রাশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রামের নাম পোয়াকণ্ডা। ওই গ্রামেই থাকে ১৪ বছরের কিশোরী কারিনা কোজলোভা। প্রতিদিন সে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে-মুরমান্স্ক রেল স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকে ট্রেন ধরার জন্য।
সেই স্টেশন থেকে ওই বিশেষ ট্রেনে দু’জন মাত্র যাত্রী নিয়মিত চলাচল করেন। তাদের একজন কারিনা, আরেকজন তার দাদি। উদ্দেশ্য একটাই কারিনার নিয়মিত স্কুলে যাওয়া।
গত কয়েকবছর ধরেই কারিনার দাদী নাটালি কোজলোভা বেশ চিন্তিত তার নাতনীকে নিয়ে। কারণ তুষার আচ্ছন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল পোয়াকণ্ডা থেকে কারিনার স্কুল যেতে অনেক সময় লাগে। আর কোনো বিকল্পও নেই, সেখানে শুধু এই একটা মাত্র ট্রেনই যাতায়াত করে। যদি কোনো কারণে স্টেশনে পৌঁছাতে দেরি হয়, তাহলে সেদিন স্কুল যাওয়া আর হয় না কারিনার।
তবে রেল কর্তৃপক্ষ প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ শিক্ষার্থীর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী বলেই বিশেষ ওই ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা এবং ফেরতের সময় রাত ৯টার পরিবর্তে সন্ধ্যার দিকে ফেরতের ব্যবস্থা করেছে। পোয়াকণ্ডা গ্রাম থেকে স্টেশনে যেতেই সময় লাগে তিন ঘণ্টার মত।
রাশিয়ার আঞ্চলিক পত্রিকা গুডক-এর একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বিবিসি জানায়, কারিনা তার স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রত্যেক সকালে প্রায় ১ কিলোমিটার হেঁটে স্টেশনে আসে। ট্রেনটি কানাইঝিরা স্টেশন থেকে কিছু ছেলেমেয়ে নিয়ে পোয়াকণ্ডা স্টেশনে আসতো।
কিন্তু সেন্ট পিটার্সবার্গে-মুরম্যান্স্ক রুটের পাশে নতুন ট্রেন স্টপেজ দেওয়ার পর সে এখন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে। কারিনা এখন নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় পৌঁছাতে পারে। তার জন্য পরিবারের এখন অপেক্ষা করে থাকতে হয় না।
এর আগে ২০১৬ সালে জাপানের একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ট্রেনের গল্প হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল বিশ্বের অনেক মানুষের। কামা শিরাতাকি নামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওই রেল স্টেশনে একটি ট্রেন দিনে দু’বার বিশেষ কারণে থামতো। আর সেই বিশেষ কারণ হচ্ছে, স্কুল পড়ুয়া এক শিশুর স্কুলে যাওয়া!
শিশুটি যাতে প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারে সেজন্যই তিন বছর বন্ধ থাকলেও কর্তৃপক্ষ পরে ওই সার্ভিসটি চালু করে।প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতায়াত সমস্যা প্রকট হওয়ায় ট্রেনটি না থাকলে শিশুটির পড়াশোনা হতো না। শিক্ষার গুরুত্ব এবং একটি শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে জাপানের রেল কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করে।