রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যে কোনো কঠোর পদক্ষেপ থেকে চীন ঢালের মতো রক্ষা করে আসছে বলে পরোক্ষভাবে অভিযোগ তুলেছেন জাতিসংঘে মার্কিন দূত নিকি হেইলি।
নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল দু’সপ্তাহ আগে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে আসে। সেই সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার বৈঠক করে পরিষদের সদস্য দেশগুলো।
ওই বৈঠকেই চীনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন নিকি।
মার্কিন এই কূটনীতিক বৈঠকে সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু একমাত্র চীনই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের কঠোর একটি খসড়া বিবৃতিতে সংশোধন প্রস্তাব দিয়েছিল। গত সপ্তাহে খসড়াটি তৈরি করেছিল ব্রিটেন।
অবশেষে চীনের বাধায় তুলনামূলক দূর্বল একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
নিকি বলেন, ‘পরিষদের কোনো কোনো সদস্য নিজেদের ঘৃণাপূর্ণ ও স্বার্থপর উদ্দেশ্যের কারণে আমাদেরকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাধা দিচ্ছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, সফরের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা যে একতা দেখিয়েছে কেউ কেউ সেটিকে ছোট করছেন। তারা বিবৃতিতে এমন কিছু পরিবর্তন আনতে বলেছেন যা একেবারেই সহায়ক নয়, বরং পরিষদের বার্তাকে দুর্বল করে দিয়েছে।
নিকি হেইলির ঠিক আগেই বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত মা ঝাওশু। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের উচিত মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিকভাবে এই সংকট নিরসনে উৎসাহিত করা, যেন বিষয়টি আরও বেশি দীর্ঘসূত্রী বা জটিল হয়ে না পড়ে।
মিয়ানমার ইস্যুতে সোমবারের বৈঠকে চীনের বক্তব্যকেই রাশিয়া সমর্থন করেছে বলে অন্যান্য কূটনীতিকদের বরাতে জানায় সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনইউচসিআর-এর তথ্য অনুসারে, ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় হাজার খানেকের বেশি রোহিঙ্গা মারা গেছে। যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি, সংখ্যাটি মাত্র ৪শ’।
তবে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্তিয়েরস – এমএসএফ)-এর দাবি, ২৫ আগস্ট সহিংসতা ছড়ানোর পরবর্তী একমাসেই প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল।