ফলমূল, শাকসবজি ও মাছ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ব্যবহার হচ্ছে ফরমালিন। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এক জরিপে দেখা গেছে, বেশি ফলনের আশায় জমিতে কীটনাশক এবং খাবার সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের হার ১০ থেকে ১২ বছরে বেড়েছে ৩২৮ শতাংশ।
ফলমূল, শাকসবজি বা খাদ্যপণ্য থেকে ফরমালিন দূর করতে লাইফ অ্যান্ড হেল্থ- লিমিটেড বাজারে এনেছে কার্বন গ্রিন নামের একটি পাউডার জাতীয় পণ্য। এই পাউডার পানিতে গুলিয়ে খাদ্য সামগ্রী ধুয়ে ফেললে ফরমালিন মুক্ত হবে।
শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানিয়েছে লাইফ অ্যান্ড হেলথ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. শক্তি রঞ্জন পাল।
তিনি বলেন, ফলমূল ও শাক-সবজিতে আর কীটনাশক ও ফরমালিনের ভয় নেই। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা নিয়ে এসেছি কার্বন গ্রিন যা ফলমূল ও শাক-সবজির উপরিভাগে লেগে থাকা কীটনাশক ও ফরমালিনের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মুক্ত করে খাবার করবে নিরাপদ। লবণ-পানি, ভিনেগার কিংবা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ব্যবহারে ফলমূল ও শাক-সবজি ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কীটনাশক ও ফরমালিন মুক্ত হয়- যা খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়।
১৮০ মিলিয়ন বাংলাদেশির খাদ্য নিশ্চিত করতে উচ্চ ফলনের দরকার – উল্লেখ করে ডা. শক্তি বলেন, বেশি ফলনের জন্য খাদ্য-শস্যে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। তবে দিন দিন কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা বাড়ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ১০ থেকে ১২ বছরে বাংলাদেশের কৃষি-পণ্যে কীটনাশকের ব্যবহার ৩২৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত কীটনাশকগুলোর মধ্যে অর্গানোফসফেট (প্যারাথিওন, ম্যালাথিয়ন, ডায়াজিনন), কার্বামেটস (এলডিকার্ব, কার্বোফুরান), পাইরিথ্রয়ডস (এলাথ্রিন, রেসমেথ্রিন, পারমেথ্রিন, সাইফ্লথ্রিন) এবং অর্গানোক্লোরাইডস (ডিডিটি, এলড্রিন) বেশি ব্যবহৃত হয়। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি, ফসল ভেদে কখনো কখনো সহনশীল মাত্রার চেয়ে ৫ থেকে ৩১ গুণ বেশি কীটনাশক এবং কীটনাশক জাতীয় পদার্থের অস্তিত্ব পেয়েছে।’
ডা. শক্তি বলেন, কীটনাশক ও ফরমালিনযুক্ত ফল ও শাক-সবজি জনস্বাস্থের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর প্রভাবে ক্যান্সার, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, গর্ভপাত, এন্ডোমেট্রিওসিস, জন্মগত ত্রুটি, অটিজম, আলঝেইমার রোগ, পারকিন্সন্স ডিজিজ সহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। অর্গানোফসফেট-এর কারণে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা হয়। কার্বামেটস ও পাইরিথ্রয়ডস শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার হওয়ার কারণ। কীটনাশকের ব্যাপারে সামাজিক ও জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে আমরা একটি রোগগ্রস্ত জাতিতে পরিণত হচ্ছি।
তাই সামাজিক প্রচারণা ও গণসংযোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং যেসব সংস্থা স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচারণা এবং রোগ প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে চায় লাইফ অ্যান্ড হেল্থ- লিমিটেড। এমনটাই জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা নিরাপদ ও কম খরচে কীটনাশক এবং ফরমালিন দূষণের প্রতিকার হিসেবে নিয়ে এসেছি- কার্বন গ্রিন ।
কার্বন গ্রিন-এর কার্যকারিতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, সোডিয়াম বাই কার্বনেট এবং অত্যন্ত সক্রিয় কার্বনের সঠিক অনুপাতের সংমিশ্রণে কার্বন গ্রিন তৈরি হয়।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ‘এস.জি.এস.’, ‘এন.আই.এফ.’ এবং ‘ও.এম.আই.সি.’ এর পরীক্ষাগারে কীটনাশক যুক্ত খাদ্যদ্রব্য ও শাক-সবজিতে নির্দিষ্ট মাত্রায় কার্বন গ্রিন প্রয়োগে খাদ্যদ্রব্য ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত বিষমুক্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত কার্বন গ্রিন “বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)” দ্বারা পরীক্ষিত এবং ‘বি.এস.টি.আই.’ অনুমোদিত। এটি এখন দেশের সুপার শপ, ফার্মেসী ও খুচরা দোকানে পাওয়া যাচেছ।
বর্তমানে লাইফ এন্ড হেল্থ বাংলাদেশে কার্বন গ্রিন-এর ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করছে। কার্বন গ্রিন মূলত এক ধরনের পাউডার। যা ফলমূল ও শাকসবজি উপরিভাগে লেগে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মুক্ত করতে পারে।
কার্বন গ্রিন ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানানো হয়, ৮ গ্রামের এক প্যাকেট কার্বন গ্রিন পাউডার প্রথমে ১০ লিটার পানিতে গুলিয়ে নিতে হবে। এরপর এই পানি দিয়ে ১০ কেজি শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ ধোয়া যাবে। তবে খাদ্যদ্রব্যের ভেতরে প্রবেশ করা বিষাক্ত রাসায়নিক এতে দূর হবে না। কেবল বাইরের খোসায় লেগে থাকা অংশ পরিষ্কার করা যাবে। কার্বন গ্রিন দিয়ে পরিষ্কার করা খাবার দুই -তিন দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে।
ফলমূল ও শাক-সবজিতে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ও ফরমালিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান লাইফ অ্যান্ড হেল্থ লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নীলাঞ্জন সেন।
তিনি বলেন, আমরা যদি কার্বন গ্রিন দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে ফলমূল, শাক-সবজি পরিস্কার করি তাহলে এসব খেতে আর আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খোলা বাজার থেকে ফরমালিন ও কীটনাশকযুক্ত ফলমূল কিনলে আমরা দেখি অনেক ক্ষেত্রেই তাতে দীর্ঘদিনেও পঁচন ধরে না। কিন্তু কার্বন গ্রিন ব্যবহার করলে ওই একই ফল তিন থেকে চার দিনে পঁচে যাবে। এতে প্রমাণিত হয় যে কার্বন গ্রিন কাজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ডা. এনামুল হক, ফয়সাল আনোয়ার, রাসেল মাহমুদ খান, সামসুল আরেফিন সহ লাইফ অ্যান্ড হেল্থ লি. এর অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।