হাজী সেলিম পুত্র ইরফান সেলিমের মামলাটি আদালতে বিচারাধীন, সেটি আদালত বুঝবে। আদালতের বিষয় নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযানে যা পাওয়া গেছে তাই র্যাব মামলায় দেখিয়েছে এবং সেভাবেই মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ তাদের তদন্তে যা পেয়েছে তারা তাই দাখিল করেছে।
আজ মঙ্গলবার র্যাব সদর দফতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে র্যাব সেবা সপ্তাহে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছে র্যাব। ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন র্যাব মহাপরিচালক।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমাদের অভিযান সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালনা করেছি। অভিযানে যে সকল জিনিস আমরা পেয়েছি এর ভিত্তিতে আমরা মামলা করেছি। এর পরে ঘটনাস্থলে যা পেয়েছি তা তদন্ত করে মামলা করেছি। পরে পুলিশ তদন্ত করে যা পেয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন দাখিল করে। এইটা এখন আদালতের বিচারিক বিষয়।বিচারিক বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ইরফানের বাসায় আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে যে সব মালামাল পাওয়া যায় বিশেষ করে ওয়াকিটকি, বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। সেগুলো লিপিবদ্ধ করে আমরা থানায় মামলা করি।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা যে প্রতিবেদনে দিয়েছেন, সে বিষয়ে আমরা অব্যবহিত নয়। উনি উনার বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতা ওপর নির্ভর করে যা পেয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। চুড়ান্ত প্রতিবেদনে কী আছে সেটা আমরা পেলে এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানাতে পারব।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ইফরান সেলিমকে দায়মুক্তি দেওয়ায় র্যাবের অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে যেসব আলামত পাওয়া গিয়েছিল তার ভিত্তিতে মামলাগুলো করা হয়েছে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা যে সব বিষয় বিবেচনা করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, এ বিষয়ে র্যাব এখনও অবহিত নয়।
তদন্ত এ তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব নারাজি দিবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদনে আমাদের হাতের আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন নাকি র্যাবের অভিযান, জনগণ কোনটাকে বিশ্বাস করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র্যাব বাংলাদেশ পুলিশেরই একটি বিশেষায়িত বাহিনী। অর্থাৎ বাংলাদেশ পুলিশের যেসব শাখা আছে তার মধ্যে র্যাব অন্যতম। এ রকম একটি বাস্তবতায় আমরা অভিযানে যেসব আলামত ও মালামাল পেয়েছি সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব সব অভিযানে স্বাক্ষীদের উপস্থিততে যেসব আলামত পাওয়া যায় তা এজাহারে উল্লেখ করা হয়। যে সময় ঘটনা ঘটে তার বাস্তবতার ওপর ভিত্তিকে করে মামলা করা হয়। সুতরাং র্যাবের সকল কার্যক্রম একধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে পরিলিখিত থাকে। এ বাস্তবতায় র্যাব নিরপেক্ষ ও চাপমুক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
পুলিশের তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তের বিষয়ে র্যাব মনে করে, পুলিশের যারা তদন্ত করেছেন তারা এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবেন।
এর আগে সোমবার ডিএমপির লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কুদরত-ই খুদা বলেছিলেন, ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেছিলেন, আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে ইমরান সেলিমের কাছে কোনও অস্ত্র ও মাদক ছিল না। তার সহযোগী জাহিদের কাছ থেকে এই অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে। তাই প্রতিবেদনে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
গত ২৭ অক্টোবর রাতে ডিএমপির চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া এই দুটি মামলার বাদী ছিল র্যাব। মামলা হওয়ার দুই মাস পরে পুলিশ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
গত ২৫ অক্টোবর রাতে ধানমন্ডিতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফট্যানেন্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করেন সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়িতে থাকা লোকজন। পরদিন ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। মামলায় মোহাম্মদ ইরফান সেলিম, তার দেহরক্ষী জাহিদ, মদীনা ডেভেলপারসের প্রটোকল কর্মকর্তা এবি সিদ্দিক ও গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা তিন জনকে আসামি করা হয়।
পরে ২৬ দুপুরে পুরান ঢাকায় চকবাজারে হাজি সেলিমের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয় র্যাব। বাসায় অবৈধভাবে মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুই জনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন। পরে মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে দুটি করে মোট চারটি মামলা দায়ের করে র্যাব।