‘আশা করি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। দুটি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য এই ভিডিওটি করা।’
সম্প্রতি নিজেকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠা কিছু বিতর্ক আর আলোচনা-সমালোচনার জবাব দিতে সোমবার লাইভে এভাবেই শুরু করেন সাকিব আল হাসান।
‘প্রথমটি ফোন ভাঙা নিয়ে। আমি আসলে কখনোই বুঝতে পারি না, অন্য একজনের ফোন ভাঙলে আমার কী উপকার হবে! এর উত্তর হয়ত আমার চেয়ে ভালো আপনারা দিতে পারবেন। আর যার ফোন ভাঙা নিয়ে কথা হচ্ছে, ফোনটি আমি ইন্টেনশনালি ভাঙিনি। যেহেতু করোনাকালীন সময়, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে, কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়, সেই চেষ্টাটুকুই করছিলাম।’
‘যেহেতু সেখানে অনেক মানুষ এবং ভিড় ছিল, সেখানে সবাই চাইছিল ছবি তুলতে। আমি চেষ্টা করছিলাম, কীভাবে তাদের কাছে না গিয়ে আমার কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারি। তার মধ্য থেকে একজন উৎসুক জনতা আমার কাছে এসে ছবি তুলতে চায়। তখন তাকে সরিয়ে দিতে গিয়ে, আমার হাতের সঙ্গে লেগে তার হাত থেকে মোবাইলটি পড়ে যায়। যা পরবর্তীতে ভেঙেও গেছে।’
‘তার ফোন ভাঙার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, তবে আমার মনে হয়, তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ ছিল। আসলে আমার মনে হয়, যতদিন করোনার প্রভাব থাকে, পুরো সময়ে আসলে সবারই একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ।’
কয়েকদিন আগে এক ভক্ত ছবি তুলতে অনুমতি ছাড়াই সাকিবের খুব কাছাকাছি চলে আসে। টাইগার অলরাউন্ডার তাকে সরিয়ে দিতে গেলে ভক্তের হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায়। সেটি নিয়েই এমন ব্যাখ্যা সাকিবের।
‘দ্বিতীয়ত, যে ঘটনাটি অবশ্যই সেনসেটিভ। তবে শুরুতে বলে নিতে চাই, আমি নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমান বলে মনে করি। সেটা পালন করার চেষ্টা করি। তবে ভুল-ত্রুটি হবে, এই ভুল-ত্রুটি নিয়েই আমরা জীবনে চলাচল করি। আমার কোনো ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে তার জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। এমনকি আপনাদের মনে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকলেও তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’
‘এখন আসি, পূজার বিষয় নিয়ে। আসলে পূজার বিষয় নিয়ে নিউজ কিংবা মিডিয়ায় খবর এসেছে যে, আমি পূজা উদ্বোধন করতে গেছি। কিন্তু যেটার জন্য আসলে যাইনি, করিওনি। এটার প্রমাণ আপনারা অবশ্যই পাবেন। কারণ, ঐখানে অনেক সাংবাদিক ভাই-বোনেরা উপস্থিত ছিলেন, যাদেরকে হয়তবা ইনভাইট করা হয়েছে।’
‘এছাড়া যদি আপনারা আমন্ত্রণের কার্ডও দেখেন, কার্ডে আসলে লেখা আছে যে, কে ঐটার উদ্বোধন করেছে। আর উদ্বোধন হয়েছে আসলে আমি যাওয়ার আগেই। যে জায়গায় বা মঞ্চে অনুষ্ঠানটি হয়েছে, সেটি কখনোই পূজামণ্ডপ ছিল না। পাশে আরেকটি স্টেজ ছিল, সেখানে করা হয়েছিল। পুরো অনুষ্ঠানটি আসলে সেখানে হয়। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট ব্যাপী সেই অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। সেখানে কোনো ধর্ম, বর্ণ কোনকিছু নিয়ে কখনো কথা হয়নি।’
‘অনুষ্ঠান শেষে যখন গাড়িতে উঠতে হবে, যেহেতু ঐখানে পাশেই আসলে পূজার আয়োজন ছিল, অনেকগুলো রাস্তা আসলে বন্ধ ছিল। স্বাভাবিকভাবে পূজামণ্ডপটি পার করে আমায় যেতে হতো, যেটি আমি গিয়েছি। যাওয়ার সময়, পরেশ দা, যিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তার অনুরোধে প্রদীপ প্রজ্বলন করি। যেহেতু কলকাতায় অনেকদিন খেলেছি, কলকাতার মানুষরা আমাকে অনেক পছন্দ করে, ঐখানকার সাংবাদিকরা অনেক উৎসুকও ছিল, সবার অনুরোধে তখন পরেশ দার সঙ্গে প্রদীপ প্রজ্বলনের সময় একটা ছবি তোলা হয়।’
‘ছবি তোলা শেষে যাওয়ার সময়, সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার নিরাপত্তায় যারা ছিল, তাদের কিছুটা বাকবিতণ্ডাও হয়, একটু হাতাহাতিও হয়। সেই ঘটনার জন্য আমরা ঐদিক দিয়ে আর যেতে পারি নাই। পরে আবার ব্যাক করে অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছি।’
‘পুরো ঘটনা ছিল এরকম। যার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আমরা আমাদের জন্য যে স্টেজ করা হয়েছিল, সেখানে ছিলাম। আবারও বলছি, সেখানে কোনো ধর্ম, বর্ণ নিয়ে কথা হয়নি এবং এটি তেমন কোনো প্রোগ্রামও ছিল না।’
‘যেটা হয়েছে, দুই মিনিটের যে সময়টা পূজামণ্ডপে ছিলাম, সেটি নিয়ে সবাই বলেছে এবং ধারণা করছে, আমি পূজার উদ্বোধন করছি। সেটি কখনোই করিনি এবং একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে করবো না। তারপরও হয়ত সেখানে যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি, সেটা যদি আপনারা মনে করে থাকেন, তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আমি মনে করি, আপনারা এটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভবিষ্যতে যাতে এমন কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেটিও চেষ্টা করবো।’
‘তারপরও আপনাদের জানানোর জন্য কিছু তথ্য দিয়ে দিতে চাই। আমার কাছে নিমন্ত্রণের কার্ডটাও আছে। কে আসলে পূজার উদ্বোধক ছিলেন সেটিও বলে দেই। উদ্বোধক ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, প্রশাসনিক প্রধান, কলকাতা পৌরসভা, মন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।’
‘আমি ওই প্রোগ্রামে যাওয়ার আগেই তিনি পূজার উদ্বোধন করে গেছেন। তারপরে আমি গিয়েছি, প্রোগ্রামে অ্যাটেন্ড করেছি, পরেশ দার অনুরোধে প্রদীপ প্রজ্বলন করেছি এবং সাংবাদিকদের অনুরোধে উনার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবিটি তুলেছি।’
‘হ্যাঁ, আসলে আপনারা ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনা করেই হয়ত, উত্তেজনা অনুভব করেছেন, বা ভেবেছেন ঘটনাটি ওটাই হয়েছে। আসলে একটি ছবি দেখে আপনি পুরো ঘটনা কখনো পুরোটা অনুমান করতে পারবেন না বলে আমার মনে হয়। তারপরও আমার কখনো কোনো উদ্দেশ্য ছিল না যে, আমার ধর্মকে ছোট করে অন্য ধর্মকে বড় করবো, এরকম কোনো বিষয়ও ছিল না।’
‘আমার মনে হয়, ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। আমার যদিও জ্ঞান খুবই কম, তবুও চেষ্টা করছি, ভবিষ্যতে আরও চেষ্টা করবো, ইসলাম সম্বন্ধে যেন আরও জ্ঞান নেয়া যায়। ইসলামের নিয়মানুযায়ী যেন চলতে পারি। হ্যাঁ, সবসময় এটা করতে পারিনি, বা এখনো পারি না। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য আছে ভবিষ্যতে সবকিছু মেনে চলবো।’
‘শুধু একটি কথাই বলবো যে, এমনকিছু যেন আমরা না করি, যেটাতে মানুষ আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেয়, আমরা কী এক নাকি আলাদা। কারণ, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এক থাকবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শক্তিশালী। আমরা বিভিন্ন উদাহরণ চাইলেই দিতে পারি, আমি নিজেই অনেক উদাহরণ দিতে পারি, কিন্তু সেসব দিতে চাই না। আশা করি, আমরা মুসলমান যারা আছি, তারা সবসময় এক থাকবো। আমাদের এক থাকা জরুরি, আমাদের একতা খুবই জরুরি। যখনই আমরা আলাদা আলাদা হয়ে যাবো, তখনই আমরা দুর্বল। যতক্ষণ আমরা এক থাকবো, ততক্ষণ আমরা শক্তিশালী।’
‘এমনি আপনারা অনেকে আছেন, যারা অনেক জ্ঞানী, অনেক জানেন, তাদের ভালো ভালো পরামর্শগুলো অবশ্যই শোনার চেষ্টা করবো। কেউ যদি আমাকে ভালো কিছু জানাতে চান বা জানাতে পারেন, তাহলে সেটি সাদরে গ্রহণ করবো।’
‘তবে একটা জিনিস বলতে চাই, আপনার কখনোই এমনটা মনে করবেন না, দুই এক জায়গায় দেখছি যে, আমি আসলে খুব একটা এসব দেখি না, ফোকাস করি না। অনেকে আমাকে…! আসলে যেহেতু এখন সোস্যাল মিডিয়ার যুগ, অনেককিছু চাইলেও এড়ানো সম্ভব না। আমার নামের সামনে যেহেতু অনেকে শ্রী শ্রী, সিঁদুর, প্রদীপ মন্দির অনেককিছু দিয়ে দিয়ে অনেককিছু বলছেন, এটাতে আসলে আমরা আমদের ধর্মকে কতটা উপরে নিচ্ছি না নিচে নামচ্ছি, সেটা আমার বোধগম্য না। আশা করি, সবাই আমরা আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবো। তারপরও আবার সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আর চেষ্টা করবো, দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার।’
সাকিব আল হাসান সম্প্রতি কলকাতায় পূজা উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন কিনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তরা এমন বিতর্ক শুরু করলে তিনি লাইভে এসে এভাবেই তুলে ধরেন নিজের অবস্থান।