বাংলাদেশে গরু পাচার করে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে ভারত ও মিয়ানমার, এমন দাবি করে এই দুই দেশ থেকে গরু ও মহিষ আমদানি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন মাংস ব্যবসায়ীরা।
একই সঙ্গে কোরবানির কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করাসহ সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচি রবিউল আলম লিখিত বক্তব্যে বলেন: ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু, মহিষ ও মাংস আমদানি বন্ধ করতে হবে। ভারত-মিয়ানমার গরু পাচার করে প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কৃষকদের কৃষিঋণের মাধ্যমে ১০-২০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে চরাঞ্চলগুলো পশুপালনের আওতায় আনতে পারলে মাংস ও কোরবানি পশুর চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে মাংস, হাড়, শিং, নাড়ী-ভুড়ি, চামড়া রপ্তানি করে ৬০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
ভারত ও মিয়ানমারের পশু পাচার বন্ধ না হলে দেশীয় পশু পালন উন্নয়ন ও সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন: সরকার, শিল্পপতি ব্যবসায়ী, সমাজের প্রতিষ্ঠিতরা জাকাতের অর্থ থেকে গরিব, কৃষক, বিধবা, বেকার যুব সমাজের মাঝে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার বাচ্চা বিতরণ, পশু পালনে উৎসাহিত করা যেতে পারে। তাহলে দেশে ৩০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করা সম্ভব হবে।
রবিউল ইসলাম বলেন: চামড়া শিল্প উন্নয়ন ও রপ্তানির প্রধান প্রতিবন্ধকতা বর্জ্য ও পানি শোধনাগার সিইটিপি পরিপূর্ণ করতে হবে। রপ্তানি সচল না হলে সরকারের শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে চামড়া শিল্পনগরী উন্নয়নের সফলতা পাওয়া যাবে না।
কোরবানির কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: মাংস কাটা ও চামড়া সংগ্রহ বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে বেশি খাজনা নেওয়া হয় অভিযোগ করে রবিউল আলম বলেন: একটি গরু সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসতে ৩ বার হাটে বিক্রি হয়। ৩ বারই খাজনা দিতে হয়। এতে গরুর দাম বেড়ে যায়। এছাড়া নির্ধারিত খাজনার বেশি টাকা নেয় ইজারাদাররা। পথে পথে চাঁদাবাজরা চাঁদা নেয়। এসব বন্ধ করতে হবে। ইজারাদারদের অসাধু কাযক্রম বন্ধ করে সিটি করপোরেশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও স্থানীয় সরকার হাটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পরামর্শ দেন তিনি।
পশুর হাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে এই মাংস ব্যবসায়ী বলেন: কোরবানির পশুর হাটগুলো মাত্র ৩ দিনের জন্য। এই ৩ দিনে জননিরাপত্তার নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গরুর হাটের ইজারাদারের অবৈধ অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। অত্যাচারের শিকার হওয়া, অতিরিক্ত খাজনা দিয়েও বিক্রেতারা বিচারের আশা করেন না। কারণ বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। ইজারাদারকে জবাবদিহির মধ্যে আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মোবাইলকোর্টকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন: গরুর হাটের ইজারাদারদের জবাবদিহি করতে পারে একমাত্র সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ। টাকার বিনিময় হোক বা অন্য কিছুর বিনিময় হোক, গত ৫০ বছরেও একটি গরুর হাটের ইজারাদারকে জবাবদিহিতায় আনা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে মাংস শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ হাতেকলমে দিতে পারলে রফতানিযোগ্য শত শত কোটি টাকার পশুর বর্জ্য রক্ষা করা যাবে। জবাইখানাভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণশালা গঠন করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরর মাধ্যমে কোরবানির কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।