জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নানা রকম উৎসাহমূলক উদ্যোগের কারণে দেশে করদাতার সংখ্যা প্রতি বছর বাড়লেও সেই সংখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট নন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি মনে করেন, অন্তত চার কোটি মানুষের আয়কর দেওয়া উচিত।

মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে আয়কর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেছেন, বর্তমানে আয়কর দিচ্ছেন ৩০ লাখের মত করদাতা। কিন্তু দেশের চার কোটি মানুষের আয়কর দেয়া উচিত। আগে খুব অল্প পরিমাণ মানুষ কর দিত। এখন দিন দিন তা বাড়ছে। এ কারণেই গত ১০ বছরে এনবিআরের বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হয়েছে।
আমরা জানি, চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) আয়কর ও মুনাফার উপর ১ লাখ ৭১৯ কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর। এই অর্থ আসবে মূলত বেতন, ব্যবসার আয়, বাড়িভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ, সম্পত্তি বিক্রি-হস্তান্তর থেকে পাওয়া অর্থ, সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ থেকে আয় এবং কৃষি আয় থেকে।
সাধারণত কোনো পুরুষের বাৎসরিক আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি হলে, সেই বেশি অংশের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধাপে শতাংশ হিসেবে কর দিতে হয়। আবার নারীদের বাৎসরিক আয় তিন লাখ টাকার বেশি হলে তিনিও করের আওতায় পড়েন।
তবে আয়ের উপর এই হিসেবে যে কর দেওয়া হয় সেটা মূলত সরাসরি কর। কিন্তু এর বাইরে বলতে গেলে পরোক্ষভাবে দেশের সব মানুষ কর দেন। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ব্যবহার্য প্রায় সব পণ্যের ওপরেই মানুষ কর দিচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রী সম্ভবত প্রত্যক্ষ করদাতা হিসেবে ৪ কোটি মানুষের কর দেওয়ার কথা বলেছেন। এর পেছনে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। এটা সত্যি, একশ্রেণির মানুষ আছেন, যারা নানাভাবে আয়কর ফাঁকি দেন। মন্ত্রী হয়তো এই শ্রেণিকে লক্ষ্য করেই কথাটা বলেছেন।
দেশের অর্থনীতির যে অগ্রযাত্রা, তা অব্যাহত থাকলে অর্থমন্ত্রীর এই প্রত্যাশাও হয়তো একদিন পূরণ হবে। এরই মধ্যে এনবিআর আগামী দুই বছরের মধ্যে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ইটিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ৫০ লাখে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করেছে।
আমরা মনে করি, অর্থমন্ত্রীর কথা যদি ঠিক হয়, তাহলে বড় একটা অংশই অায়কর ফাঁকি দিচ্ছে। এই অবস্থায় এনবিআরকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে সেই ব্যক্তিদেরকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা। কারণ, একজন ব্যক্তি শুধু আয়করই দেন না, এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বও পালন করেন।