বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসর শুরু হতে বাকি এখনও তিন মাস। আগেভাগেই দল গোছাতে শুরু করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। আইকন, রিটেইন ও বিদেশি খেলোয়াড় প্রায় চূড়ান্ত করেছে অনেক দলই। দ্রুত কার্যক্রম শুরু করে দেওয়ায় আগের আসরগুলোর তুলনায় এবারের বিপিএল গোছানো হবে বলেই মনে করছেন জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
সেইসঙ্গে মাঠের খেলায় এখনই প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস পাচ্ছেন বরিশাল বুলস ছেড়ে রাজশাহী কিংসে নাম লেখানো এই তারকা, ‘আমার মনে হয় বিপিএল অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। বিপিএল কখন হবে উন্মুখ হয়ে থাকে সবাই। প্রতিবছরই উন্নত হচ্ছে। মাঠে গড়ানোর চার-পাঁচ মাস আগেই কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। সব টিমই গুছিয়ে ফেলেছে। এবারের আসর আগের চেয়ে অনেক ভালো হবে। মাঠের খেলাও অনেক ভালো হবে। সেরা চারে কারা যাবে সেটি বলা কঠিন হয়ে যাবে। সবদিক থেকে খুবই ভালো শুরু হয়েছে, বাইরের দিকগুলোর ক্ষেত্রে। আমরা যদি মাঠের ভেতর খেয়াল রাখতে পারি, যেটা আমাদের হাতে আছে। চেষ্টা করবো সেটা করার।’
বিপিএলের প্রথম আসরে দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে খেলেছেন মুশফিক। নতুন মালিকানায় রাজশাহী কিংস নামে বিপিএলে ফিরে আসা এই দলটি প্রথমবারই চমক দেখিয়েছে। গতবার ফাইনাল খেলেছে তারা। অল্পের জন্য শিরোপা জেতা হয়নি। এবার সেই অপূর্ণতা ঘুচিয়ে দিতে চান বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (৪২ ম্যাচে ১১৭২ রান) মুশফিকুর রহিম।
‘আমি রাজশাহী বিভাগের ছেলে। সবাই চায় যার যার অঞ্চলের হয়ে খেলতে। যে পরিকল্পনা করে আমাকে নিয়েছে সেটি সফল করতে চাই। রাজশাহী গতবার অল্পের জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এবার চাই তাদের অপূর্ণতা দূর করতে।’
চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে রাজশাহী কিংসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেছেন, ‘রাজশাহী কিংস দলটি একটা অঞ্চলের নামে। তবে এটা কোনও আঞ্চলিক দল নয়। সারা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে দলটা তৈরি হয়েছে। এখানে আঞ্চলিক প্রসঙ্গটা বড় নয়। তবু মনে করি, মুশফিক ঘরের ছেলে, ঘরে ফিরেছে।’
গতবারের তুলনায় এবার আরও শক্তিশালী হচ্ছে রাজশাহী। রিটেইন ক্রিকেটার হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ, মুমিনুল হক ও ফরহাদ রেজাকে রেখে দিয়েছে তারা। বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে আছেন গত আসরে খেলা মোহম্মদ সামি, জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন, কেসরিক উইলিয়ামস, সামিত প্যাটেল। নতুন সংযোজন লুক রাইট, লেন্ডল সিমন্স, ম্যালকম ওয়ালার। গত আসরে কিংসের নেতৃত্ব দেওয়া ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ড্যারেন স্যামিকে আনার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানালেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকপক্ষ।
বিপিএলে এবার একাদশে একজন বিদেশি খেলোয়াড় বাড়ছে। চার থেকে পাঁচে উন্নীত হয়েছে সংখ্যাটি। দেশি ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ কমে আসবে ভেবে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রস্তাবে না ভোট দিয়েছিল রাজশাহী। কিন্তু আট দলের মধ্যে পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজি পাঁচজন করে বিদেশি খেলাতে চাওয়ায় টেকেনি তাদের অনুরোধ। রাজশাহীর ‘আইকন’ মুশফিক এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে চান। বিদেশিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ দেখতে চান স্থানীয় ক্রিকেটারদের মাঝে।
‘যেকোনো সিদ্ধান্তের ভালো দিক, খারাপ দিক থাকে। পাঁচজন বিদেশি প্লেয়ার হলে আমাদের হয়তো একজন দেশি প্লেয়ারের জায়গা কমে যাবে। কিন্তু আরেকদিকে যে কজন স্থানীয় খেলোয়াড় সুযোগ পাবে, তাদের অন্যরকম প্রতিযোগিতা করেই আসতে হবে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। ঘরোয়াতে প্রতিযোগিতা করতে পারলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অনেক উপকার পাবে। বিদেশি প্লেয়ার যারা আসেন, তারা ভালো মানের। তাদের সাথে খেললে, ড্রেসিংরুম শেয়ার করলে অনেককিছু শেখা যায়। প্রথমবার পাঁচ বিদেশি ছিল। সেবারও প্রতিযোগিতা ভালো হয়েছিল। বিসিবি এবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি হলেও হতে পারে। এই সৌমুসটা খেললে আমরা বুঝতে পারব।’
একাদশে বিদেশিদের তিন থেকে পাঁচের বেধে দেয়া সংখ্যাটা লড়াই করে কমিয়ে আনবেন দেশিরা। মুশফিক এটাই মনে করছেন, ‘গতবার স্থানীয় ক্রিকেটারের মধ্যে আফিফ, রাহিরা খুব ভালো করেছে। এই প্রতিযোগিতা আরও বেশি হবে এখন। আমরা যদি আরও ভালো করতে পারি। তখন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ভাবতে পারে, সময় এসেছে চারজন না তিনজনও হতে পারে। আমরা, স্থানীয় ক্রিকেটাররা সেটা যদি প্রমাণ করতে পারি এই মৌসুমে।’