আমরা বেশিরভাগ সময়ই মনে করি, একটি শিশু জন্মের পর তেমন কিছুই বোঝে না। বা তখন তারা যা দেখে, যা শোনে বা যা শেখে তার অধিকাংশই বড় হতে হতে ভুলে যায়। বিশেষ করে কথা বা ভাষা জিনিসটা আয়ত্ব করাই সে শুরু করে বেশ কিছুটা বড় হওয়ার পর।
কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে তার উল্টো তথ্য। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শিশুরা খুব ছোট অবস্থায়, এমনকি জন্মের প্রথম কয়েক মাস থেকেই তার আশপাশের ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে শুরু করে।
গবেষণাটি অনুসারে, আমরা দেশ ছেড়ে ভিন্ন ভাষার একটি দেশে গিয়ে জন্মের সময় শেখা ভাষাটি ভুলে গেলেও সেটি আসলে আমাদের মধ্য থেকে পুরোপুরি যায় না। ‘লুকোনো যোগ্যতা’ হিসেবে সেটি মস্তিষ্কে রয়ে যায়।
সাউথ কোরিয়ার সিউলে অবস্থিত হানইয়াং ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তারা ডাচ ভাষাভাষী প্রায় ৩০ বছর বয়সী এমন কিছু মানুষের ওপর পরীক্ষা চালান, যাদেরকে একেবারে ছোটবেলায় সাউথ কোরিয়া থেকে দত্তক হিসেবে নেদারল্যান্ডসে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের কেউই আর কোরিয়ান ভাষা জানেন না এখন।
কিন্তু গবেষক দলটি হতবাক হয়ে লক্ষ্য করে, এত বছর পর কোরিয়ান ভাষা সামান্য শেখানোর পর ওই মানুষগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে সঠিক উচ্চারণে কোরিয়ান ভাষা বলতে পারছেন।
দলটির প্রধান গবেষক ড. জিয়ুন চোই বলেন, শিশুরা জন্মের পর প্রথম দিকে যে ভাষা শেখে তা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বহু বছর পরও ওই ভাষার ওপর অবচেতনভাবেই তাদের একটা দখল থাকে। শিশুরা যদি বড় হয়ে মনে করে তারা ভাষাটি জানে না বা ভুলে গেছে, তারপরও।
“গবেষণায় পাওয়া তথ্য নির্দেশ করে, ভাষা শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান মানবশিশু জন্মের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই আয়ত্ব করে ফেলে,” বলেন ড. চোই, “যে জ্ঞান মাঝে ভুলে গেলেও পরবর্তীকালে আরেকবার ভাষাটির সঙ্গে পরিচিত করালেই প্রকাশ পায়।”
তাই শিশুদের ভাষার উৎকর্ষ সাধনের জন্য জন্মের পর থেকেই তাদের সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলতে বাবা-মাকে পরামর্শ দিয়েছেন ড. চোই।