১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়। ভয়াবহ সেই দিনটির কথা উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষীদের জবানবন্দিতে। জবানবন্দি থেকে পাওয়া যায় সেদিনের ভয়াবহতার চিত্র। জানা যায় ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন ৩২ নম্বরের বাড়িটির ভেতরে-বাইরে। সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে চ্যানেল আই অনলাইনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের একাদশ পর্ব।
প্রসিকিউশনের ৩৮নং সাক্ষী প্রণব চন্দ্র রায় জানান, সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি বাংলাদেশ বেতারের প্রধান কার্যালয়, শেরেবাংলা নগরের অফিসে উপ-আঞ্চলিক প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার সময় শাহবাগের প্রচার ভবনে বেতার প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাত ১০টা থেকে ১৫ই আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত শিফটিং ইন-চার্জ হিসেবে ডিউটিতে ছিলেন তিনি। তার সাথে মোহাম্মদ আলী নামে একজন টেকনিক্যাল অপারেটর, আনোয়ার হোসেন নামে একজন মেকানিকসহ আরো একজন ছিল।
১৪ই আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার সময় External service-এর অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর তার ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। রাত প্রায় ৪.৩০টায় রেডিও অফিসের বাইরে গোলাগুলির শব্দে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠেন। ভোর পৌনে ৬টায় সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সদস্য অস্ত্র-শস্ত্রসহ রেডিও অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে এবং রেডিও অফিসের ভেতরে অবস্থিত পুলিশ ব্যারাকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং পুলিশ ব্যারাকের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরকে অস্ত্র উঁচিয়ে ধরে আত্মসমর্পণ করায়। এসব তিনি তার ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পান। ২-৩ মিনিট পর সেনাবাহিনীর কয়েকজন অফিসার ও জোয়ান অস্ত্র-শস্ত্র উঁচিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে মেজর ডালিম বলে পরিচয় দিয়ে উচ্চস্বরে জিজ্ঞাসা করে শিফট ইনচার্জ খোঁজে। তিনি নিজেকে শিফট ইনচার্জ বলে পরিচয় দিলে, মেজর ডালিম অত্যন্ত কর্কশ ভাষায় অস্ত্র উঁচিয়ে বলে ‘External service. Mujib and all his gang has been killed and army has taken power. আমরা এখন বেতারে ঘোষণা দিব। সব কিছু অন করে দেন।’ তারা সব যন্ত্রপাতি ‘অন’ করে দেয়। তখন মেজর ডালিম বলেন ‘এখন আমি রেডিওতে একটি ঘোষণা দিব। যদি এই ঘোষণা রেডিওতে শোনা না যায়, তবে তোমাদেরকে শেষ করে দিব।’ তখন তিনি তাকে বুঝিয়ে বলেন, রেডিওর কল্যাণপুরের ট্রান্সমিটার ‘অন’ না করলে ঘোষণা শোনা যাবে না। মেজর ডালিম বলে, ‘তাহলে কি করতে হবে? জবাবে বলেন, কল্যাণপুরের শিফটিং ইনচার্জকে দিয়ে ট্রান্সমিটার ‘অন’ করালে ঘোষণা শোনা যাবে।
তখন মেজর ডালিম তাকে কল্যাণপুরে টেলিফোন করার নির্দেশ দেয়। ভয়ে বেতারের মেগনেটো টেলিফোন লাইনে কল্যাণপুর কেন্দ্রের শিফটিং চার্জ আব্দুল লতিফের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাকে বলেন ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার সামনে আছে। আপনি ট্রান্সমিটার ‘অন’ করে দেন।’ তিনি এই কথা বিশ্বাস করতে পারেননি এবং পাগল হয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করেন। তাদের কথোপথন বুঝতে পেরে মেজর ডালিম তার হাত থেকে টেলিফোন রিসিভারটি কেড়ে নিয়ে কল্যাণপুর কেন্দ্রের শিফটিং চার্জ আব্দুল লতিফকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। কিছুক্ষণ পর লতিফ ট্রান্সমিটার ‘অন’ করে দেন। তখন মেজর ডালিম যতদূর মনে পরে এই ঘোষণা দেন ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, স্বৈরাচার শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। কারফিউ জারি করা হয়েছে।’
কিছুক্ষণ পর পর এই ঘোষণা বেতারে প্রচার করতে থাকেন। পরে মেজর ডালিম বলেন ‘কমার্শিয়াল বৈদ্যুতিক লাইন চলে গেলে, আপনাদের নিজস্ব জেনারেটরে অনুষ্ঠান চালানো যাবে কিনা?’ তিনি বলেন ‘আমাদের জেনারেটর আছে কিন্তু ব্যাটারি খারাপ তাই চালানো যাবে না।’ তখন মেজর ডালিম তাকে স্টুডিওর বাইরে আঙ্গিনায় নিয়ে যান। আঙ্গিনায় সম্ভবতঃ একজন সুবেদারকে বলেন রক্ষী বাহিনীর ট্রাক থেকে উনাকে একটি ব্যাটারি খুলে দেন। ওই সুবেদার রেডিও অফিসের গেটের বাইরে দাঁড়ানো ২টি রক্ষী বাহিনীর ট্রাকের একটি ট্রাক থেকে একটি ব্যাটারি খুলে দেয়। পরে তাদের একজন মেকানিক দিয়ে ওই ব্যাটারিটি জেনারেটরে স্থাপন করেন। ব্যাটারিটি স্থাপনকালে জেনারেটরের রুম থেকে দেখতে পার রক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর লোকেরা নিরস্ত্র করিয়ে পুলিশ ব্যারাকের সামনে মাঠে বসিয়ে রেখেছে। ১৫ই আগস্ট ভোর প্রায় ৭টায় খন্দকার মোস্তাক বেতার ভবনে আসেন। কিছুক্ষণ পর তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে খন্দকার মোস্তাকের পাশে বসে খন্দকার মোস্তাকের ভাষণ লিখে দিতে দেখেন।
সকাল ৮টার দিকে ওই ভাষণ খন্দকার মোস্তাকের কণ্ঠে রেকর্ড করিয়ে বেতারে প্রচার করা হয়। ঘণ্টাখানেক পর তিন বাহিনী প্রধান বিডিআর প্রধান পুলিশের আইজিপি রক্ষী বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ এদেরকে ২নং স্টুডিওতে খন্দকার মোস্তাকের সাথে কথাবার্তা বলতে দেখেন। তাহের উদ্দিন ঠাকুর তাদের আনুগত্যের ভাষণ লিখে দিলে মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ, রিয়ার এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান, পুলিশ প্রধান নুরুল ইসলাম এবং রক্ষী বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান-এর স্ব স্ব কণ্ঠে ভাষণগুলি পর্যায়ক্রমে রেকর্ড করিয়ে বেতারে প্রচার করা হয়। সকাল প্রায় ১০টায় মেজর শাহরিয়ার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তারা বাসায় চলে যান। ১৪ই আগস্ট রাত ১০টায় রিয়াজুল হক থেকে তিনি শিফটের চার্জ বুঝিয়ে নেন। যাওয়ার সময় রিয়াজুল হককে শিফটের চার্জ দিয়ে যান।
৩৯নং সাক্ষী রিসালদার মনসুর
প্রসিকিউশনের ৩৯নং সাক্ষী রিসালদার মনসুর আদালতকে জানান, সাক্ষ্য দেওয়ার সময় সেনাবাহিনীতে রিসালদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। ঘটনার সময় ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারের সি স্কোয়াড্রনে ছিলেন। মেজর আবু বকর তাদের স্কোয়াড্রন কমান্ডার ছিলেন। ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে নাইট ট্রেনিংয়ে মেজর শরিফুল হোসেন, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন, লেঃ কিসমত, লেঃ নাজমুল হোসেন, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ও অন্যান্যদের উপস্থিতিতে মেজর ফারুক বলেন ‘বিশেষ কাজে দেশের জরুরি পরিস্থিতিতে ট্যাংক বাইরে যাবে। তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’ এই আদেশ পেয়ে ট্যাংক নিয়ে বালুঘাট হয়ে এমিউনিশন স্টোরে যান। কিন্তু এমিউনিশন পাওয়া যায় না। সেখান থেকে বঙ্গভবনের উত্তর দেয়ালের বাইরে এসে ট্যাংক নিয়ে ডিউটি করেন। তখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে এবং আত্মীয়-স্বজনকে হত্যার করার কথা জানতে পারেন।
বঙ্গভবনে আরো ট্যাংক ছিল। তখন মেজর ফারুক, লেঃ কিসমত, লেঃ নাজমুল হোসেন, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন জীপ নিয়ে বঙ্গভবনে যাতায়াত করত। রিসালদার মোসলেম উদ্দিন তাদেরকে সতর্ক করে বলেন ডিউটিতে শিথিলতা পাওয়া গেলে পা কেটে ট্যাংকে বসিয়ে রাখা হবে। নভেম্বরের ৪/৫ তারিখে কর্ণেল সাফায়েত জামিলের হুকুমে তারা ট্যাংক নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে ফেরত যায়।
৪০নং সাক্ষী অনারারী ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদ
প্রসিকিউশনের ৪০নং সাক্ষী অনারারী ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদ বলেন, ঘটনার সময় ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারে অনারারী লেঃ ছিলেন। ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে তিনি নাইট ট্রেনিংয়ে গিয়ে অসুস্থ থাকার কারণে মেজর ফারুকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসেন। রাত প্রায় ৩টার সময় আরডিএম তার কাছে এসে বলেন, স্যার আর্টিলারি আসছে এবং ট্যাংক রেডি থাকছে। উভয় রেজিমেন্ট কমবাইন্ড ট্রেনিং করবে তারা হাতিয়ার এমিউনিশন চায়। কিছুক্ষণ পর কোয়ার্টার মাস্টার ক্যাপ্টেন দেলোয়ার তার কাছে একটি স্লিপ পাঠায়। তিনি চাবি দিয়ে স্লিপটা ট্রেজারিতে রাখার জন্য বলেন। আধা ঘণ্টা পরে তার খেয়াল হয় ট্রেজারিতে অনেক টাকা আছে। তখন কোয়ার্টার গার্ডে গিয়ে তালা ঠিকঠাক দেখতে পান। সেখানে মেজর রশিদ ও মেজর ফারুককে কথা বলতে দেখেন। তাদের পাশে এলএমজি ফিট করা একটি জীপ দেখে মেজর ফারুক তাকে ডেকে রেজিমেন্টের দিকে খেয়াল রাখার এবং গেট বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন। তখন তিনি বলেন কোথায় যাবেন? মেজর ফারুক বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে যাবো। তিনি বলেন, এই খবর শফিউল্লাহ সাহেব জানেন? মেজর ফারুক বলেন, দরকার মনে করি না।’ তারপর মেজর ফারুক ট্যাংকে উঠেন এবং মেজর রশিদ জীপ নিয়ে চলে যান। পরে রেডিওতে মেজর ডালিমের ভাষণে শোনেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’
সকাল ৮টার সময় ইউনিটে গেলে মেজর শরিফুল হোসেন তাকে বলেন, মেজর ফারুক বঙ্গভবনে ফোর্সের খানা পাঠানোর জন্য ফোন করেছেন। খানা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তিনি সৈনিকদের বেতন বিতরণ করতেন। একদিন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন লেফটেন্যান্টের ব্যাজ লাগাইয়া তার নিকট বেতন নিতে যায়। গেজেট বিজ্ঞপ্তি ছাড়া লেফটেন্যান্টের বেতন দিতে অস্বীকার করলে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন পিস্তল বের করে বলে, তোমার বিরুদ্ধে মেজর ফারুকের কাছে নালিশ দিব। পরে মেজর ফারুক তাকে বুঝিয়ে থামায়। তখন মেজর ফারুকের সহিত রিসালদার মোসলেম উদ্দিন বঙ্গভবনে থাকত।
৪১নং সাক্ষী ব্রিগেডিয়ার এ কে এম শাহজাহান
প্রসিকিউশনের ৪১নং সাক্ষী ব্রিগেডিয়ার এ কে এম শাহজাহান আদালতকে বলেন, তিনি সাক্ষ্য দেওয়ার সময় চাকরিরত ছিলেন। ঘটনার সময় ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর রেজিমেন্টের টু, আই, সি, ছিলেন। তখন এই রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার চৌধুরী খালেকুজ্জামান ছুটিতে থাকায় তিনি ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। তাদের রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল জয়দেবপুর রাজবাড়ীতে। ১৪ই আগস্ট তার রেজিমেন্টে একটি Ambush demonstration-Gi organise করে। Demonstration শুরু হয় সকাল আনুমানিক ৮টায়। ওই Demonstration-এ ৪৬ ব্রিগেডিয়ার কমান্ডার ৩৯ সাফায়েত জামিল, ডিপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টায় Demonstration শেষ হয়। তখন ২-ফিল্ড আর্টিলারির কমান্ডিং অফিসার মেজর রশিদ তার কাছে এসে তার ট্রুপস নিয়ে রাতে নিউ এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য বলেন। সেদিন রাতের রোড মার্চের অনুমতি ছিল না বলে তিনি অপারগতা জানান।
তারপর পীড়াপীড়ি করতে থাকলে তিনি ব্রিগেড কমান্ডার সাফায়েত জামিল ও সিজিএস খালেদ মোশারফকে জানালে তারা ওই রোড মার্চে যেতে নিষেধ করে। বেলা ৩টার দিকে মেজর রশিদ তার অফিসে গিয়ে বলেন, দোস্ত You have insulted me. তোমাকে একটা request করলাম তুমিতো রাখলেই না বরং সিনিয়র অফিসারকে বলে দিলে। এই বলে পুনরায় রাতে প্যারেডে ট্রুপস নিয়ে রোড মার্চ করে নিউ এয়ারপোর্ট যেতে বলে। তিনি অস্বীকৃতি জানিয়ে তাকে চা পান করতে বললে সে চা পান না করে চলে যায়।
ওইদিন মাগরিবের আগে মেজর রশিদ আবার তার বাসায় ফোন করে ট্রুপস নিয়ে এয়ারপোর্ট যাবার অনুরোধ করে। এবার তিনি অপরাগতা জানান। তার কিছুক্ষণ পরেই ব্রিগেড কমান্ডার কর্ণেল সাফায়েত জামিল সাহেবকে টেলিফোন করে জানতে চায় যে, তার demonstration dismental করে ফোর্স ইউনিটে ফেরত এসেছে কিনা? তিনি তিন ভাগের এক ভাগ এসেছে বলে জানায় এবং মেটারিয়ালসহ আসতে আগামী দিনও সময় লাগতে পারে বলে জানায়। কথা প্রসঙ্গে মেজর রশিদের অনুরোধের কথা জানালে তিনি বলেন You don’t come, You do your training as programme. আজ রাত ১০টা পর্যন্ত dismental করবে, বাকিটা আগামীকাল সকালে করবে। ১৫ই আগস্ট সকাল প্রায় ৮টার সময় লেঃ রউফ ৪৬ ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার থেকে একটি চিরকুট নিয়ে তাকে দেয়। এই চিরকুট কর্ণেল সাফায়েত জামিল লিখেছিলেন, লেঃ কর্ণেল চৌধুরী ছুটিতে থাকার কারণে লেঃ কর্ণেল আমিন আহমেদকে ১৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্বে দেওয়া হলো।
এ কে এম শাহজাহান এরপরে বলেন, THIS HAS CONCURRENCE OF THE CHIEF OF ARMY STAFF লেঃ রউফ-এর কাছেই প্রথম বঙ্গবন্ধুর ও তার আত্মীয়-স্বজনকে হত্যার কথা শুনেন। ১৭ই আগস্ট বেলা ১১টার সময় ৪৬ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে যান। কনফারেন্স থাকাকালীন ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল আজিজ বলেন ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোন ট্রুপস এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়।’ সেই কনফারেন্সে জানতে পারেন মেজর ডালিম, মেজর নুর, মেজর ফারুক, মেজর রশিদ, মেজর হুদা, মেজর শাহরিয়ার, মেজর মহিউদ্দিন(আর্টিলারি), মেজর মুহিউদ্দিন (ল্যান্সার) সহ আর্টিলারি ও ল্যান্সারের আরো কিছু অফিসার এবং সৈনিক জড়িত ছিল। মেজর রশিদ তার ফোর্সমেট এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। লেঃ কর্ণেল চৌধুরী খালেকুজ্জামান আগস্টের প্রথম দিকে ছুটিতে যায়। কনফারেন্স ব্রিগেড কমান্ডার কর্ণেল সাফায়েত জামিল উপস্থিত সবাইকে জানিয়ে বলেন, তার অধীনস্থ ২-ফিল্ড আর্টিলারি ও ১ম বেঙ্গল ল্যান্সার এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।