চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের প্রথম লেগে আজ বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ভিসেন্তে ক্যালদেরনের এ লড়াইয়ে বেভারিয়ানদের বিপক্ষে ৪২ বছর আগের প্রতিশোধের নেশায় সিমিওনের দল।
১৯৭৪ ইউরোপীয় কাপের (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বায়ার্ন-অ্যাটলেটিকো। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, গার্ড মুলার, উলি হোয়েনেস, পল ব্রেইটনারদের বায়ার্নকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত গোলবঞ্চিত রেখেছিল ‘রোজিব্লাংকোস’রা।
দুই দলই গোলশূন্য থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১১৪ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে লুই আরাগোনাসের গোলে শিরোপার সুবাস পেতে থাকে অ্যাটলেটিকো। কিন্তু শেষ মিনিটে হ্যান্স-জর্জ-শোয়ার্জেনবেকের গোলে কপাল পোড়ে স্প্যানিশ ক্লাবটির। সেই রাতের প্রতিশোধের কথা মাথায় রেখেই আজ মাঠে নামবে ‘ছাট’ মাদ্রিদ।
বড় কোনো অঘটন না ঘটলে টানা চতুর্থবার যে বুন্দেসলিগা ঘরে তুলবে বায়ার্ন মিউনিখ সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। লিগ শেষ হতে আর মাত্র ৩ ম্যাচ বাকি। এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের চেয়ে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে বেভারিয়ানরা। তবে বুন্দেসলিগার থেকেও এই মুহূর্তে বায়ার্নের চোখ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দিকে।
২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর ফাইনালেই উঠতে পারেনি বায়ার্ন। তাই বুন্দেসলিগার থেকেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দিকে বেশি ফোকাস পেপ গর্দিওলার। বার্সেলোনাকে ইউরোপের সেরার মুকুট এনে দিলেও বায়ার্নের নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এখনো সেটা পারেননি। তাই বুন্দেসলিগা খেতাব নিশ্চিত করে গার্দিওলাও তাকিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দিকে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের কথা মাথায় রেখে অযথা শক্তিক্ষয়ের রাস্তায় হাঁটেননি বায়ার্ন কোচ। বুন্দেসলিগায় রোটেশন পদ্ধতি অবলম্বন করে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রেখেছেন তিনি। বেশ কয়েক দশক ধরে স্প্যানিশ ক্লাবগুলি ইউরোপে দাপট দেখিয়ে আসছে। সে কথা মাথায় রেখেই অ্যাটলেটিকোর বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করছেন গার্দিওলা।
অ্যাওয়ে ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই ঝুঁকির রাস্তায় যাবেন না বায়ার্ন কোচ। দিয়েগো সিমিওনের দলকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন বায়ার্ন অধিনায়ক। ফিলিপ লাম বলেছেন, ‘রক্ষণ থেকে আক্রমণভাগ, সব বিভাগেই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ভরা ফুটবলার রয়েছে, যেমন গোডিন থেকে শুরু করে গ্রেজম্যান। ওদের মতো অভিজ্ঞদের পাশাপাশি অনেক তরুণ ফুটবলার রয়েছে, যাদের সমীহ করতেই হবে।’
আর আটলেটিকো অধিনায়ক গাবি স্বপ্ন দেখছেন ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করতে। ক্লাবের হয়ে প্রতিটা ট্রফি জিতেছেন। বাকি শুধু ঐতিহাসিক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি। তিনি বলছেন, অবশ্যই আমরা স্বপ্ন দেখি আটলেটিকোকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন করার।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আটলেটিকো দলে ফিরছেন ফার্নান্দো তোরেস। ২০১২ চেলসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তোরেস। ফাইনালে বায়ার্নকে তাদের ঘরের মাঠেই হারিয়েছিল চেলসি। এবারো তেমন আশায় রয়েছেন স্প্যানিশ সুপারস্টার।
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ আসরটিতে এবার দিয়ে মোট পঞ্চমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলছে অ্যাটলেটিকো। এর মধ্যে গত তিন বছরে দ্বিতীয়বারের মতো শেষ চারে খেলছে তারা।
অন্যদিকে এবার দিয়ে টানা পঞ্চম মৌসুম সেমিতে খেলছে বায়ার্ন। পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপিয়ান কাপ কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে এর আগে ঘরের মাঠে চার ম্যাচ খেলে হারেনি অ্যাটলেটিকো। ৩ জয়, ১ ড্র। এছাড়া জার্মান ক্লাবের বিপক্ষে স্বাগতিক হয়ে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে হারের মুখ দেখেনি তারা।
ইউরোপীয় আসরে কোনো জার্মান ক্লাবের বিপক্ষে এটি অ্যাটলেটিকোর পাঁচ নম্বর সেমিফাইনাল। আগের চারবারের মুখোমুখিতে তিনবারই জিতেছে তারা। সব মিলিয়ে বুন্দেসলিগার কোনো ক্লাবের বিপক্ষে দুই লেগের টাইয়ে অ্যাটলেটিকোর জয়-পরাজয়ের হার ১০-৪। এর মধ্যে সর্বশেষ ছয় ম্যাচেই জিতেছে তারাই।