আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে কারণ দেখিয়ে বুধবার ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। যা বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যকর হয়েছে সারাদেশে। তবে অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রোলের দাম আগের মতোই প্রতি লিটার ৮৬ টাকাতেই রাখা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের মূল্য এক লাফে ১৫ টাকা বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যে দেশজুড়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়ে থাকে তার ৭৩ শতাংশের বেশি হচ্ছে ডিজেল। বিপিসির হিসেব মতে, ২০১৯-২০২০ বছরে সংস্থাটি ৫৫ লাখ ৩ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে। এরমধ্যে শুধু ডিজেলের পরিমাণই ৪০ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। সড়ক ও নৌ পরিবহন, কৃষির সেচ পাম্প এবং বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা ক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে।
দাম বাড়ানো বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। ভারতে গত ১ নভেম্বর তারিখে ডিজেলের বাজার মূল্য প্রতি লিটার ১২৪.৪১ টাকা বা ১০১.৫৬ রূপি ছিল, অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ লিটার প্রতি ৫৯.৪১ টাকা কম।” বিজ্ঞপ্তিতে যে ভারতের মূল্যকে রেফারেন্স হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেখানে আজ (৪ নভেম্বর) জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছে। পেট্রোলে লিটারে ৫ রুপি ও ডিজেলে লিটার প্রতি ১০ রুপি হারে কমানোর নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার।
অবশ্য পরে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, তেল পাচার ঠেকাতে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববাজারে কমলে দাম সমন্বয় করা হবে। আমরা মনে করি, করোনাকালে পুরো দেশের উৎপাদন ও অর্থনীতি একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে, এরমধ্যে পরিবহন, কৃষি ও বিদ্যুতের মতো খাতের ব্যবহ্নত জ্বালানি যদি হঠাৎ বেড়ে যায়, তাহলে এর প্রভাব নিশ্চয় শুভকর কিছু হবে না। এরচেয়ে বরং পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, এজন্য করোনার এই সময়ে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।
এর বিরূপ প্রভাব আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছি। তেলের দাম বাড়ার ঘোষণা আসতে না আসতেই গণপরিবহনের ভাড়া পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে বিআরটিএ’কে চিঠি দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এছাড়া তেলের দাম বৃদ্ধি জনজীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার তৈরির পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন ছড়াবে মন্তব্য করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) তেলের দাম কমাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্য ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক সমিতি। রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও আসছে প্রতিবাদ।
এমন প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেলের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে আমাদের শঙ্কা। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলেই আমরা আশাবাদী।