে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় স্কয়ার হসপিটালে।
পুলিশ জানায়, গাড়িটি মিন্টো রোডের দিক থেকে উল্টোপথে আসছিল বাংলা মোটরের দিকে যাওয়ার জন্য। একই সময় মিন্টো রোডের দিকে যাবার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাঁক নিয়েছিলেন ফয়সল।