সংগঠনের নামের সাথে ‘লীগ’ জুড়ে দেয়া ভুঁইফোড় সংগঠনে বাংলাদেশ ছেয়ে যাচ্ছে। অতি উৎসাহী ও ক্ষমতাতোষণ বাজরা নামে বেনামে নানা রঙের ও নানা ঢঙের সংগঠন গড়ে তুলে চলছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বুঝি আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনতন্ত্রের নেই। যে যেখানে অবস্থান করছে সেখানকার অবস্থান অনুযায়ী যে যার ইচ্ছেমতো সংগঠনের সাইনবোর্ড বানাচ্ছে। এগুলো কেবলই প্যাড, ব্যানার ও পোষ্টার স্বর্বস্ব। লীগ জুড়ে দেয়া মোট কতসংখ্যক সংগঠন রয়েছে তা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলই হয়তো জানেন না।
সম্প্রতি চমৎকার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, কৃষক লীগের গুলশান শাখার আর ধানমন্ডি শাখার কী দরকার। ধানমন্ডিতে ধান চাষ হয় আমিতো জানিনা। বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার কী দরকার। শ্রমিক লীগের বিদেশে কী দরকার। তাঁতি লীগ নাম দেখলাম কুয়েত না কাতারে। তার আবার দুই কমিটি। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আরেকটা তরুণ লীগ। এ লীগের হেড কোয়ার্টার কোথায়। ৫শ টাকা দিয়ে সিল একটা বানালেইতো হয়ে যায়। তিনি হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, এসব দোকানের স্বীকৃতি আমরা দেবোনা। এগুলো আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করছে।জনগণের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।দল ক্ষমতায় গেলেই এইসব দোকানের পসরা খোলা হয়। বিরোধী দলে থাকার সময় এইসব দোকানের ঝাঁপ বন্ধ থাকে।
দল ক্ষমতায় এলেই গড়ে ওঠে এসব সংগঠন রূপী দোকান। যেমন আওয়ামী পরিবার লীগ, আল্লাওয়ালা লীগ, মিডিয়া লীগ, অভিভাবক লীগ, ইতিহাস চর্চা লীগ, অধিকার আদায় লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী তৃণমূল লীগসহ অসংখ্য লীগে ছেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত রয়েছে ৭টি সহযোগী ও ২টি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের।সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে ১. যুবলীগ ২. কৃষক লীগ ৩. স্বেচ্ছাসেবক লীগ ৪. আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ৫. যুব মহিলা লীগ ৬. মহিলা আওয়ামী লীগ ৭. তাঁতী লীগ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হলো ১. ছাত্র লীগ ২. জাতীয় শ্রমিক লীগ।
কিন্তু এই গঠনতন্ত্রের নির্দেশনা কে মানে? যে যার ইচ্ছেমতো ‘লীগ’ বসিয়ে সংগঠন গড়ে পোস্টারিং করে চলছে। ‘লীগ’ যেন একটা বিশাল ছাতা। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, তুফান হতে বাঁচতে এই ছাতার তলে আশ্রয় নিতে যেন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।এসব সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরও উপস্থিত হতে দেখা যায়। গঠনতন্ত্রের বাইরে এসব সংগঠন কিভাবে গড়ে ওঠে ও নেতাদের মদদ পায় সে এক বিস্ময়। ধর্মনিরপেক্ষ দাবিদার রাজনৈতিক দলের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রলীগও হয়ে উঠছে। হয়ে উঠছে আল্লাওয়ালা লীগ। এসবের বিরুদ্ধে দল কেন কঠোর হচ্ছেনা? গঠনতন্ত্রবিরোধী লীগ সৃষ্টির দায়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছেনা? প্রশ্ন উঠানো যায় গঠনতন্ত্রে নির্দেশিত ৭টি সহযোগী সংগঠন নিয়েও। নারী পুরুষের বৈষম্যের দিকটিকে কেন গঠনতান্ত্রিক স্বীকৃতি দেয়া হলো? আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নারী ও সারাদেশে বিভিন্ন স্তরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নারী নেতৃত্ব রয়েছেন।নিজ নিজ যোগ্যতা বলেই তারা নেতৃত্বের আসন দখল করেছেন তারা। আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়েরই সমান অধিকার।যুব লীগের ক্ষেত্রেও তদ্রুপ। সেক্ষেত্রে যুব লীগের পাশাপাশি আবার যুব মহিলা লীগ গঠন কতোটা প্রাসঙ্গিক? একজন নারী কি শুধু নারী বলে আওয়ামী লীগ কিংবা যুব লীগের নেতৃত্বের আসন পেতে ব্যর্থ হন? তবে কি নারীকে বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখে আওয়ামী লীগ? নইলে কেন মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের গঠনতান্ত্রিক স্বীকৃতি প্রদান। এগুলো দলীয় নীতি নির্ধারকদের ভাবা দরকার।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.মিজানুর রহমান এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে পুলিশী অ্যাকশনের দাবি জানান। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে অনুরোধ করবো অতি দ্রুত ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। দলের অনুমোদিত ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাড়া কেউ লীগ, বঙ্গবন্ধু ও জাতির জনকের পরিবারের নাম ব্যবহার করলেই প্রয়োজনে পুলিশী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে এরা দলের নাম ভাঙিয়ে যেসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে, দায়ভার আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে।(তথ্যসূত্র:বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭)।
এই সুবিধাবাদী লীগাররা আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরে থাকার সময় থাকেনা। এতেই তাদের উদ্দেশ্য বুঝে নেয়া যায়। এ ব্যাপারে গঠনতন্ত্র ও গঠনতন্ত্র বিরোধী উভয় ক্ষেত্রেই সিরিয়াস ভাবা ও পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যুবক ও তরুণের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে? নইলে যুবলীগের পাশাপাশি আবার তরুণ লীগ কেন? এগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষার প্রয়োজনেই। না হয় পরগাছা যেমন রস টেনে মূল গাছকে রসহীন শুষ্ক করে তোলে নিয়ন্ত্রণহীন এই সুবিধাখোর লীগাররা আওয়ামী লীগকেও তা-ই করবে। পরগাছা ও আগাছা যে গাছের নিরাপদ ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চরম হুমকি, শস্যবীজ বেড়ে ওঠায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও শস্য উৎপাদনে অন্তরায় এটাতো সর্বজন স্বীকৃত।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)