‘ছেলে-হোক মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ এই স্লোগানের পর সম্ভবত বাংলাদেশে সবচেয়ে ব্যবহৃত স্লোগান ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন’। বলতে গেলে শিশু বয়স থেকেই এই স্লোগানের সাথে পরিচিত হয় মানুষ। কিন্তু অবাক ব্যাপার হল; ছোট বয়স থেকে শুনে এবং শিখেও এই ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অন্য কোনো ক্ষেত্রে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এতটা বেগ পেতে হয় না।
সেই বেগের পরিমাণ যে কতটা, তার বেশিটা জানে রাজধানীবাসী। তবে অন্য সিটি করপোরেশন বা জেলা শহরের মানুষও তা কম টের পান না। বলতে গেলে পুরো দেশের সড়কেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। কোনো উদ্যোগ, কোনো পরিকল্পনাতেই সেই বিশৃঙ্খলা থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করছে পারছে না। বরং দিনদিন তা বেড়েই চলেছে।
তারপরও কর্তৃপক্ষ বা সরকারের উদ্যোগ থেকে নেই। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে আবারো রাজধানীতে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ- ২০১৯’ শুরু হয়েছে। এর উদ্বোধন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন: সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৫৭টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ট্রাফিক আইনের সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে আজ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাফিক সদস্যরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাধ্যমে বাস চালক, হেলপার ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, এমন কর্মসূচি চলার সময় অনেকটা জোর-জবরদস্তি করে বিশৃঙ্খল অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়। কিন্তু কর্মসূচি শেষে, সেই আগের অবস্থাতেই ফিরে আসে।
আমরা দেখেছি, আইন বা নিয়ম না মানতে মানতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছে। এ জন্য তাকে জোর করেও আইন মানানো যায় না। সড়কে যে, যার মতো চলবে- এটা এখন মানুষের অভ্যাস হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষ রাস্তা পারাপারের সময় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবে না, গাড়ি চালকরা যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করাবেন; যাত্রী তুলবেন-নামাবেন। জেব্রাক্রসিং মানবেন না, সিগন্যাল মানবেন না। আবার পথচারীরাও তাদের ইচ্ছা মতো ব্যস্ত সড়ককে ব্যবহার করবেন। আর কর্তৃপক্ষও সব দেখে শক্ত ব্যবস্থা না নিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখবে।
সব মিলিয়ে বলা যায় ‘যে লাউ, সেই কদু’। অথচ সড়কের এই বিশৃঙ্খলার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। যার শিকার হচ্ছে, সেই সাধারণ মানুষই। দৈনিক প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় গত প্রায় দুই বছরে নিহতের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৮৮ জন। আহতের সংখ্যা আরো কয়েকগুণ। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রকৃত নিহতের আরো অনেক বেশি।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তাহলে কি এভাবেই প্রাণহানী ঘটতে থাকবে? এর থেকে কি মুক্তি নেই? এটা ঠিক দুর্ঘটনাকে সর্বাংশে রোধ করা যাবে না। তবে সচেতনতার মাধ্যমে তা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। আর এক্ষেত্রে সবার আগে ভূমিকা রাখতে হবে সাধারণ মানুষকে। বাকিটা নির্ভর করে কর্তৃপক্ষের ওপর। কেননা মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করতেই হবে। সেটা যে সম্ভব, তার প্রমাণ মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট ব্যবহার। এখন রাজধানীতে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল আরোহী দেখা যায় না।
আমরা মনে করি, আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব না। যেই হোক না কেন; ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাই এ সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায়।