অধীর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে নির্ধারিত কক্ষপথে পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু করেছে স্পেসএক্সের ফ্যালকন নাইন ব্লক ফাইভ রকেট।
এই ঐতিহাসিক যাত্রার মাধ্যমে বিশ্বের স্যাটেলাইট শক্তিধর দেশের তালিকায় ৫৭ তম দেশ হিসেবে যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ প্যাড ৩৯-এ থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশের মহাকাশ জয়যাত্রা শুরু হয়। যে লঞ্চ প্যাড থেকে ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১ সেই একই জায়গা থেকে তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ শুরু করলো মহাকাশে পৌঁছানোর মহাযাত্রা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করেন। ফ্লোরিডার স্বচ্ছ আকাশে প্রায় সাত মিনিট স্যাটেলাইটটি দেখা যায়।
ফ্লোরিডা থেকে আইসিটি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ যার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন রয়েছে।
সারাদেশের মানুষ প্রবল উৎসাহ নিয়ে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করেন। শুক্রবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।
মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় থেকে উপগ্রহটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং পর্যবেক্ষণে দেশের সক্ষমতা সম্প্রসারিত করবে। উপগ্রহটি থেকে সার্ক দেশগুলোর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাকিস্তানের একটি অংশ এর সুযোগ নিতে পারবে।
এই স্যাটেলাইট প্রথমে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর উৎক্ষেপণের কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইরমার কারণে এর উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ এর ফলে ডাইরেক্ট-টু-হো (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাতসহ দুর্যোগ উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটওয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনা আরো সহজতর করবে।
বিটিআরসি ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিস কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। কোম্পানিটি কয়েক মাস আগে স্যাটেলাইটটির তৈরির কাজ সম্পন্নের পর এটি ফ্রান্সের ক্যানেস ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। পরে ২৯ মার্চ এ স্যাটেলাইট ফ্লোরিডায় স্থানান্তর করা হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারস্পুটনিক’ এর কাছ থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় (স্লট) কক্ষপথ স্লট কিনে নেয়।