জোনাকি পোকা বা ফায়ারফ্লাইরা ব্যাপক সংকটে আছে। বাসস্থানের ক্ষতি ও কীটনাশকের কারণে আরও অনেক প্রাণীর পাশাপাশি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে জোনাকিও।
গত সোমবার বায়োসায়েন্স জার্নালে এ বিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম আলোর কারণে জোনাকি পোকারা সবচেয়ে বেশি হুমকির মধ্যে আছে। জোনাকি পোকাদের দুই হাজারের বেশি প্রজাতি রয়েছে। এরা বিশ্বজুড়ে জলাভূমি, তৃণভূমি, বনাঞ্চল ও নগর উদ্যানগুলো আলোকিত করে।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী সারা লুইসের মতে, ‘জোনাকি পোকারা যেকোনো স্থানে টিকে থাকতে পারে। তবে তাদের টিকে থাকার জন্য বিশেষায়িত পরিবেশের দরকার হয়। এ পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকির মুখে।’
ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল, মালয়েশিয়া ও আপ্পালাচিয়ান অঞ্চলে জোনাকি পোকাদের দেখতে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করে। মালয়েশিয়ার জোনাকি পোকারা পেট্রোপিটাক্স টেনার প্রজাতির। এ প্রজাতির জোনাকিরা ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে বাস করে। কিন্তু দেশটিতে পামগাছের চাষ ও মাছের খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জোনাকিরা হুমকির মুখে।
ভূমধ্যসাগরীয় স্পেনের জোনাকি পোকাদের অন্যতম খাবার লার্ভা। কিন্তু জলাভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে তীব্র খাবারের অভাবে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে ওই অঞ্চলের জোনাকিরা। এছাড়া জোনাকিরা রাতের বেলা সব গাছে বসে না। জলাধারের পাশে বিশেষ যে গাছগুলোতে জোনাকিরা বসত, সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার জোনাকি পোকাদের অন্তত ১০টি প্রজাতি ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী অ্যাভালন ওয়েনসের মতে, আলোর দূষণের কারণে জোনাকিদের প্রজননে সমস্যা হয়। আর প্রজননে বাধা পাওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই জোনাকিদের সংখ্যা বাড়ছে না। পুরুষ জোনাকিরা অধিক উজ্জ্বল আলো সৃষ্টির মাধ্যমে নারী জোনাকিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু কৃত্রিম আলোর কারণে পুরুষ জোনাকির আলো নিষ্প্রভ হয়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্ক একটি জোনাকির আয়ুষ্কাল মাত্র কয়েক দিন। জোনাকিদের লার্ভা অবস্থায় থাকার সময়টাই দীর্ঘ। কিন্তু লার্ভা-পরবর্তী পরিণত অবস্থায় খুব অল্পদিন বাঁচে এরা।
আলোর দূষণের পরেই জোনাকিদের সবচেয়ে বড় শত্রু কীটনাশক। কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকে জোনাকির মতো অনেক প্রাণীও মারা যায়। যদিও কীটনাশক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বাজারজাতকরণের সময় এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয় না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণও জোনাকিদের অস্তিত্বের সংকট তৈরির পেছনের কারণগুলোর মধ্যে একটি। জলবায়ুর পরিবর্তিত বাস্তবতায় প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে জোনাকিরা।