সকলের পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে দেশের কাঁচাবাজারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে ঢাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৯৫ শতাংশই এই কাঁচাবাজারগুলো থেকে তাদের বেশিরভাগ খাবার কিনে থাকে।
এই বছরের শেষের দিকে জাতিসংঘ প্রথমবারের মত খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে, যার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেশের কাঁচাবাজারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিষয়ে আজ একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন, বিসেফ ফাউন্ডেশন, প্রকাশ (ব্রিটিশ কাউন্সিল) এবং বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি সম্মিলিতভাবে এই সংলাপটি আয়োজন করেছিল।
আজকের সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, মো: আব্দুল কাইউম সরকার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা শেখ আজিজুর রহমান; কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাজা আবদুল হান্নান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের চিফ টেকনিকাল অ্যাডভাইজার জন টেলর, ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রকাশ প্রকল্পের টিম লিডার জেরি ফক্স এবং বিসেফ ফাউন্ডেশনের রেজা সিদ্দিকী এ সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের চিফ টেকনিকাল অ্যাডভাইজার জন টেলর বলেন যে সকলের জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে কাঁচাবাজারগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কাঁচাবাজারগুলো খাদ্য নিরাপত্তাহীন সম্প্রদায়ের সদস্যদের খাদ্যাভ্যাসকে উন্নত করতে পারে। যারা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তাদের কাছে সাধারণত পুষ্টিকর খাবার কেনার মত যথেষ্ট টাকা থাকে না, যা তাদের মনস্তাত্বিক বিকাশ, উৎপাদনশীলতা, পারিবারিক জীবন এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাঁচাবাজার শুধুমাত্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের জন্যই নয়, বরং সবার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কেনার একটি অন্যতম উৎস। কারণ এ বাজারগুলো বিভিন্ন ধরণের তাজা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করে থাকে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বাংলাদেশ সরকারকে এই সংলাপগুলো আয়োজনে সহায়তা করছে যার মাধ্যমে খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি তৈরি করতে সুবিধা হবে। নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে এফএও’র ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পটি ঢাকার চারটি সিটি কর্পোরেশন’র কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত নগর কার্যনির্বাহী গ্রুপের সভার আয়োজন করে। এই সভাগুলোর আলোচনার ভিত্তিতেই আজকের সংলাপের বিষয়গুলো নির্বাচন করা হয়েছে।
দেশের কাঁচাবাজারের পরিবেশকে স্বাস্থ্যকর করে তোলার জন্য বাজারের অবকাঠামোগত উন্নতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আজকের সংলাপটি বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সম্ভাব্য সমাধান নির্ধারণে সহায়তা করবে।
এই সংলাপে যে বিষগুলো ছিল
বাজার ব্যবস্থা, সরবরাহ শৃঙ্খল (সাপ্লাই চেইন) এবং নগর-পল্লী সংযোগ
ভবিষ্যতের খাদ্য ব্যবস্থায় বাজারের ভূমিকা (স্মার্ট মার্কেটস)
নিরাপদ খাদ্য এবং বাজারের কার্যকর ব্যবস্থাপনা
ভোক্তাদের আচরণ ও চাহিদা এবং বাজারের ভবিষ্যতের ওপর তাদের প্রভাব
বাজার প্রশাসন এবং অবকাঠামো
খাদ্য ব্যবস্থার প্রয়োজন কেন?
‘খাদ্য ব্যবস্থা’ শব্দটি খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন এবং খাদ্য গ্রহণে জড়িত সমস্ত কার্যক্রমকে বোঝায়। খাদ্য ব্যবস্থা মানুষের অস্তিত্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্পর্শ করে। আমাদের খাদ্য ব্যবস্থার পরিস্থিতি আমাদের জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি আমাদের পরিবেশ, আমাদের অর্থনীতি এবং আমাদের সংস্কৃতির ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। সঠিকভাবে কাজ করলে আমাদের খাদ্য ব্যবস্থাগুলো পরিবার, সম্প্রদায় এবং জাতি হিসেবে আমাদের একত্রিত করার ক্ষমতা রাখে। তবে বিশ্বের অনেকগুলি খাদ্য ব্যবস্থা এই মুহূর্তে ভঙ্গুর এবং ধসে পড়ার ঝুঁকিতে আছে, কারণ বিশ্বজুড়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষ সরাসরি করোনা মহামারি সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। যখন আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়, তখন তা আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির পাশাপাশি মানবাধিকার, শান্তি এবং সুরক্ষার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, যারা ইতোমধ্যে দরিদ্র, তাঁরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন।