আগাম ঘোষণা অনুযায়ী একাধিকবার ছাত্রলীগের ২৯ তম সম্মেলনের তারিখ ৩১ মার্চ ও পহেলা এপ্রিল নির্ধারণ করা হলেও তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশার। এ নিয়ে স্পষ্ট বিভাজন দেখা দিচ্ছে সংগঠনটির বর্তমান কমিটির নেতা এবং পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে।
বর্তমান কমিটির দুই শীর্ষ নেতা বলছেন ৩১ মার্চ নয় তবে ‘যথাসময়েই’ হবে সম্মেলন আর পদ প্রত্যাশীরা সেই ‘যথাসময়ের’ সঠিক তারিখ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্তমান কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এসে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে ৩১ মার্চ সম্মেলন হবে না’ বলে নেতাকর্মীদের জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএম জাকির হোসাইন ৩১ মার্চে সম্মেলন হচ্ছে না বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেন। সম্মেলন কবে হবে সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি ‘যথাসময়’ এর কথা বলেন।
তিনি বলেন, “৩১ মার্চ সম্মেলন হচ্ছে না, তবে সময়মতোই ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে। সম্মেলনের তারিখ পরবর্তীসময় জানিয়ে দেয়া হবে।”
এই বিষয়ে জানতে সংগঠনটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ১২ই জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহম্মেদ অডিটরিয়ামে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক জরুরি বর্ধিত সভায় ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল ২৯তম কাউন্সিলের তারিখ ঠিক করা হয়।
তারপর থেকেই নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য পদ প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। পাশাপাশি বর্তমান কমিটির শীর্ষ দুই নেতাও বারবার বলে এসেছেন সম্মেলন ‘যথাসময়েই’ হবে। ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে গত ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন, “একটা খবর দেব, সুখবর। আমি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলেছি। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করুন। আগামী মার্চ মাসে, স্বাধীনতার মাসে সম্মেলন হোক- এটা নেত্রীর ইচ্ছা। সম্মেলনের প্রস্তুতি নিন, মার্চে সম্মেলন।”
তিনি আরও বলেছিলেন, “ছাত্রলীগের নেতারা সম্মেলন দিয়ে পদ না ছাড়লে আওয়ামী লীগে তোমরা জুনিয়র হয়ে যাবে। আমরা চাই আওয়ামী লীগে তরুণ নেতৃত্ব আসুক।”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামীলীগের ৭ই মার্চের জনসভায় দলের হাই কমান্ড থেকে পূর্ব নির্ধারিত তারিখেই সম্মেলনের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়। সর্বশেষ ৮ মার্চ সকাল ১১ টায় ওবায়দুল কাদের মধুর ক্যান্টিনে আসেন এবং আবারও নির্ধারিত তারিখেই সম্মেলনের জন্য ছাত্রলীগকে প্রস্তুতি নিতে বলেন।
ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হওয়াতে ছাত্রলীগের বর্তমান ও পদপ্রত্যাশী অনেক নেতারাই তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, “নেত্রীর নামে যে বার্তাটি আজকে এসেছে তার কোন আনুষ্ঠানিক উৎস নেই। এর আগে মার্চে সম্মেলন হওয়া সংক্রান্ত নেত্রীর যে বার্তা আমরা পেয়েছিলাম সেগুলোর কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভিত্তি ছিলো। আজ সন্ধ্যা থেকে একটা বার্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে, ৩১ মার্চ সম্মেলন হবে না তবে যথাসময়ে সম্মেলন হবে। এই ‘যথাসময়’টা কি পাঁচ বছর, দশ বছর, এক সপ্তাহ নাকি অসীম সেটা পরিষ্কার করা হোক। ছাত্রলীগের এক হয়ে কাজ করার জন এই ‘যথাসময়’ নির্ধারণ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”
“৩১ মার্চ সম্মেলন এটা নিয়ে দুইবার বার্তা আসার পরেও ধোঁয়াশা তৈরির মানে হলো কেউ কেউ নিজেদের ‘উত্তম ছাত্রলীগ’ মনে করে সম্মেলন স্থগিত করে দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে”
ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক ও পদপ্রত্যাশী গোলাম রাব্বানী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, “বর্তমান দুই নেতা আমাদের নেত্রীর ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি না নিয়ে কিসের স্বার্থে, কার ইচ্ছা বাস্তবায়নে সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তনের আঁকুতি জানালেন? আর নেত্রী যদি তাদের কথায় পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তারিখ পরিবর্তনের কথা বলে থাকেন, তবে নেত্রীর নির্ধারিত তারিখটি কত? সেই তারিখ তো ৩১ মার্চের আগেও হতে পারে!”
ধোঁয়াশা দূর না করলে এর কারণে যদি ছাত্রলীগের মধ্যে যদি উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তবে সে দায় বর্তমান নেতাদেরই নিতে হবে হুশিয়ার করে দিয়ে এ নেতা বলেন, “নেত্রীর যেকোনো সিদ্ধান্ত বিনাবাক্যে প্রশ্নাতীতভাবে শিরোধার্য। প্রয়োজনে সারাদেশে লাখো নেতা-কর্মীর পক্ষ থেকে আমরা আপার সাথে দেখা করবো। উনারা ম্যাসেজ ক্লিয়ার করুক, ছাত্রলীগ পরিবারের মাঝে অন্তঃকলহ সৃষ্টির দ্বার উন্মোচন না করুক, উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায় কিন্তু তাদেরই নিতে হবে।
২০১৫ সালের ২৬ জুলাই সর্বশেষ সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন সাইফুর রহমান সোহাগ ও জাকির হোসাইন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত বছরের ২৬ জুলাই ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলন কিংবা কাউন্সিলের আয়োজন এতদিন হয়নি।
দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আর নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ঝঞ্ঝা-মুখর সময়ে ছাত্রলীগ ছিল আন্দোলনের নেতৃত্বের ভূমিকায়।