রক সঙ্গীতের মহাকাব্যে এক বিপ্লবী নায়ক তার কবিতাই ছিল গান আবার গানই যেন কবিতা। পারফর্ম করার সময় “কথিত শব্দ” শুনে শুধু স্তব্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তিনি একাধারে গায়ক সুরকার গীতিকার লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক থাকলেও নিজের অভ্যন্তরের গহীন থেকে উঠে আসা রাতেধারার এক ঐন্দ্রজালিক রূপায়ন তার মাঝে যোগ করেছিল অনন্য কবি সত্ত্বার। বিশ্বজনীন অন্য ভূমির শিখরে দাড়িয়েও নিজেকে সে কবি ভাবতেই ভালবাসতো।
জেমস ডগলাস মরিসন, সবাই তাকে চিনতো জিম মরিসন বলেই। আজ ৩ জুলাই তার ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী। মরিসন এর জন্ম ১৯৪৩ সালের ৮ই ডিসেম্বর, ফ্লোরিডায়। বড় দুই বোনের সঙ্গে ছোট ভাই মেধাবী মরিসনের পড়ালেখা প্রতি আগ্রহ ছিলো ছোটবেলার থেকেই। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই শুরু করেন কাব্য রচনা।
অসংখ্য খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিক, লেখক ও বিশেষ করে জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিশ নিৎশে’র প্রভাব পড়ে তাঁর জীবনে। ১৯৬৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ‘থিয়েটার আর্টস’ বিভাগের ‘সিনেমাটোগ্রাফি’ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
মরিসন ভক্তদের হৃদয়ে স্থান করে নেয় তার গড়া আমেরিকান রক ব্যান্ড দ্য ডোরস এর মাধ্যমে। ১৯৬৫ ক্যার্লিফোনিয়াতে গড়ে ওঠে ব্যান্ডটি। দলের ভোকাল ছিলেন মরিসন নিজেই। কি বোর্ড আর বেস রে ম্যানজারেক, ড্রাম পারকিউশনে জন ডেনসমোর, গীটারে ছিলেন রবি ক্রিগার। ব্যান্ডটির তিনটি স্টুডিও অ্যালবাম, দ্য ডোরস (১৯৬৭), এল এ উম্যান (১৯৭১) ও স্ট্রেঞ্জ ডেইজ (১৯৬৭) রোলিং স্টোনের জরিপে সর্বকালের সেরা ৫০০ অ্যালবামের মধ্যে যথাক্রমে ৪২তম, ৩৬২তম ও ৪০৭তম স্থান পায়।
১৯৯৩ সালে দ্য ডোরস রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেমে স্থান পায়। ১৯৭৩ সালে ব্যান্ডটি পুরোপুরি ভেঙে যায়। ভেঙে গেলেও এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়নি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই এ পর্যন্ত ব্যান্ডটির বিক্রিকৃত অ্যালবাম কপির সংখ্যা ৩২ দশমিক ৫ মিলিয়ন। সারা বিশ্বের জন্যে সংখ্যাটি ৯০ মিলিয়ন। ব্যান্ড লাইন আপে কোনো বেস গিটার প্লেয়ার ছিল না। তবে তা পুষিয়ে দিত কিবোর্ডিস্ট রে’র ইলেক্ট্রিক ওরগান (কি বোর্ড) এর অসাধারন কাজ। ফোক, জ্যাজ, ব্লুজ, সুইং রক’এন রোল, ফ্লেমিংগো স্টাইল সংমিশ্রনে তারা গঠন করেছিলো সে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যান্ড। যার আবেদন এখনও আছে, থাকবে যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে।
৬০-এর দশকে জিম মরিসনের রক সাইকাডেলিক লিরিক সাথে ভরাট এবং শুদ্ধ উচ্চারণে গাওয়া গানগুলোর জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে তার স্বকীয় স্থান। মরিসন নিজে মহাপাগল ছিলো আর তার ফ্যানরা সমসাময়িক কাল থেকে এখন পর্যন্ত পাগল।
ছ’টি হিট অ্যালবাম সহ প্রায় দু’শরও বেশি কনসার্ট পরিবেশন করেছেন তিনি। গানের পাশাপাশি তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার।
সেলফ ডেস্ট্রাকটিভ রক লাইফ লিড করতে যা যা গুন থাকা দরকার সবই ছিল মরিসনের মধ্যে। এই বোহেমিয়ান জীবন যাপনের ফলে মাত্র ২৭ বছরে প্যারিসের এক অ্যাপার্টমেন্টের বাথটাবে মৃত্য অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। মৃত্যুর কারন অ্যালকোহল আর ড্রাগের ওভার ডোজ! তবে মরিসনের মৃত্যুর চার যুগ পার হলেও দূর হয়নি তার মৃত্যুর রহস্য!!!