অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের শাস্তি ও নিপীড়নকারীদের বহিষ্কার চাওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সমাজকর্মীরা।
শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশ থেকে এই আহবান জানানো হয়।
এসময় অধিভুক্তি নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও আহবান জানান বক্তারা।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, আইনজীবী হাসানাত আব্দুল কাইয়ুম, শিশু ও শিক্ষা রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক রাখাল রাহা, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, সমাজকর্মী জাকিয়া শিশির, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহদী অপু, আবু রায়হান খান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের হাসিব মোহাম্মদ আশিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
এমএম আকাশ বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যে পদক্ষেপটা নেয়া উচিত ছিলো তা হলো অধিভুক্ত বাতিল ও অধিভুক্ত কলেজগুলোর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করা। কিন্তু প্রশাসন সেটা না করে বিশেষ দলের কর্মী বাহিনীকে ডেকে এনে আন্দোলনকারীদের উপর লেলিয়ে দিয়েছে যা অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরের উচিত ছিলো নিরপেক্ষ থাকা। কারণ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের প্রোক্টর।
তিনি আরও বলেন, ন্যায্য প্রশ্নে আন্দোলন হলে প্রশাসনের সঙ্গে বসে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে। মামলা দিয়ে এটার সমাধান হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে তাদেরকে শত্রু না ভেবে আলাপ করে সমাধানের পথ খোঁজা উচিত। মামলা, মাস্তানি হলো পাকিস্তানি আমলের এনএসএফ বাহিনীর কায়দা। এগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমর্থকদের মুখে ও কাজে মোটেও সম্মান জনক নয়। এমতাবস্থায় ভুল স্বীকার করে সঠিক পথে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানায়।
আবু রায়হান খান বলেন, নিপীড়কদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের দেয়া ৪৮ কর্মঘণ্টার আল্টিমেটাম চলছে। কিন্তু তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো শাস্তি চাওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম কাজ করা হয়েছে। মামলা পরে আমরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে বলেছিলাম; আমরাই আন্দোলনকারী, আমাদের গ্রেফতার করুন। কিন্তু প্রশাসন আমাদের গ্রেফতার করছে না। এর মানে আমাদের দাবি যৌক্তিক আর প্রশাসনের মামলা ভিত্তিহীন। আমাদের দাবি যদি যৌক্তিক হয় তবে মামলা প্রত্যাহার করুন। একই সঙ্গে নিপীড়নকারীদের শাস্তি দিন।
একই দাবিতে আগামীকাল বেলা বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবে শিক্ষার্থীরা।
১৫ জানুয়ারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে হামলা ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৭ জানুয়ারি ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। এসময় কলা ভবনের গেইট ভেঙ্গে তারা প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানীকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলা প্রত্যাহার ও নিপীড়কদের শাস্তির দাবিতে এ সংহতি সমাবেশ করা হয়।