স্প্যানিশ সুপার কাপের প্রথম লেগে জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ দেখিয়েছে তারা ইতোমধ্যেই একটি সুশৃঙ্খল দল, সেখানে বার্সেলোনা অনেক দূরে। যেহেতু নতুন লা লিগা মৌসুম খুবই কাছাকাছি, তাই বার্সার অবস্থা নিয়ে কাটাছেড়া শুরু হয়ে গেছে।
প্রথম লেগের পরাজয় বার্সেলোনাকে অনেক দুর্বল করেছে, সেইসঙ্গে রিয়ালকে করেছে আরও শক্তিশালী। মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা থেকে লস ব্লাঙ্কোসরা এখন অতি অল্প দূরত্বে। স্প্যানিশ সুপার কাপে নামার আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপ জিতে নিয়েছে জিদান বাহিনী।
বর্তমান অবস্থার কারণে ক্লাবের সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তেমেউ ঘড়িরকাঁটার সঙ্গে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, এরই মধ্যে তিনি পূর্বসূরি সান্দ্রো রোসেলের চেয়ে কম জনপ্রিয় হয়ে গেছেন। সেইসঙ্গে দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসিকে কিছুটা হতাশ ও ক্লান্ত মনে হচ্ছে। তাহলে বার্সার এত সমস্যার সমাধান কোথায়? এমনটা চলতে থাকলে আসন্ন মৌসুমটাও যে কাতালানদের জন্য ভাল হবে না। দেখে নেয়া যাক কেমন সব সমস্যায় ভুগছে বার্সা-
আদর্শ নিয়ে সন্দেহ
একটা সময় বার্সেলোনার মূল আদর্শ ছিল লা মাসিয়ার খেলোয়াড়দের গড়ে নেয়ার পর মূল দলে খেলানো। কিন্তু এখন লা মাসিয়ানদের সেখানে মূল একাদশে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। যার কারণে তরুণ খেলোয়াড়রা নিয়মিত খেলার জন্য বার্সা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। আর্দা তুরান ও লুকাস ডিগনিকে দলে সই করানোর পর লা মাসিয়ার তিন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় জর্ডি মাবুলা, এরিক গার্সিয়া এবং অ্যালেক্স গ্রিমাল্ডো ক্লাব ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
কোচ এবং কভার
বার্সায় যোগ দেয়ার পর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে এখনও জানেন না যে তার সেরা একাদশের খেলোয়াড় কারা। সব ফ্রন্টে সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাকে নিয়মিত একাদশ নির্বাচন করতে হবে।
নেইমার ক্লাব ছেড়ে পিএসজিতে চলে গেছেন, তার বিকল্প এখনও আনতে পারেনি বার্সা। রিয়ালের বিপক্ষে বাঁ-প্রান্তে শুরু করেছিলে নিউ রিক্রুট নেলসন সেমেদোও এবং ডানপ্রান্তে ছিলেন অ্যালেক্স ভিদাল। অথচ এই জায়গায় ছিলেন ইনিগ্রো মার্টিনেজ। কিন্তু ক্লাব তার চুক্তিটি বাতিল করে দেয়, যখন পাউলিনহোকে ৪০ মিলিয়ন পাউন্ডে তাদের চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল খেলোয়াড় হিসাবে স্বাক্ষর করায়। অথচ এই বার্সেলোনাই আগে বলেছিল যে, একজন ভাল মানের খেলোয়াড়ের জন্য ২৫ মিলিয়নের বেশি অর্থ ব্যয় করা খুব বেশি ছিল।
গেম অব থ্রোনস
কাতালান দলের সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে প্রায় এক ডজন ব্যক্তি আছেন যারা নানা বিষয়ে নিজেদে মতামত দিয়ে থাকেন। বিরোধের কারণ তাই অনেক। এর ফলে যখন দল নির্বাচনের সময় আসে তখন সেটা ভালভার্দের জন্য অপ্রয়োজনীয় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আকাশচুম্বী দাম
বার্সা যখনই খেলোয়াড় কিনতে চায়, তখনই সেই খেলোয়াড়দের দাম হুহু করে বেড়ে যায়। নেইমারকে বিক্রির পরও তেমনটাই হয়েছে। পিএসজির কাছ থেকে ২২২ মিলিয়ন ইউরো পাওয়ার পর প্রত্যেকটা ক্লাব এখন জানে বার্সার কাছে অর্থ আছে, তাই যে যার মতো করে কাতালানদের দুধ খেতে মরিয়া। এই দুধ প্রজেক্ট থেকে ফিলিপে কৌতিনহোর জন্য লিভারপুল যেমন ১০০ মিলিয়ন চায়, তেমনি উসমান ডেম্বেলের জন্য ১৫০ মিলিয়ন চাচ্ছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।
নেইমার ইস্যুতে ভুল কার্ড খেলেছে বার্সেলোনা। নেইমারের চলে যাওয়া এমনকি এ সম্পর্কে যখন ছোট একটি সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছিল, তখন বিশ্বব্যাপী তাদের পকেটে আসা ২২২ মিলিয়ন ইউরোর খবর ছড়িয়ে পড়ার আগে নেইমারের বিকল্প ঠিক করা উচিত ছিল।
ভাসমান সমর্থক
স্প্যানিশ সুপার ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার জন্য রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ক্ষতিকারক ছিল স্টেডিয়ামের আবহ। কারণ বার্সার গ্যালারির অধিকাংশই ছিল পর্যটক দর্শক এবং বাকিগুলোর অনেকাংশ দখল করেছিল রিয়াল সমর্থকরা। প্রতিটি গোলের পর বার্সেলোনার নিজস্ব স্টেডিয়ামের বিশাল অংশ তাদের সর্বাপেক্ষা তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য আনন্দ উদযাপন করেছে। যাতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে, বার্সার বিখ্যাত সেই স্লোগান ‘ক্লাবের চাইতেও বেশি কিছু’।