‘আমার সাধ না মিটিলো’ গানটি বঙ্গবন্ধু বার বার শুনতেন: দেবজ্যোতি মিশ্র
‘বঙ্গবন্ধুর পরিবারের দুঃখ-বিষাদ অনুধাবন করতে বাংলাদেশে এসেছি’
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনী নিয়ে ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’ চলচ্চিত্রের ট্রেলার। মুক্তির পরপরই ভাইরাল হয়ে গেছে মাত্র পৌনে তিন মিনিটের ট্রেলারটি। নির্মাণের পাশাপাশি প্রশংসিত হয়েছে এর আবহ সংগীতও।
‘হাসিনা’ চলচ্চিত্রটির আবহ সংগীতের কাজ করেছেন কলকাতার প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান দেবজ্যোতি মিশ্র। সম্প্রতি তিনি ভারতীয় গণমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’-এ নিজের যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা ও আবহ সংগীত নিয়ে কথা বলেছেন।
‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’-এ যুক্ত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেবজ্যোতি মিশ্র জানান, আট মাস আগে পরিচালক রেজাউর রহমান খান পিপলু তার কাছে এসেছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা পুরনো। আগেও একসঙ্গে অ্যাড ফিল্ম-এর কাজ করেছি আমরা। তার যে ব্যাপারটা আমাকে মুগ্ধ করে তা হলো কল্পনা ক্ষমতা এবং সব ধরনের গানের প্রতি আগ্রহ।
‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’-এ কাজ করতে গিয়ে চল্লিশ পৃষ্ঠার একটি চুক্তিপত্রে সই করার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে দেবজ্যোতি বলেন, চলচ্চিত্রটি যেহেতু বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে, তাই আমাকে চল্লিশ পৃষ্ঠার একটি কন্ট্রাক্ট পেপারে সই করতে হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, এই প্রজেক্টে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হবে এবং একটি মিউজিক টিম তৈরি করতে হবে। পিপলু আমাকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিয়েছিলেন। তবে বলে দিয়েছিলেন, শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ ট্র্যাজেডির মতো যেন হৃদয়ে ক্ষরণ হয় মিউজিক শুনে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘হাসিনা’র ট্রেলারের শেষের দিকে শোনা যায় ‘আমার সাধ না মিটিলো’ শিরোনামের গানটি। যে আবহে গানটি ট্রেলারে পরিবেশন করা হয়েছে তার প্রশংসা করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলে। বলছেন, এই গানটি অন্যমাত্র দিয়েছে পুরো ট্রেলারটিকে!
‘হাসিনা’ চলচ্চিত্রে ‘আমার সাধ না মিটিলো’ গানটি দেবজ্যোতি নিজেই গেয়েছেন। এমন গান রাখার কারণ জানিয়ে এই সংগীত পরিচালক জানান, ‘আমার সাধ না মিটিলো’ গানটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বার বার শুনতেন। হাই পিচে গানটি রেকর্ড করে পিপলুকে পাঠিয়েছি। সেসময়ে পিপলু বেলজিয়ামে ছিলেন একটি শুটিং এর কাজে। নেটওয়ার্কও খারাপ ছিল সেখানে। গানটি শুনে পিপলু জানিয়েছিলেন, ঠিক এমন কণ্ঠই খুঁজছিলেন এবং আমার কণ্ঠই চাইছিলেন।
চলচ্চিত্রটির আবহ সংগীতে দেবজ্যোতি ব্যবহার করেছেন শারঙ্গী, গিটার এবং ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রা। তিনি জানিয়েছেন, মিউজিকের কাজ প্রায় শেষ। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনটি গান তৈরি করা হয়েছে। পিপলুর কণ্ঠেও আছে একটি গান। আরেকটি গান কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের ছাত্রদের সাথে রেকর্ড করা হবে বলেও জানান দেবজ্যোতি।
এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর দেবজ্যোতি নিজেও বাংলাদেশে এসেছেন। তার ভাষায়, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের দুঃখ-বিষাদ অনুধাবন করতে বাংলাদেশে এসেছি। জানান, বাংলাদেশ তার ভালো লাগে। পৈত্রিক সূত্রের কারণে বাংলাদেশের প্রতি টান আছে তার।
চলচ্চিত্রটি কবে মুক্তি পাচ্ছে, সেই ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি এখনও। তবে নির্মাতা জানিয়েছেন কাজ শেষের পথে। পোস্ট প্রোডাকশন শেষ হলেই মুক্তির তারিখটি নির্দিষ্ট করে ঘোষণা দেয়া হবে। অন্য সবার মতো তাই তথ্য চিত্রটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দেবজ্যোতি মিশ্র নিজেও।
‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’ চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। দীর্ঘ পাঁচ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফল ৭০ মিনিট ব্যাপ্তির এই চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্রে পরিচালক পিপলু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের দুঃখ-বিষাদ, ব্যক্তিগত আখ্যান, আর নৈকট্যের গল্পগুলোকে তুলে ধরেছেন তার নিজস্বতায়। একটি স্বাধীন ও তাৎপর্যময় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন একজন অনন্য নায়কের জীবনের আরেক অধ্যায়, যা তার একান্ত ব্যক্তিগত হয়েও একটা জনপদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
‘হাসিনা’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে নির্মাতার ভাষ্য, কখনো তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, কখনো জননী, কখনো বোন, কখনো গণমানুষের ত্রাতা রূপে আবির্ভূত হন যে জননেত্রী তার একটি প্রতিকৃতি এই চলচ্চিত্র।
পরিচালনায় পিপলু খান ও আবহ সংগীতে দেবজ্যোতি মিশ্র ছাড়াও চলচ্চিত্রটির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে ছিলেন সাদিক আহমেদ। সম্পাদনায় ছিলেন নবনীতা সেন।