দুধ নিয়ে গবেষণা করে আলোড়ন সৃষ্টি করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক এবার দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা করে আরো উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছেন।
১৩ জুলাই অধ্যাপক ফারুক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপিতে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় দুধের নতুন ১০টি নমুনার ১০ টিতেই এন্টিবায়োটিক মিলেছে। ১০ টি নমুনার মধ্যে ৩ টিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৪ টি, ৬ টিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৩ টি এবং ১ টিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২ টি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ জুন সংবাদ সম্মেলনে দুধ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পেশকালে উপস্থিত গণমাধ্যমের মাধ্যমে সব সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, পাস্তরিত ও অপাস্তরিত দুধের মানবদেহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি সনাক্তের প্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্য রক্ষার জরুরি প্রয়োজন জনস্বার্থে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাসমূহকে বিএসটিআইয়ের দেড় যুগের পুরনো দুধের স্ট্যান্ডার্ডে বর্তমানের নয়টি পরীক্ষার সাথে কমপক্ষে এন্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পরীক্ষার মতো দুটি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে দুধের এই স্ট্যান্ডার্ডকে যুগোপযোগী করার জন্যও আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম। এতে আমরা আরও জানিয়েছিলাম যে, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভব থেকেই আমাদের সীমিত সামর্থ্যে আমরা এই পরীক্ষাটি মাঝে মাঝে করার চেষ্টা করবো।
এতে বলা হয়, গত সপ্তাহে আমরা এই পরীক্ষাটি পুনরায় করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও পূর্বোক্ত ৫টি কোম্পানির ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত ৩ টি নমুনা, অর্থাৎ সর্বমোট ১০ টি নমুনায় এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই এন্টিবায়োটিক সনাক্ত করা গেছে। এন্টিবায়োটিকের মোট সংখ্যা ছিল ৪টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্স্রাসিন)। এর মধ্যে আগের বারের ছিলো না এমন এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন)।
বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক ফারুক বলেন, আমরা ভবিষ্যতেও এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো। আমরা আশা করি আমাদের প্রকাশিত এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে নিজেদের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা দূর করে পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করবে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতির বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেবে এবং এভাবে দেশের দুধের মানের উন্নতি ঘটবে। উপরন্তু, জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগজনক এই সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ কোন সরকারি কর্মকর্তাকে আর বিদেশি চক্রান্ত খুঁজতে হবে না।
এই বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইন অধ্যাপক ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় এই ফলাফল পেয়েছি, যা আরো উদ্বেগজনক। আসলে এদেশের কোম্পানিগুলো চায় না যে তাদের ভুল-ত্রুটিগুলো কেউ ধরুক। এই কারণে এই অবস্থা। আমাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। কিন্তু জনস্বার্থে আমরা আমাদের গবেষণা চালিয়ে যাবো। এই বিষয়ে আমরা নিয়মিত পরীক্ষা অব্যাহত রাখবো। জনস্বার্থে এটি করতে চাই। আমরা আশা করি আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোর নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করবে এবং সংশোধনে ব্যবস্থা নিবে।
অধ্যাপক আ ব ম ফারুক পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাজার থেকে মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট এবং ইগলু ম্যাংগোর পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে বলেছেন, সাতটি নমুনার সবগুলোতেই মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সসিন, অ্যান্টিবায়োটিক সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং অ্যান্টিবায়োটিক এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন অধ্যাপক ফারুকের গবেষণা যথাযথ হয়নি দাবি করেছিলেন।
তিনি বলেছেন, জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই ওই গবেষক তার তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কিন্তু তার গবেষণার স্যাম্পল সঠিক ছিল না। গবেষণাতেও ত্রুটি ছিল। তাকে সাতদিনের সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সন্তোষজনক কোনো জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।