বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকট চরমে পৌঁছানো এবং রোহিঙ্গা ইস্যুর জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের লজ্জা পাওয়া উচিত বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব সলিল শেঠি।
জাতিসংঘের সাধারণ সভায় রোহিঙ্গা ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করার জন্য সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি তাগিদ জানিয়েছেন তিনি।
সেখানে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যদি জাতিসংঘ গঠনের উদ্দেশ্য ভুলে না গিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের উচিত হবে এই লোক দেখানো সভায় অংশগ্রহণ, সবার সঙ্গে হাত মেলানো এবং বাস্তবায়িত হয় না এমন প্রস্তাব দেয়া থেকে বিরত থাকা। তাদের উচিত হবে কিছুটা হলেও এবার নেতৃত্বগুণ দেখানো।
‘এর মানে হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো বিশ্বের যেসব নাগরিকরা চরম মানবেতর পরিস্থিতির ভেতরে রয়েছেন, যারা মানবতা বিরোধী অপরাধের শিকার হচ্ছেন, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য এবং সংকট সমাধানের জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অধিক শরণার্থী গ্রহণ করার বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের যে ঘোষণা তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়া, বিশ্বব্যাপী শরণার্থী অধিকার ক্ষুন্ন করা এবং এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলতে অবদান রাখায়, তাদের (বিশ্ব নেতৃবৃন্দ) উচিত হবে লজ্জায় মাথানত করা।’
রোহিঙ্গা সংকটের মতো ভয়াবহ মানবিক সংকট মোকাবেলা করতে হলে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের লোক দেখানো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাগড় পথে যতো শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করেছেন, মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশে এর থেকে বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে।
‘সেনাবাহিনীর ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারিয়ে, বাড়ি-ঘর হারিয়ে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। এখানে এসে তারা ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। বাংলাদেশ তাদের সাহায্য দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না ।’
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করে এই সংকটকে তাদের নেতৃত্বের ব্যর্থতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে।