যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনিয়মের যে অভিযোগ ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছেন, তা ভিত্তিহীন এবং তার এ অভিযোগের ফলে গণতন্ত্রের প্রতি মার্কিন জনগণের বিশ্বাসে আঘাত বলে জানিয়েছে ইউরোপ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ( ওএসসিই)।
পর্যবেক্ষক সংস্থা ওএসসিই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আইনী অনিশ্চয়তা এবং লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক এবং সুসংহত হয়েছে।’
বিভিন্ন অভিযোগ সত্ত্বেও ওএসসিই বলেছে, ‘নির্বাচনের জালিয়াতির বিষয়ে দেরিতে আইনী চ্যালেঞ্জ এবং অভিযোগের প্রয়োজনীয় প্রমাণের অভাবে এ ধরণের দাবি নির্বাচন কর্মকর্তা ও ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।”
ট্রাম্পের ভোটে অনিয়মের অভিযোগেরও সমালোচনা করে বলা হয়, ‘নির্বাচনের রাতে প্রেসিডেন্ট দ্বারা নির্বাচনে নিয়মতান্ত্রিক ঘাটতির ভিত্তিহীন অভিযোগ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর জনসাধারণের আস্থা ক্ষতি করেছে।
পোস্টাল ভোটদান ব্যবস্থার সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করে ওএসসিই এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশজুড়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন ভোটদানের ক্ষেত্রে তা প্রশংসনীয়।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে ওএসসিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য ১০২ জন পর্যবেক্ষকের একটি দল প্রেরণ করেছিল। এটি নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে একটি চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রকাশ করবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফলাফল এখনও ঝুলে আছে হাতে গোনা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে জয়-পরাজয়ে। এখন পর্যন্ত ভোটগণনা শেষ হয়নি সেসব অঙ্গরাজ্যে। তার মধ্যে অন্তত চারটিতে ভোটগণনা বন্ধে আদালতে মামলা করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শেষ খবর পর্যন্ত ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৩টির ফলাফলে বাইডেন জিতেছেন ২৪৩টি ইলেকটোরাল ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি।
জিততে হলে একজন প্রার্থীকে মোট ইলেকটোরাল ভোট ৫৩৮টির মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হবে।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উইসকনসিন, পেনসিলভিনিয়া, মিশিগান এবং জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোটগণনা বন্ধের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।
এরমধ্যে মিশিগানে জয় পেয়েছেন জো বাইডেন। উইসকনসিনেও বাইডেনের জয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। আর পেনসিলভিনিয়ার ভোট এখনও গণনা পর্যায়ে রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে এই চারটি অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফল নিজেদের দিকে নিতে আইনি লড়াই শুরু করে দিলো ট্রাম্প শিবির।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর আভাস ট্রাম্প আইনি লড়াইয়ে গেলে তা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি রয়েছে বাইডেন শিবিরও।এরই মধ্যে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ের জন্য ব্যপকভাবে অর্থ সংগ্রহ করছে ট্রাম্প শিবির।
নির্বাচনের পরের দিনই ট্রাম্প শিবির প্রচুর পরিমাণে তহবিল সংগ্রহ করতে শুরু করে। গত কয়েকমাস ধরে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়ে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মধ্যরাত থেকে সমর্থকদের কাছে অর্থের জন্য ছয়টি ইমেল প্রেরণ করেছে ট্রাম্প শিবির। প্রতিটি অনুরোধে ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচন ‘চুরি’ করার চেষ্টা করছে এমন দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে নির্বাচনের কারচুপি নিয়ে কোনো প্রমাণ তুলে ধরা হয়নি।