রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরব থাকায় সমালোচিত মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চি ধীরে ধীরে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ৫ দফা সমাধানসূত্রে হাঁটতে চান। আসেম সম্মেলনে এই ইস্যুতে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের চাপে থাকায় সু চি বলেছেন: রোহিঙ্গা পরিস্থিতির রাতারাতি সমাধান হবে না, তবে ধারাবাহিক অগ্রগতি সম্ভব।
তিনি বলেন: সংকট সমাধানে কফি আনান কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এশিয়া ও ইউরোপের ৫১ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে আসেম সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনেও আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা। এর অন্যতম কারণ সম্মেলনের আয়োজক দেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের উৎস মিয়ানমার।
একই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি সেন মিক্সার। তিনি বলেন: মিয়ানমার ও বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তির পথে অনেকটাই এগিয়েছে। তার আশা, শেষ পর্যন্ত চুক্তি হলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় এবং সম্মানের সাথে সীমান্তের ওপারে ফিরে যেতে পারবেন।
সম্মেলনে যোগ দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ৩ ধাপের সুপারিশ তুলে ধরেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংই। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে, রাখাইনে অস্ত্রবিরতি কার্যকর, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমতার ভিত্তিতে সমাধান অর্জন এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা।
এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারে জাতিগত নিধন চিরতরে বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়াসহ সঙ্কট সমাধানে বিশ্বনেতাদের পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি তার ভাষণে যেসকল রোহিঙ্গা জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত; তাদের দ্রুত নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি, সন্ত্রাসের মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে আহ্বান জানান তিনি।
এ লক্ষ্যে বিশ্বনেতৃত্বের সামনে তিনি পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাব গুলো:
- অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারের জাতিগত নিধন নিঃশর্তে বন্ধ করতে হবে।
- দ্রুত মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের একটি বিশেষ অনুসন্ধানী দল প্রেরণ।
- জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিয়ানমারের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের তত্বাবধায়নে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিশেষ সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা।
- রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গার নিরাপদে ঘর-বাড়িতে প্রত্যাবর্তন এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
- কফি আনান কমিশনের প্রস্তাবনা দ্রুত এবং নিঃশর্ত বাস্তবায়ন করা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।