শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। সেদিন চোটে পড়লেন। পরে টানা তিনমাস ফুটবল থেকে দূরে ছিলেন নেইমার। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে নামবেন কিনা সেটি নিয়েও ছিল সংশয়।
ব্রাজিলিয়ান সেনশেসন মাঠে ফিরলেন। দারুণ এক গোলে জানান দিলেন, পায়ে বিন্দুমাত্র মরচে পড়েনি লম্বা বিরতিতে। তাতে ব্রাজিলিয়ানদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্নের পালে জোর হাওয়াই লাগলো।
বিশ্বকাপ জিততে নেইমারকে কতটা দরকার ব্রাজিলের তার প্রমাণ মিলল ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিটেই। এই সময়টাতে পাঁচবারের বিশ্বসেরা দলকে যেন মনে হচ্ছিল তীর খুঁজে ফেরা দিকভ্রান্ত এক দল নাবিকের সমষ্টি। বেশিরভাগ সময়ই ম্যাচের লাগাম থাকল ক্রোয়েটদের হাতে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফার্নানদিনহোকে বদলে নেইমারকে যখন মাঠে পাঠালেন ব্রাজিল কোচ টিটে, তাতে ভোজবাজীর মতো পাল্টে গেল ম্যাচের চেহারাও। দারুণ এক উজ্জীবনী শক্তি ভর করল ব্রাজিলিয়ানদের পায়ে।
নেইমারের ছন্দ খুঁজে পেতে খানিকটা সময় লাগলো বটে, সেটা খুব দীর্ঘও হল না। তিনমাসের লম্বা বিরতি ছিল বলেই হয়ত শুরুতে অস্বস্তিতে ছিলেন নেইমার। সময় যেতে যেতে সেই অস্বস্তি কাটিয়ে স্বরূপে বিশ্বের সর্বোচ্চ দামি ফুটবলার। ৬৯ মিনিটে দেখালেন জাদু। উইলিয়ানের পাসে ক্রোয়েটদের তিন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে দর্শনীয় এক গোলে জাল খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডার কিড। পরের পুরোটা সময় খেললেন দারুণ স্বচ্ছন্দে। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েই যে ফিরেছেন সেটিই যেন বুঝিয়ে দিলেন।
চার বছর আগে বেলো হরিজন্তেতে নিজ দেশে হওয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের এক লজ্জায় ডুবেছিল ব্রাজিল। হুইলচেয়ারে বসে সেই ম্যাচ দেখতে হয়েছিল নেইমারকে। সেলেসাও ভক্তদের জন্য যেটা মোটেও সুখকর কোনো স্মৃতি ছিল না। কলম্বিয়ার হুয়ান জুনিগার ভয়ঙ্কর এক ফাউলে কোয়ার্টার ফাইনালে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ব্রাজিলিয়ানদের ভরসাকে। মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙ্গে।
চারবছর বাদে আরেক বিশ্বকাপ যখন দুয়ারে, নেইমারকে লড়তে হয়েছে আরেকটি চোট থেকে সেরে ওঠার লড়াই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বিশ্বের দামি খেলোয়াড়ের জন্য একরকম প্রত্যাবর্তনই। সঙ্গে ‘আত্মবিশ্বাস’ নামক রসদ অর্জনের ম্যাচ। তাতে পিএসজির হয়ে পাওয়া চোট ফেলে দিলেন পেছনেই। আর সদর্পে জানিয়ে দিলেন তাকে ঘিরে বিশ্বকাপ স্বপ্নের ফানুস ওড়াতে বাধা নেই ব্রাজিলিয়ানদের।