সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে মার্সিডিজ-বেনজ, হোন্ডা, ভলভো আর টেসলা’র মতো বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি গাড়িতে রাডার জাতীয় প্রযুক্তি যোগ করে সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। অথচ বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ক্যাডিলাক ৫০’র দশকেই তাদের গাড়িতে রাডার যোগ করেছিলো, যা অনেকেই এতোদিন জানতো না!
সাম্প্রতিক সময়ে গাড়িতে যে রাডার প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হচ্ছে তা সংঘর্ষের আগেই চালককে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে পারবে। এখনকার সময়ের জন্যই সেটা একটা চমকপ্রদ ব্যাপার। তাহলে ৫০’র দশকে ক্যাডিলাকের রাডার প্রযুক্তি সময়ের চেয়ে কতোটা অগ্রসর ছিলো তা শুধু অনুমানই করা যায়।
ক্যাডিলাক তার ওই প্রজেক্টের নাম দিয়েছিলো ‘সাইক্লোন’। ১৯৫৯ সালে ওই প্রজেক্টের অধীনে কোম্পানিটি একটি গাড়ি তৈরি করে যাতে একটি বিশেষ ধরণের রাডার যুক্ত ছিলো। গাড়িটিও ছিলো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী থেকে উঠে আসা ভবিষ্যতের উড়াল-গাড়ির মতো দেখতে! সামনে দু’পাশে রকেটের মতো চোখা দু’টো নাক। পেছনেও রকেটের জেটের মতোই দেখতে – যেন স্টার্ট দিলেই আগুন বেরুবে সেখান দিয়ে!
রাডারের সঙ্গে যুক্ত দু’টি ডিভাইস সামনের চোখা নাক দু’টোর ভেতর বসানো থাকতো। প্রযুক্তিটি সামনের পুরো রাস্তা স্ক্যান করে গাড়ির সামনে অনতিদূরে কোনো বাধা থাকলে তা বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে চালককে জানিয়ে দিতো।
অবশ্য আজকাল ক্যাডিলাকের ওই প্রযুক্তির উন্নততর সংস্করণ তৈরি করছে গাড়ি কোম্পানিগুলো। আসন্ন ‘২০১৬ হোন্ডা সিভিক’ মডেলের গাড়িতে রাডার প্রযুক্তিটি গাড়ির ব্রেকের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, যে ব্যবস্থা সাইক্লোনে ছিলো না। ফলে সাইক্লোন মডেলের গাড়িটি চালককে শুধু আসন্ন বাধা সম্পর্কে সতর্ক করতে পারতো; নিজ থেকে গাড়ি থামিয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে পারতো না। সেটা ছিলো চালকের কাজ।
তারপরও অস্বীকার করার উপায় নেই, ক্যাডিলাকের ‘সাইক্লোন’ ছিলো তখনকার সময়ের জন্য সত্যিই উন্নত এবং অগ্রসর প্রযুক্তি। রাডার এবং ভিন্নরকম চেহারা ছাড়াও এতে ছিলো প্লেক্সিগ্লাসের গোলাকার ছাদ, যা সুইচ টিপলে ঢাকনার মতো খুলে যেতো – অনেকটা টেসলা’র আধুনিক ‘মডেল এক্স’ গাড়ির মতো।
শুধু তাই নয়, গাড়ির দরোজাগুলোও উন্নত বল-বেয়ারিংয়ের ওপর দিয়ে ধাক্কা দিয়ে মসৃণভাবে পেছনে সরিয়ে খোলা যেতো। গাড়ির ভেতরের অংশ বাইরের পরিবেশ থেকে এতোটাই বিচ্ছিন্ন এবং সুরক্ষিত ছিলো যে, আরোহী দু’জন যেনো গাড়ির বাইরে থাকা কারো সঙ্গে কথা বলতে পারে সেজন্য এতে ইন্টারকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো!
অবশ্য সুরক্ষিত না রেখে উপায়ও ছিলো না। নইলে ৩২৫ হর্সপাওয়ারের শক্তিশালী ইঞ্জিন আর ভিন্নরকম ডিজাইনের ফলে ধোঁয়া বেরুতো গাড়ির সামনের অংশ দিয়ে। তবে ডিজাইনে যতো দোষ-ত্রুটিই থাকুক না কেনো, সাইক্লোন যে তার সময়ের চেয়ে কমপক্ষে ৬০ বছর এগিয়ে ছিলো তাতে কোনো সন্দেহ নেই।