ভোট আসছে। ধীরে ধীরে শীত কমছে। কিন্তু একটি ‘ভয়ঙ্কর’ কথা কিছুতে আমি ভুলতে পারছি না। কয়েকদিন আগে চ্যানেল আই অনলাইনে শীতবস্ত্র নিয়ে একটি মতামত কলাম লিখেছিলাম। সেটা লিখতে গিয়ে চ্যানেল আইয়ের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের কাছে একটি প্রশ্ন করি। সেই প্রশ্নের জবাবে ওই ‘ভয়ঙ্কর’ উত্তর পেয়েছিলাম। ‘অমন শীতে জনপ্রতিনিধিরা কেন অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণ নিয়ে এলাকায় যায়নি?’ প্রায় সব জেলার প্রতিনিধিদের কাছে এই একটি প্রশ্ন করি আমি। তাদের প্রায় সবাই বলেছেন, নমিনেশন না পেলে জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় ঢুকতে চাচ্ছেন না। তাদের একটাই কথা আগে নমিনেশন পাই। খুব স্বাভাবিক। ভোটে দাঁড়াতে হলে নমিনেশন পেতে হবে।
পরের বিষয়টুকু কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের মানসিকতার ভয়ঙ্করতম চিত্রের বহিঃপ্রকাশ। আমরা ভোটাররা কাকে ভোট দিচ্ছি? তাকে, যিনি আমার অসহায় সময়ে নমিনেশনের দোহাই দিয়েছেন। আমার গরীব মানুষ যখন কষ্ট পাচ্ছে, তিনি তখন ‘অযথা টাকা খরচে’র বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন। আপনি যাই বলুন না কেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই কিন্তু এমন। সৈয়দ আশরাফের মতো যারা অন্যরকম আছেন, তারা ঢাকার শেষ সম্বল বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করান। বাকিরা করান লুটের টাকায়। সেদিন শুনলাম কোনো এক ছাত্রনেতা পদ পাওয়ার পর কোটি কোটি টাকা খরচ বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। কেউ একজন আবার ব্যাংকের সহমালিকও! সম্ভব। এও সম্ভব। নামটা যে বাংলাদেশি রাজনীতি! এতো গেল রাজনীতিবিদদের কথা।
কিন্তু যদি বলি, দলের প্রধানরা কী করছেন? আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পাার্টি, অথবা বাম দলগুলো? তারা তাদের নেতা কর্মীদের কেন নির্দেশ দেননি যে, যার যা আছে তাই নিয়ে এলাকায় ছুটে যেতে। মিডিয়ার কল্যাণে ছাত্র রাজনীতিবিদদের দেখি রাজপথে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্র হাতে ছুটে যেতে। কিন্তু অসহায় মানুষগুলোর জন্য এসব টগবগে যুবকদের শীতবস্ত্র নিয়ে ছুটে যেতে দেখেছেন কেউ? দলের প্রধানরা কি এটা বলতে পারে না যে মানুষের দুঃসময়ে যারা এলাকায় কাজ করবেন না। তাদের নমিনেশন দেয়া হবে না। তাহলে? তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের সাবেক এবং বর্তমান জনপ্রতিনিদের টনক নড়তো। সব দায়িত্ব তো আর প্রধানমন্ত্রীর না। এখানে শীতবস্ত্র একটি ‘রূপক’ মাত্র।
এই ঘটনা দেশের রাজনীতিবিদদের নিয়ে আমার মনোজগতে বড় প্রভাব ফেলেছে। বাঙালির ইতিহাস বলে, আমরা ঝড়ে এক সাথে। রোদে এক সাথে। প্লাবনে এক সাথে। কিন্তু আমাদের ভয়ঙ্কর রাজনীতিবিদরা সেই ইতিহাস আমাকে অস্বীকার করতে বাধ্য করছে। আমার অবচেতন মন সেই সব রূপকথা ভুলে যেতে বলছে। কিন্তু আমি তা চাই না। কিছুতে ভুলতে চাই না। আমি স্মরণ করতে চাই শাহ আব্দুল করিমের সেইসব দিন, ‘কে হবে মেম্বার, কে বা গ্রাম সরকার, আমরা কি তার খবরও লইতাম, হায়রে আমরা কি তার খবরও লইতাম।’
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)