মাত্র একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না, এমন প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দেশজুড়ে কমাতে নতুন একটি বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই চলতি বছরের মধ্যেই অপচনশীল একবার ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে। ২০২২ সালের মধ্যে এসব ব্যাগ নিষিদ্ধ হবে বাদবাকি শহর এবং মফস্বল এলাকাতেও।
চীনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন রোববার প্লাস্টিক সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা প্রকাশ করে জানায়, আগামী পাঁচ বছর ধরে নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সব শহর ও মফস্বল এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও তাজা পণ্য বিক্রয়কারী বাজারগুলোকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হবে।
০.০২৫ মিলিমিটারের চেয়ে পাতলা প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন এবং বিক্রিও নিষিদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
চীনের রেস্টুরেন্ট শিল্পেও ২০২০ সালের মধ্যে সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। রেস্টুরেন্ট খাত সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই ব্যবসায় সব ধরনের সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক সরঞ্জাম ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমাতে হবে।
এছাড়া হোটেলগুলোকে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে অতিথিসহ সবাইকে বহু ব্যবহারের অযোগ্য প্লাস্টিকের জিনিস বিনামূল্যে দেয়া বন্ধ করতে হবে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহারকারী দেশগুলোর একটি চীন। দেশের ১৪০ কোটি জনগণের ব্যবহার করে ফেলে দেয়া বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য সামলাতে বহু বছর ধরে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার।
চীনের আবর্জনা স্তুপ করার সবচেয়ে বড় ডাম্পটি প্রায় ১০০টি ফুটবল মাঠের সমান। সেটাও ইতোমধ্যে ভরে গেছে। অথচ ডাম্পটি আরও ২৫ বছর ব্যবহার করার কথা ছিল।
শুধু ২০১৭ সালেই চীন শহরাঞ্চলের আবাসিক এলাকাগুলো থেকে ফেলে দেয়া সাড়ে ২১ কোটি টন আবর্জনা সংগ্রহ করেছে। সেগুলোর কতটুকু রিসাইক্যাল বা পুনর্ব্যবহার যোগ্য করা সম্ভব হয়েছে সে তথ্য পাওয়া যায়নি।
সময়ের সঙ্গে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে এই প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন সাময়িকী ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’র গবেষণা অনুসারে, ২০১০ সালে এই বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি টন। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৮০ লাখ টন।
২০১৮ সালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছিল, প্লাস্টিক ব্যবহারের যে বৈশ্বিক চিত্র বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তেমনটা ২০২৫ সাল নাগাদ হতে পারে বলে আগে ধারণা করা হয়েছিল।
পরিস্থিতি সামলাতে তাই চীনের নতুন এই পদক্ষেপ।
অবশ্য প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে এটাই চীনের প্রথম প্রচেষ্টা নয়। এর আগে ২০০৮ সালে দেশটি খুচরা বিক্রেতাদের পণ্য বিক্রির সময় ক্রেতাদেরকে বিনামূল্যে প্লাস্টিক ব্যাগ দেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। অতিরিক্ত পাতলা প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদনও তখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানিতে কোনো এককালে শীর্ষে থাকা চীন ২০১৭ সালে ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা আর বিদেশি প্লাস্টিক বর্জ্য কিনবে না।