আইবি (ইন্টারন্যাশনাল বেকালরিয়েট) কারিকুলাম শিশুর ঘাড়ে বইয়ের বোঝা বন্ধ করেছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাইকেল বাড়ৈ। তিনি বলছেন, এই কারিকুলামে (পাঠ্যক্রম) শিশু শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আনন্দ নিয়ে লেখাপড়া করে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটির লেখাপড়ার মান, শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি, শিক্ষার্থীদের রেজাল্টসহ নানা বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইন কথা বলে স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাইকেল বাড়ৈ এর সঙ্গে।
অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের কারিকুলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল একমাত্র স্কুল যা অস্ট্রেলিয়ান সরকার দ্বারা স্বীকৃত। এখানে অস্ট্রেলিয়ান কারিকুলাম অন্যান্য কারিকুলাম থেকে ভিন্ন।
মূলত ২০০২ সালে আমাদের স্কুল স্থাপিত হওয়ার পর স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদ অস্ট্রেলিয়ান কারিকুলাম পড়ানোর মতো কোনো স্কুল নেই বাংলাদেশে, তাই তারা অস্ট্রেলিয়ান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই কারিকুলামটা নিয়ে আসে।
স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, অস্ট্রেলিয়ান কারিকুলামে ন্যাপল্যান (NAPLAN) ও ওয়েস (WACE) পরীক্ষা রয়েছে। ন্যাপল্যান পরীক্ষাটি তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম এবং নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। বিশ্বের সকল অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়, অস্ট্রেলিয়ান সরকার এই পরীক্ষাটি নিয়ে থাকে।
‘দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের চাইতে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের সফলতার অঙ্কটা অনেক বেশি।’
বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের মান অন্যান্য দেশের স্কুলের চেয়ে অনেক ভালো জানিয়ে মাইকেল বাড়ৈ বলেন: প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়ান সরকার আমাদের স্কুল পরিদর্শনের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যক্ষকে পাঠায়। তারা দেশে ফিরে গিয়ে যে অভিনন্দন পত্র পাঠায়, তাতে দেখা গেছে আমাদের স্কুলের মান অন্যান্য বিশ্বের অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের চেয়ে অনেক উন্নত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের যেকোন জায়গায় পড়াশুনা করতে পারে কারণ আমাদের কারিকুলাম ইন্টারন্যাশনাল একটি কারিকুলাম। আমাদের স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ চিন্তা করল এই কারিকুলামের পাশাপাশি আরেকটি কারিকুলাম রাখা যায় কিনা, যা আইবি-ইন্টারন্যাশনাল বেকালরিয়েট (আন্তর্জাতিক স্নাতকোপাধি) খুবই দামী এবং বিখ্যাত কারিকুলাম। সে লক্ষ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে আইবি কারিকুলাম পেতে আবেদন করি এবং ২০১৫ সালের মার্চে আইবি কারিকুলাম আমরা লাভ করি।
এই আইবি কারিকুলামটা আমাদের প্রচলিত কারিকুলাম থেকে আলাদা, এখানে শিশু শিক্ষার্থীদের কাঁধে বইয়ের যে বোঝা সেটা বহন করতে হয় না, শিক্ষার্থীরা এখানে আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়া করে। আইবি কারিকুলামে লেখাপড়াটা পুরোটাই ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন: শিক্ষার্থীরা লেখাপড়াটা নিজেরাই করে, শিক্ষকরা তাদের লেখাপড়াটা শুধু দেখিয়ে যা শিক্ষার্থীদের জন্য আরো বেশি সহজ হয়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, আইবি কারিকুলামের নিয়ম হলো প্রত্যেক শিক্ষককে এই কারিকুলামে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে, সে হিসেবে আমাদের প্রত্যেক শিক্ষকরা গড়ে দুই থেকে তিনটি প্রশিক্ষণ পেয়েছে।এবং আইবি নিয়মটা এতোটাই কঠোর যে প্রশিক্ষণ না থাকলে ওই শিক্ষক শ্রেণীকক্ষেই যেতে পারে না। আমাদের প্রত্যেক শিক্ষক আইবি’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং আমি নিজেও আইবি’র প্রশিক্ষণ পেয়েছি।
স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অবদান তুলে ধরে বাড়ৈ বলেন: আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকারা গতানুগতিক পদ্ধতি শিক্ষাদান করে না, তারা জানে একটা শিক্ষার্থীকে কি করে আনন্দ দিয়ে শিক্ষাদান করা যায়। শিক্ষার্থী যেন শ্রেণীকক্ষে এক’শ ভাগ লেখাপড়া শেষ করতে পারে সে লক্ষ্যেই আমাদের শিক্ষকরা নিয়োজিত থাকে।
‘‘অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের বৈশিষ্ট্য হল আমরা কোন বই ঘরে দেই না, সব পড়াশুনা স্কুলে হবে, ঘরে যাবে শিক্ষার্থীরা আনন্দ করতে, আবার স্কুলে এসে পড়বে’’-বলেন তিনি।
মাইকেল বাড়ৈ জানান, আমাদের স্কুলের জন্য গর্বের বিষয় যে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের স্কুল আইবি অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়াও আমরা পিওয়াইপি (প্রাইমারি ইয়ার প্রোগ্রাম) ও এমওয়াইপি (মিডেল ইয়ার প্রোগ্রাম) এর অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন যা আগামী বছরের শুরুতেই পাবো।
অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে এ যাবৎ কয়টি ব্যাচ বের হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন: পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ওয়েস (ওয়েস্টার্ন অস্টেলিয়ান সার্টিফিকেট অব এডুকেশন) শেষ করে বের হয়ে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়াশুনা করছে।
মাইকেল বাড়ৈ বলেন, আমাদের একজন শিক্ষার্থী যে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সে তার স্নাতক ডিগ্রী শেষে করে স্নাতকোত্তর না করে ডক্টরেট করার সুযোগ পেয়েছে শুধুমাত্র অসাধারণ রেজাল্টের জন্য। ডক্টরেটের কার্যক্রম শুরুর তিন মাসের ভেতর সে একটি প্রজেক্ট জমা দেয়, প্রজেক্টটি এতোটাই উঁচুমান সম্মত হয়েছে যে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দিয়েছে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া সরকার তাকে স্থায়ী নিবাসের সুযোগ করে দিয়েছে।
ছবি: জাকির সবুজ