জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য কেনা যন্ত্রপাতি স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারে অবহেলার অভিযোগ ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারে অবহেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত।
শুধু তাই নয়, এই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সদ্য অবসরকালীন ছুটিতে যাওয়া এনআইসিআরএইচের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াররাফ হোসেনের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দেশের স্বাস্থ্যখাতে নানা ধরণের অভাব-অভিযোগ ও দুর্নীতির চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। একটি জাতীয় দৈনিকে ক্যান্সার হাসপাতালের নানা অনিয়ম চিত্র উঠে এলে আদালত এই নির্দেশ দেন। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।
দেশের জনগণ স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিজেদের কষ্টের ট্যাক্সের পয়সায় স্থাপিত হাসপাতাল-ইনস্টিটিউটগুলোতে সেবা পাবে, এমনটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নিলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নানা অসাধু চক্র আর দায়িত্বশীলদের অদক্ষতায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। অথচ ওই ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রায় ১২ বছর আগে আইসিইউ’র জন্য ৮টি উচ্চমাত্রাসম্পন্ন আর্টিফিসিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) মেশিন কেনা হয়েছিল। আইসিইউর অতি প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রগুলোর প্রত্যেকটি ৭০ লাখ টাকায় কেনা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে কখনোই সেগুলো স্থাপন করা হয়নি। ফলে আইসিইউতে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সেই মেশিনগুলোর দামী যন্ত্রাংশ খুলে খুলে নেয়া হয়েছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সরকারি সুবিধাগুলো ইচ্ছাকৃত নয়তো অবহেলাজনিত কারণে বন্ধ করে দিয়ে বেসরকারি খাতে অতিমূল্যে সেবাগ্রহণ করতে কৌশলে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে শুরু করে উন্নত চিকিৎসায় আধুনিক মেশিন হাসপাতাল-ইনস্টিটিউটগুলোতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হলেও তা অজ্ঞাত কারণে ব্যবহার করা হয় না, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ওই চিত্র সেইসব অভিযোগকে প্রমাণ হিসেবে সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।
হাইকোর্ট খুবই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে ওই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বিষয়ে। আমাদের ধারণা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন মানের হাসপাতালে একইধরণের অনিয়ম অবহেলা বিরাজ করছে। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া খুবই জরুরি বলে আমরা মনে করি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশাবাদ।