‘আহা কত দিন পর সুনীল দা’র কণ্ঠ শুনলাম! খুব শান্ত শীতল লাগলো সব কিছু’- আসন্ন ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবি ‘কমলা রকেট’-এর একটি গান শোনে এভাবেই নিজের অভিমত জানালেন দেশের প্রখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নূর ইমরান মিঠুর পরিচালনায় প্রথম ছবির এই গানটির শিরোনাম ‘মনমাঝে জলের হাওয়া’। গানটি গেয়েছেন সুনীল কর্মকার। এরইমধ্যে সংগীত সমঝদার অনেকেই গানটির প্রশংসা করছেন।
এই গানের সূত্র ধরেই সোমবার দুপুরে প্রখ্যাত বাউল শিল্পী সুনীল কর্মকারকে ফোন। জানতে চাওয়া হয় কোথায় আছেন? ভরাট কণ্ঠে অন্ধ এই গায়ক জানালেন, আমিতো ময়মনসিং-ই থাকি। এখন আছি গাড়ির মধ্যে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরি। কৃষি ইউনিভার্সিটির দিকে যাই। কথা থামিয়ে জানতে চাওয়া হয়, আপনার গাওয়া একটা গান রিলিজ পেয়েছে। শোনেছেন?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, না শোনিনি। ‘কমলা রকেট’ সিনেমার জন্য আপনি একটি গান গেয়েছেন? সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ। গেয়েছিতো। মহর্ষি মনমোহন দত্তের লেখা একটি গানে আমি কণ্ঠ দিয়েছে। গানটির সুর করেছেন ওস্তাদ আফতাব উদ্দিন খাঁ।
ছবির পরিচালক নূর ইমরান মিঠুর সাথে পরিচয় কীভাবে হলো? প্রশ্নে বললেন, এটা ফোনে ফোনে হয়েছে। একদিন সে আমাকে ফোন করলো। ফোন করে তার ছবিতে আমাকে গাইতে বললো। বললো শুটিং হবে স্টিমারে। স্টিমারে স্টিমারে ঘুরবে। আমি স্টিমারে বসে গান গাইবো। আমি বললাম, না না। আমি স্টিমারে ঘুরতে পারবো না। আপনি গান রাখতে চাইলে আমি ঢাকায় এসে রেকর্ড করে যাবো, কিন্তু স্টিমারে স্টিমারে ঘুরতে যেতে পারবো না। পরে সে রাজি হলো। গান রেকর্ডিংয়ের সময় আমাকে জানানো হলে আমি ঢাকায় এসে গান রেকর্ড করে গিয়েছি।
পরিচালক আপনাকে কেনো তার ছবিতে গানের জন্য নির্বাচন করলেন, এমন কিছু আপনাকে তিনি জানিয়েছেন? সুনীল কর্মকার বললেন, না। আমাকে কিছু বলেনি। হয়তো আমার গান শুনে তার ভালো লেগেছে। আমি যদিও গ্রামের শিল্পী, গ্রামের মানুষের শিল্পী কিন্তু শহরেও আমার গান অনেকেই শোনে বলে জেনেছি। আর পরিচালকের সাথে বোধহয় আমার এর আগেও কোথাও দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে কিন্তু খেয়াল ছিলো না। ঢাকাতেও আমার গান নাকি বহু লোকে শুনে?
এমন প্রশ্ন করে উত্তরের আশায় সময় নষ্ট করেননি সুনীল কর্মকার। বলতে থাকেন, আমাদের গান শোনে মানুষ যদি একটু তৃপ্তি পায় তবেইতো আমরা সার্থক।
৭ বছর বয়স থেকেই গানের সঙ্গে আছেন তিনি। ভরাট কণ্ঠ তার। যেকোনো আসরে একাই মাতিয়ে দিতে পারেন এই শিল্পী। নিজেই বাজাতে পারেন বেহেলা, দোতারা, তবলা কিংবা হারমোনিয়াম। গান তার রক্তবিন্দুতে। বিখ্যাত বাউলশিল্পী ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খাঁর গান শুনেই মূলত গানের জগতে নিজেকে সঁপে দেন বালক সুনীল। কিন্তু সেসময়ই তার চোখের আলো নিভে যায় চিরতরে। কিন্তু থামানো যায়নি বালক সুনীলকে। অন্ধত্ব বরণ করলেও গান ছাড়েননি নেত্রকোনায় জন্ম নেয়া সুনীল কর্মকার। ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খাঁর অসংখ্য গানে সুর বসিয়ে গেয়েছেন তিনি। এরমধ্যে আছে বেশকিছু খ্যাতনামা গানও।
কিন্তু তার নিজের লেখা গানের সংখ্যাও কম নয়। এখন পর্যন্ত নিজের লেখা গানের সংখ্যা কতো? এমন প্রশ্নে সুনীল কর্মকার বললেন, প্রায় দেড়শো থেকে দুইশো হয়ে যাবে। আসলে গান গাওয়া নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকতে হয়, যার ফলে লেখার আর সময়ই পাওয়া যায় না।
কিন্তু এখনতো ফোক গান কম হয় আগের তুলনায়? প্রশ্নটি ভালো ভাবে নেননি সুনীল কর্মকার। কিছুটা রাগত সুরেই পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন, কে বলছে ফোক গান কম হয়? বেশির ভাগইতো এখন ফোক গান। এই দেশের মা মাটি মানুষের সাথে মিশে আছে ফোক। এখানে কেনো ফোক গান কম হবে! একটা সিজনে আমাকে ১০০ থেকে ১৫০ শো করতে হয়। প্রতিটা রাত আমাকে ফোক গানের আসরে গাইতে হয়!
গাড়িতে থাকার দরুন সুনীল কর্মকার জানান, রাতে কথা হবে! ফোনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তার সাথে। তার আগে ‘কমলা রকেট’-এর জন্য জানান শুভ কামনা।
তার আরো মিনিট পনেরো পরে নিজেই ফোন করেন সুনীল কর্মকার। বলেন, ‘কমলা রকেট’ ছবির গানটা আপনারা শুনছেন? গানটা কি ভালো হয়েছে? মানুষ কী বলে গান নিয়ে? আমি কীভাবে শুনতে পারবো?-এরকম লাগাতার প্রশ্নে তাকে বলে দেয়া হয়, চ্যানেল আইয়ের ইউটিউব-এ গিয়ে ‘মনমাঝে’ সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন। আস্বস্ত হন তিনি।
আসছে ঈদে দেশের বড় পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ খ্যাত অভিনেতা নূর ইমরান মিঠুর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কমলা রকেট’। কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের ‘মৌলিক’ ও ‘সাইপ্রাস’ নামের দুটি গল্প অবলম্বনে ‘কমলা রকেট’-এর চিত্রনাট্য করেছেন শাহাদুজ্জামান ও মিঠু।
ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা ও বর্তমানের তুখোড় নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। ছবিতে দালাল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন জয়রাজ, সামিয়া সাঈদ, সেওতি, ডমিনিক গোমেজ, বাপ্পা শান্তনু, সুজাত শিমুল, শহীদুল্লাহ সবুজ,আবু রায়হান রাসেল।
ফিচার ছবি: মুজিব মেহদী