অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বনের পর বন। বন ছেড়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গের প্রভাব এসে পড়েছে শহরে।
আত্মঘাতি এই দাবানল মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ার উদ্ধারকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। ভয়াবহ দাবানলের লেলিহান শিখা লাঘবের চেষ্টায় ও উদ্ধার কাজে স্বেচ্ছাসেবী দমকলকর্মীদের আত্মত্যাগ অসামান্য। কোনো অর্থকড়ি ছাড়াই নিজেদের জীবনকে তারা মৃত্যুর মুখে নিয়ে যাচ্ছেন।
খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব উদযাপনের সুযোগ তাদের হলো না। তার আগেই দাবানলে জীবন দিলেন দু’জন দমকল বাহিনীর কর্মকর্তা। যারা শত শত মানুষকে উদ্ধার করেছেন দাবানল থেকে। ফিরিয়ে এনেছেন পরিবারের কাছে। কিন্তু নিজের পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে সেই তারাই কিনা পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন! তারা হলেন হর্সলে পার্ক ফায়ার ব্রিগেডের ডেপুটি ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রু ও’ডায়ার ও জিওফ্রে কিটন ।
বিবিসি বলছে, সম্প্রতি হর্সলে পার্কে অ্যান্ড্রু ও’ডায়ার ও জিওফ্রে কিটনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেছে শত শত মানুষ। সেখানেই ছোট্ট একটা চিরকুটে লেখা, “স্বর্গে আরও দু’জন ফেরেস্তা, আপনাদের আত্মত্যাগের জন্য ধন্যবাদ”!
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
বিবিসি’তে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে আগুনের লেলিহান শিখার ভেতর দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে আসছেন একজন তরুণ উদ্ধারকর্মী। সেই ছবির ব্যক্তি হলেন ডেনিয়েল কেনক্স। বয়স ২২ বছর। এই তরুণের ছবিটি যখন তোলা হচ্ছিলো, তিনি কেবল টানা ১৫ ঘণ্টা শিফট শেষ করে লেলিহান শিখার ভেতর থেকে বের হয়ে আসছিলেন।
বিবিসিকে কেনক্স বলছিলেন, সদ্য মৃত্যুবরণ করা অ্যান্ড্রু ছিলেন আমার ভাইয়ের মতো। আমি ভুল করলেও রাগারাগি করতেন না। বরং শুধরে দিতেন। তার ছায়ায় আমি বড় হয়েছি। ফুটবল আর ফটোগ্রাফিতেও তিনি আমাকে উৎসাহ দিতেন। তার উৎসাহেই আমি এমন ঝুঁকি নেওয়ার সাহস পেয়েছি।
“আমরা এটি করছি, কারণ এটি একটি আবেগ। এটি একটি ভ্রাতৃত্ব। এই ত্যাগ মানুষের জন্য। যখন ছবিটি তোলা হয়েছিলো, আমি সেখানে ১৫ ঘণ্টা শিফট করেছি”।
তিনি আরো বলেন, মানুষ সবসময় আমাদের কাজ বুঝতে চায় না। আমরা যে কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়াই কাজ করি এবং জীবনের ঝুঁকি নিই, তা অনেকের অবিশ্বাস্য লাগে।
নিউ সাউথ ওয়েলস রুরাল ফায়ার সার্ভিস (এনএসডব্লিউ আরএফএস)কে বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবক দমকল সংগঠন বলে ধারণা করা হয়। এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা ছাড়া প্রশিক্ষিত এই দমকলবাহিনীর কর্মীরা বহুদিন ধরে অবৈতিনকভাবে দাবানলে কাজ করে যাচ্ছেন। সেপ্টেম্বরের পর থেকে এনএসডব্লিউ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার দমকল কর্মী দাবানল নিয়ন্ত্রণে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। যাদের ৯০ শতাংশই এ কাজের বিনিময়ে বেতন নেন না।