জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬৫টি সংগঠন।
মঙ্গলবার দেশজুড়ে কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধেরও দাবি জানায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবি জানান সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা।
দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সংগঠনগুলো একযোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে এ দাবি জানিয়েছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে বেলা আড়াইটার দিকে মানববন্ধন শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, শাহবাগ মোড় ঘুরে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভাস্কর্য একটি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘একটি গোষ্ঠী’ ভাস্কর্যবিরোধী ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিচ্ছে।
এই গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এটি চরম ধৃষ্টতা ও জাতির পিতা, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননা। এই গোষ্ঠীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তারপরও তারা যদি ধৃষ্টতা দেখায়, তবে তাদের এর পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
মানববন্ধন ও সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান। এতে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত হেফাজত-খেলাফতের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক নেতারা ওয়াজের নামে সমাবেশ করে ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান ও তালেবানি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান।
রাজধানীতে নাগরিক সমাজের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বিশিষ্টজনরা বলেন, ভাস্কর্য বিরোধিতার নামে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেশে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এর পিছনে কারা রয়েছে, তা খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন সমাবেশে ভিন্নমতের প্রতি বিষোদগার করা হচ্ছে অভিযোগ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আইনশৃংখলাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ।
ধর্মীয় উস্কানিদাতাদের প্রতিরোধে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটির গঠনের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা অস্বীকারকারীদের শাস্তির জন্য আইন দ্রুত পাশ করার দাবিও জানান বিশিষ্টজনেরা।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য সম্পর্কে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ জানানোর কোনো ভাষা খোঁজে পাচ্ছি না। তারাই এ কাজ করছে যারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বলেছে “বাংলা” ইসলামের ভাষা নয়, ১৯৫৪-এর নির্বাচনের সময় বলেছে যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিলে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। তারাই ১৯৭০-এর নির্বাচনে ইসলামকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে বাংলার মুক্তিকামী মানুষকে ঠেকাতে চেয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে।’
এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মন্ত্রী।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচিতে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, প্রজন্ম একাত্তরের সভাপতি আসিফ মুনীরসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। তবে এমন প্রতিবাদী কর্মসূচি বিজয়ের মাসজুড়ে চলবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।