রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরি কমপ্লেক্সের জন্য বিশ্বের বিখ্যাত নাগরিক কেন্দ্রগুলোর মতোই উন্মুক্ত অথচ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে, এমন ডিজাইন জমা দিয়ে প্রকল্পটির প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রথম হয়েছে ডিকন ডিজাইন স্টুডিও এবং কিউব ইনসাইড লিমিটেড।
প্রথম স্থান অর্জন করা ডিজাইনে মূল জাদুঘরের নিরাপত্তা ঠিক রেখে, জাদুঘর ভবনের আশেপাশের পড়ে থাকা জায়গাকে নাগরিকদের জন্য আরও উন্মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন স্থপতিরা।
এই অর্জনের পর নিজেদের স্থাপত্য পরিকল্পনা এবং ডিজাইনের পেছনের ভাবনা চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তুলে ধরেছেন স্থপতি আবু আনাস ফয়সাল ও খন্দকার আশিফুজ্জামান।
স্থপতি ফয়সাল বলেন,‘শাহবাগ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে বিপুল সংখ্যক ঢাকাবাসীর মনন চর্চার সুযোগ আছে। অথচ জাদুঘর চত্বরটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা। তাই নাগরিকদের জন্য জায়গাটি উন্মুক্ত করার চিন্তা করেছি আমরা। বিশ্বের প্রায় সব মিউজিয়ামের বাইরের জায়গাটিতে নাগরিকদের উন্মুক্ত বিচরণ দেখা যায়।’
কিন্তু এরকম গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি উন্মুক্ত করার ডিজাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন,‘প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়াদের সবাই জাদুঘর-লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে উন্মুক্ততাকে প্রাধান্য দিয়েছে। কারণ বিশ্বজুড়ে এই স্থাপনাগুলোর আঙিনা এখন উন্মুক্ত। তবে নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই উচুঁ দেয়াল না দিয়ে কিভাবে বিকল্পভাবে নিরাপত্তা বলয় গড়া যায় তা নিয়ে আমরা ভেবেছি। প্রাচীন দুর্গ বা কেল্লার চারদিকে খাল আকারের পানি ভরা পরিখা দিয়ে প্রতিরক্ষা গড়া হতো। আমাদের ডিজাইনে এরকমই ছোট আকৃতির পানির পরিখা রাখা হয়েছে।’
শাহবাগ ও সংলগ্ন এলাকায় সরকারের সাংস্কৃতিক বলয় গড়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নতুন রূপে এক হচ্ছে জাতীয় জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরি।
স্থানগত গুরুত্ব এবং সমসাময়িক প্রয়োজনীয়তা পূরণের বিষয়টি মাথায় রেখেই ডিজাইনটি করা হয় বলে জানান স্থপতি আশিফুজ্জামান।
তিনি বলেন,‘ অভিজ্ঞ স্থপতিরা আমাদের ডিজাইনটিকে প্রথম হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। আমরা সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে উন্মুক্ত করতে এবং নাগরিকদের সবার জন্য সমানসুযোগ দেয়ার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েছি। আমাদের ডিজাইনে আমরা দুটি স্তর বিবেচনায় রেখেছিলাম। একটি হচ্ছে নাগরিক কেন্দ্র অন্যটি হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ভবন। নাগরিকদের উন্মুক্ত আড্ডা-চিন্তা-মননের বিনিময়ের জন্য আমাদের ডিজাইনে একটি বিশেষ প্লাজা রয়েছে। কিন্তু পাবলিক লাইব্রেরি এবং জাদুঘরের মূল ভবনের পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখেছি আমরা। আলোর কারসাজিতে দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনী নিশ্চিত করতে জাদুঘরের নকশায় আমরা কোনো গ্লাস ব্যবহার করিনি। জাদুঘরের পেছনে থাকা পুকুরটিকে বড় করে এর এক পাশে একটি অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করেছি আমরা। পুকুরের পাড়ে আমরা চিরায়ত বাংলার পুকুর ঘাঁটের মতো করে একটি অ্যাম্ফি থিয়েটারের ডিজাইন করেছি। তেমনি লাইব্রেরির ক্ষেত্রেও আমরা নাগরিক পরিসর এবং পাঠকদের জন্য নিরব-শান্ত পরিবেশ নিশ্চিতের নকশা রেখেছি।’
শাহবাগ, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, বাংলা একাডেমি এমন স্থাপনাগুলোর সমন্বিত একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতীয় জাদুঘর এবং পুরোনো পাবলিক লাইব্রেরির আধুনিক কমপ্লেক্সের ডিজাইন বাছাইয়ের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় স্থাপত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সেই প্রতিযোগিতায় জমা পড়া ডিজাইনগুলো থেকে সেরা ৩ টি ডিজাইন ইতোমধ্যে নির্বাচিত করেছে ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস।
এখন সেরা ৩ সহ নির্বাচিত সব ডিজাইনের প্রদর্শনী চলছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টসের প্রদর্শনী কেন্দ্রে। গতকাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন,‘ জাদুঘরের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বই পড়ার পরিবেশ আরো পাঠক উপযোগী করতেই একই আঙ্গিনায় কমপ্লেক আকারে নতুন ডিজাইনে নবীন স্থপতিদের কাজ বিবেচনা নিয়েই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।’
ডিজাইনগুলোতে আধুনিকতা এবং নিরাপত্তা দুই দিকেই নজর দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।