বাংলাদেশ কেমন রাষ্ট্র? এ প্রশ্নের উত্তর নিজের বুদ্ধি-বিবেচনার শক্তিতে দিতে পারবেন? জানি অনেকে পারবেন না।আমাদেরকে গড়ে তোলা হয়েছে এভাবেই। নিজেকেই আমরা চিনিনা। নিজের উপর, নিজেদের উপর আমাদের ভরসা নেই।সব ভরসা আমাদের অন্যের উপর! বিদেশিরা বলে বাংলাদেশ ভালো, আমরা বলি ভালো; বিদেশিরা বলে বাংলাদেশ খারাপ, আমরা বলি খারাপ।আর এই সার্টিফিকেট যদি দেয় সাদা চামড়ার লোকজন, তাহলে তো আমরা অমৃত বাদ দিয়ে বিষপান করতেও দ্বিধা করিনা।নিজ দেশের অমৃত বাদ দিয়ে বিদেশের বিষে মজা পেয়ে আমরা অভ্যস্ত। আমাদের মনস্তত্ত্বে দাসত্ব এখনো প্রবল। সম্মতি উৎপাদনের মেশিন পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো আমদেরকে এভাবেই তৈরি করেছে।
আমাদের পরিচয়, উপস্থাপন নির্ভর করে বিদেশিদের উপর। ইহুদি-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টিলিজেন্স বলে, এদেশে ‘আইএস’আছে। আক্ষরিক অনুবাদ করতে পারঙ্গম আমাদের মিডিয়াও কাল বিলম্ব না করে আত্মঘাতী সেসব সংবাদ অবিরাম প্রচার করে।বিশ্বব্যাংক বলে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে, বিবিসি, এপি এবং তাদের দেশীয় দোসররা সেগুলো মহা ধুমধামে প্রচার করে। আমরাও বিশ্বাস করে সে নিউজ শেয়ারের পর শেয়ার করি। যদিও পরে যখন বিশ্বব্যাংকের দাবি বিদেশের আদালতে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়, তখন আমরা গিরগিটির মত রঙ বদলাই।
বাংলাদেশে নাকি স্বৈরশাসন চলছে! এমনইএকটি প্রতিবেদন আমরা দেখেছি বিবিসি ও অন্যান্য কিছু গণমাধ্যমে। জার্মানির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বারটেলসম্যান স্টিফটুং এর ট্রান্সফরম্যাশন ইনডেক্স রিপোর্ট এর বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো নিজেদের খবর পরিবেশন করেছে। কিছু সংবাদমাধ্যম জার্মানির এই প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে এমন ভাবে সংবাদ পরিবেশন করেছে যাতে মনে হয় বাংলাদেশের বর্তমান সরকার স্বৈরশাসক! রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ মাধ্যমগুলো টিআই রিপোর্টের ভেতরে প্রবেশ না করেই শুধুমাত্র পছন্দমত জায়গা থেকে অনুবাদ করেছে, বিস্তারিত রিপোর্ট পড়েনি অথবা পড়লেও এড়িয়ে গেছে।
বারটেলসম্যান স্টিফটুং ১২৯টি দেশের উপর ‘গবেষণা করে’ বলেছে, ৪০টি রাষ্ট্র গত দুই বছরে আইনের শাসন সংকুচিত করেছে, অন্যদিকে ৫০টি দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৭২টি দেশে উন্নয়নশীলতা থাকলেও চরম মাত্রার দারিদ্র এবং সামাজিক বৈষম্য রয়েছে।এদের মধ্যে ভারত, সাউথ আফ্রিকা এবং ভেনেজুয়েলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত দশ বছরে এসব দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতি নিম্নমুখী।বর্তমান বিশ্বে ৩.৩ বিলিয়ন মানুষ স্বৈরশাসন এবং ৪.২ বিলিয়ন মানুষ গণতন্ত্রের অধীনে আছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।বার্কিনাফাসো এবং শ্রীলঙ্কার প্রশংসা করে বলা হয়েছে, গবেষণায় গৃহীত সময়ের ভেতরে এই দুই দেশ ‘গণতন্ত্রের পথে’ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।অন্যদিকে, মোজাম্বিক, তুরস্ক এবং ইয়েমেনসহ ১৩টি দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত বাজে অবস্থায় উপনীত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই ১৩টি দেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশকে। বলা হয়েছে, ‘Bangladesh, Lebanon, Mozambique, Nicaragua and Uganda, where democracy has been gradually undermined for years, are under autocratic rule. It was often shortcomings in the quality of elections that tipped balance’.
নিজের বুকে হাত দিয়ে বলুন, নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করে উত্তর দিন।দেশে কি স্বৈরশাসন চলছে? কিসের ভিত্তিতে বলছেন, আপনি এই বাংলাদেশে স্বৈরশাসন চলছে? আজ ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের পাশাপাশি পবিত্র ভূমি জাজিরাতুল আরবের অনাকাঙ্ক্ষিত একনায়ক, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসর সউদ পরিবার ইয়েমেনে আগ্রাসন চালিয়ে হাজার হাজার নিরীহ মুসলিম হত্যা করছে। ইয়েমেনে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। সেই ইয়েমেনের সাথে বাংলাদেশের তুলনা কীভাবে করে জার্মান প্রতিষ্ঠানটি? ইয়েমেনে যদি স্বৈরশাসন চলে, তাহলে সৌদি আরবে কী চলছে? সৌদি আরবে গণতন্ত্র চলছে? কবে থেকে? কিংবা জর্ডানে কি গণতন্ত্র চলছে?
শুধুমাত্র ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশ নেয়নি বলেই বর্তমান সরকারকে স্বৈরশাসক বলা যায়? বিএনপি-জামায়াত জোট এবং এদের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সুহৃদদের মূল আপত্তি ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে।জার্মান প্রতিষ্ঠানটির রিপোর্টে পর্যন্ত বলা হয়েছে (এখানে ইংরেজিতে উল্লেখ করা হয়নি), বারবার বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলা হলেও বিএনপি অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। ফলে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। জামাতের গোঁয়ার্তুমিতে হার মেনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপির জামাতিকরণের প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতেই এক শ্রেণীর সুশীল নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে সাফাই গায়। কিন্তু সেই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে বিএনপি বিরাট ভুল করেছে সেটি বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীরা হরহামেশাই বলে। সামনের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটকে বিজয়ী করার মত যৌক্তিক কোনো কারণ দেশবাসীর সামনে নেই। তাই বর্তমান সরকারকে স্বৈরশাসক প্রমাণ করার জন্য তাদের স্থানীয় এবং বিদেশি থিংকট্যাঙ্করা উঠে পড়ে লেগেছে।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ইতিহাসের অন্যতম সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। শুরুতেই সরকারকে পঙ্গু করে দেয়ার প্রচেষ্টায় বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়ে মেধাবী সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে দেশে গৃহযুদ্ধ লাগানোর অপপ্রয়াস চালানো হয়। সেই সংকট কাটিয়ে উঠে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কার হয়েছে, এখনো চলছে।দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশাল অগ্রগতি বাংলাদেশের। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও আমলার দুর্নীতি-অনিয়ম সত্ত্বেও বাংলাদেশ ক্রমশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ধাবিত হয়েছে।এমনকি সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসে হরতাল-অবরোধের মত ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীর মৃত্যু হয়েছে। ২০১৩-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে প্রশাসন এবং জনগণ মরিয়া হয়ে সে সন্ত্রাস প্রতিরোধ করে। বিএনপি-জামায়াত এখন হরতাল ডাকলে হরতাল হয় না। এটা কি স্বৈরতন্ত্রের নমুনা? জনগণকে এর জবাব জানতে হবে। বিদেশিদের কথায় নাচলে হবে না।
পুরো রিপোর্টটি পড়ে একে দ্বিচারিতাপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। একদিকে বলছে বাংলাদেশে স্বৈরশাসন চলছে, আবার রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়েছে। টিআই রিপোর্টে প্রতিটি দেশের একটি এক্সিকিউটিভ সামারি সন্নিবেশিত আছে। সেখানে গবেষণার জন্য বাছাইকৃত সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে-‘The period under review was plagued with political violence, extra judicial killings and violence perpetrated by the Islamists. The Bangladesh Nationalist Party (BNP) resorted to massive violence across the country. Out of 197 people killed in political violence in 2015, 72 people were burnt alive in arson attacks by the supporters of the main opposition party. After 92 days of boycotts and protests (so-called hartal) the opposition slackened the protest due to lack of popular support and rising anger against violence which was becoming counterproductive’.
উপরের ইংরেজিটুকু বাংলা আপনারাই করে নিন। পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের সমান অংশগ্রহণ থাকলেও রিপোর্টে জামায়াতকে অভিযুক্ত করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, ‘The government has filed numerous cases against the leaders of the BNP and arrested several leaders of the JamaatIslami. The main opposition leader Begum Khaleda Zia is facing numerous corruption cases’. জামায়াতকে এখানে দুর্নাম মুক্ত করা হয়েছে। আবার পরের একটি বাক্যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশে ‘অকার্যকর গণতন্ত্রের’ জন্য দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘The rivalry between the two leaders is often at the root of dysfunctional democracy in Bangladesh.’ The rivalry between the two leaders is often at the root of dysfunctional democracy in Bangladesh. বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঠিক এমন কথাই বলত তৎকালীন সরকার এবং তাদের অনুগত কিছু সংবাদমাধ্যম।শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিদায় করে দেয়ার সেই রাজনীতি এবং সরকারি প্রচেষ্টাকে আমরা ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা নামে আমরা জানি।
টিআই রিপোর্টে জঙ্গিদেরকে ইসলাম-পন্থী বলে বর্ণনা করা হয়েছে।অথচ জঙ্গিবাদের সাথে পবিত্র ধর্ম ইসলামের দূরতম সম্পর্ক নেই।বাংলাদেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মুসলমান।একজন জঙ্গিকে ইসলামিস্ট বললে পুরো মুসলমান সম্প্রদায়কেই বলা হয়।মুসলমানদেরকে দানব আকারে তুলে ধরার যে প্রয়াস বিশ্বব্যাপী চলছে তারই প্রতিফলন এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি।বাংলাদেশে আইএস এবং আল-কায়েদার ঘাঁটি আছে সেটি প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে রিপোর্টে। সাধারণীকরণ করে বলা হয়েছ, পুলিশ জঙ্গি হামলার পেছনে জড়িতদের বের করতে পারেনি।অথচ আমরা দেখেছি, অনেকগুলো হামলায় পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করেছে।একের পর এক জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করেছে।হামলার আগেই অনেক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে।গুলশানের হলি আর্টিজানের হামলাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে বলা হয়েছে, ‘The Gulshan café attack drove home that problem of radicalism is not confined to poor and madrassa educated citizens, but has reached the rich and educated’. জঙ্গি হামলাগুলোকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে দেশের সব মাদ্রাসা-শিক্ষিত নাগরিককে গরীব এবং উগ্রবাদী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে, গুলশানের ঘটনার পরে এটা প্রমাণিত যে, ‘বাংলাদেশের শিক্ষিত এবং বিত্তবান সমাজের মানুষের মধ্যেও জঙ্গিবাদ প্রবেশ করেছে’।
বাংলাদেশে আইএস এবং আল-কায়েদা আছে এটা প্রমাণ করার জোর চেষ্টা করা হয়েছে রিপোর্টে। বাংলাদেশে আইএস বা আল-কায়েদা থাকলে আমাদের যতই অসুবিধা হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মত সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিগুলোর আগ্রাসন চালানোর রাস্তা তৈরি হয়।বিবিসি এবং অন্যান্য পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এখন আর আল-কায়েদার সংবাদ দেয়না।আল-কায়েদার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, এরপর থেকে চলছে আইএস এর নাম ব্যবহার।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের নতুন কৌশল হিসেবে আইএস নামের অনলাইন নেটওয়ার্কের জন্মদিয়েছে।খুব কঠিন ও সুগভীর সে ষড়যন্ত্র।
আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত বুশ পরিবারের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। আল-কায়েদা কনসেপ্ট কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান, ইরাক দখল করা হয়ে গেছে।মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অবস্থান আরও সুসংহত করার জন্য বিরোধী শক্তিগুলোকে ধ্বংস করার নীল নকশায় বহুদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল।আল-কায়েদা কনসেপ্ট এর বদলে নিয়ে আসা হয়েছে ‘আইএস’ কনসেপ্ট।এই আইএস যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ‘ব্রেইন চাইল্ড’ সে বিষয়ে আমরা একেবারেই সচেতন নই।
বাংলাদেশের অন্যতম সুহৃদ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, আইএসকে সৃষ্টি করেছে মোসাদ এবং সিআইএ।হারেৎজ পত্রিকার ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর এর এক প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, ফিদেল ক্যাস্ট্রো ২০১৪ সালে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনিয়ন্ত্রিত অংশ নিয়ন্ত্রণ করার খায়েশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জন ম্যাককেইনএর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সিআইএ এবং মোসাদ মিলে ‘আইএস’ সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাজ্যের দি ডেইলি স্টার পত্রিকার এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আইএস এর প্রধান নেতা তথাকথিত ‘আবু বকর আল বাগদাদি’ মূলত একজন মোসাদ এজেন্ট। মার্কিন গোয়েন্দা তৎপরতার ভিত কাঁপিয়ে দেয়া বিদ্রোহী কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন এমন কিছু ডকুমেন্ট ফাঁস করে দিয়েছিলেন, যেগুলো প্রমাণ করে আইএস প্রধান একজন ইসরায়েলি এজেন্ট, যার আসল নাম সিমন এলিয়ট। আইএস আজ পর্যন্ত ইসরায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো আক্রমণ পরিচালনা করেনি।ঢাকার গুলশান বা উত্তরবঙ্গে বিদেশি হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস বিবৃতি পাঠিয়েছিল ওয়াশিংটনে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপে।সে বিবৃতি না বুঝেই অবিরাম প্রচার করেছে আমাদের দেশীয় গণমাধ্যমগুলো।বাংলাদেশে আইএস বা আল-কায়েদা আছে মর্মে জার্মানির প্রতিষ্ঠানটির রিপোর্ট তাই সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই আমরা ধরে নিতে পারি।
একদিকে বাংলাদেশকে ‘ব্যর্থ’ বলার প্রয়াস, অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা।বলা হয়েছে, ‘The economy performed well with growth rate projected at 7.11%. GDP per capita was $972.88. Manufacturing was the highest contributor to GDP which stood at BDT 18 billion followed by agriculture, transport and service industries. Trade deficit stood at $6.27 billion, down from $6.96 billion in 2014 to 2015 due to an increase in exports.’
এদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে জার্মান প্রতিষ্ঠানটি রিপোর্টে মৌলবাদের রাজনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং তার দল বিএনপিকে দোষারোপ করেছে।রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘The military coup of August 1975 and the assassination of Mujibur Rahman resulted in a radical shift at both domestic and international levels. The BNP engineered constitutional changes replacing Bengali nationalism with Bangladeshi nationalism, which emphasized the Muslim identity of its citizen and removed secularism from the constitution. A ban on religious political parties was lifted and General Ziaur Rahman co-opted them to expand his support base.’
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পরে আরেক সামরিক শাসক হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের আমল, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান, বিএনপি-জামায়াত, পরবর্তী আওয়ামী লীগ, পরবর্তীতে আবার বিএনপি-জামায়াত এবং বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল সম্পর্কে বর্ণনা আছে সে প্রতিবেদনে।২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘The AL, soon after assuming power armed with Supreme Court’s decision restored many provisions of the 1972 secular constitution. However, its decision to amend the Care Taker Government (CTG)’s role in overseeing elections was very contentious and engendered a political crisis’.
দ্বিচারিতাপূর্ণ প্রতিবেদনে যে অংশে বাংলাদেশকে স্বৈরতান্ত্রিক বলা হয়েছে, শুধু সেটুকুই পিক করেছে বিবিসি এবং তাদের স্থানীয় দোসর মাধ্যমগুলো। যে অংশে বর্তমান সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে, সে অংশটি সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।গত ১/১১ এর সময় দেশের দুটি প্রধান দৈনিক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ প্রমাণ করার জন্য ফরমায়েশি রিপোর্ট প্রকাশ করত। একটির সম্পাদক নিজেই গণমাধ্যমে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। মূলত স্বাধীনতা ও গণরাজনীতিবিরোধী স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তি বর্তমান সরকারকে যে কোনো মূল্যে বিতাড়িত করতে চায়। জার্মান প্রতিষ্ঠানের এই প্রতিবেদন তারই একটি প্রকাশ মাত্র। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে বিএনপি–জামায়াত জোটের সম্পর্ক কতখানি গভীর সেটি আমরা সর্বশেষ খালেদা জিয়ার এক ইহুদি আইনজীবী ভাড়া করার মাধ্যমেই অনুধাবন করতে পারি।জনগণের কাছে একটি অনুরোধ থাকবে, নিজের চারপাশের পরিবর্তনকে নিজের চোখ দিয়ে দেখুন। বিদেশিদের মিষ্টি কথায় ভুললে চলবে না। নিজের বুদ্ধি-বিবেকের উপর নির্ভর করুন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)।