সকল বাধা-প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা আফগান কিশোরী ফাতেমা কাদেরিয়ান (১৪) হারিয়েছেন তার অনুপ্রেরণার উৎস, বাবাকে। ভিসা প্রত্যাখান হওয়ার পরও শেষ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছিলো তার দল, সাহসী কৃতিত্বের জন্য পেয়েছিলো রৌপ্য পদক। মঙ্গলবার জঙ্গি গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলায় নিহত হন তার বাবা।
মঙ্গলবার হেরাতের একটি মসজিদে শিয়া মতবালম্বীদের লক্ষ্য করে চালানো হামলায় কমপক্ষে ৩২ জন নিহত হন। আহত হন ৬০ জনেরও বেশি মানুষ। হামলার দায় স্বীকার করে আইএস। নিহতদের মধ্যে ছিলেন আফগানিস্তানের সেই রোবোটিক্স টিমের নেতৃত্ব দেওয়া ফাতেমার বাবা। সবচেয়ে বড় সমর্থক, উৎসাহদাতা বাবাকে হারিয়ে ক্ষুদ্ধ, বেদনাক্রান্ত ফাতেমা।
দলটির কোচ ও পরিচালক আলি রেজা মেহরবান আলজাজিরাকে জানান, এই রক্তাক্ত হামলায় ফাতেমা ‘ক্ষুদ্ধ ও বেদনাক্রান্ত’। হামলায় গুরুতর আহত ফাতেমার বাবা পরে নিহত হন।
“ফাতেমা খুবই শোকাহত। সে কারও সাথে কথা বলছে না, কিছু খাচ্ছে না, একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে।”
বৈশ্বিকভাবে আয়োজিত প্রথম সেই প্রতিযোগিতা ‘দ্য ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল রোবোটিক্স কনটেস্টে’ অংশ নিয়ে ফাতেমা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার বাবা তার কাজের সবচেয়ে বড় সমর্থক।
মর্মান্তিক এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ফাতেমা ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন অনেকেই।
কিশোর-কিশোরীদের জন্য ওয়াশিংটনে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত সেই প্রতিযোগিতায় দেড়শোরও বেশি দেশের দল অংশ নেয়। কিন্তু সবার চোখ ছিলো আফগান দলটির প্রতি। প্রতিযোগিতায় ফাতেমার দলটি ‘সাহসী কৃতিত্বের’ জন্য রৌপ্য পদক জয় করে। বিচারকরা তাদের দলের অদম্য মনোভাবের প্রশংসা করেন।
সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রথমে বাধার মুখে পড়ে আফগান দলটি। ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়ায় ৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দুইবার কাবুলের আমেরিকান দূতাবাসে যেতে হয়েছিলো তাদের। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার মাত্র ১ সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমোদন পায় তারা। তবে এর আগেই বিশ্বের নজর কাড়ে দলটি।
ভিসা পাওয়ার পর জুলাইয়ে এক সাক্ষাৎকারে ফাতেমা আল জাজিরাকে বলেছিলো, আফগানিস্তান যুদ্ধাবস্থায় থাকা একটি দেশ, দেশটির পর্যাপ্ত সম্পদও নেই। অন্যান্য দেশগুলোর এটা বিবেচনা করা উচিত, আমাদের প্রতি বেশি কঠোর হওয়া ঠিক নয়।