চামড়া শিল্প আর অবহেলিত থাকবে না জানিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান বলেছেন, দেশে কাঁচা চামড়ার মজুত আছে, অন্যদেশ থেকে সেটা আনতে হয় না। চামড়া উদ্যোক্তারা শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসলে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে এ শিল্প।
শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় বিসিকের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (স্কিটি) ‘চামড়া শিল্পে অদম্য বাংলাদেশ: উদ্যোক্তা সেমিনার ২০২০’ এর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পের পরই চামড়া শিল্পের অবস্থান। অবহেলিত এ শিল্প আর এমন অবস্থানে থাকবে না। শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশন কাজ করছি এবং প্রচুর উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা প্যাকেজ সুষ্ঠু বন্টনের পর উদ্যোক্তারা করোনাকালের ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘‘চামড়াজাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশে কাঁচা চামড়ার প্রচুর মজুত রয়েছে, এ পণ্যটি বাইরে থেকে আমদানী করতে হয় না। বাজারে এখন ৯০ শতাংশ চাইনিজ জুতা পাওয়া যায়। চামড়াজাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের, ব্যবসায়ীদের এই লোকাল মার্কেটটা ধরতে হবে। এখন আমরা যদি ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানী করি, ২০২৫ সালের মধ্যে সেটা ৫ বিলিয়ন ডলারে আনতে পারব।’’
মোশতাক হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের টাকায় তরুণ উদ্যোক্তারা চামড়া শিল্পের লোকাল মার্কেট ধরতে পারবে, ব্যবসা শুরু করতে পারবে। ফলে লোকাল মার্কেটে হাজার হাজার কোটি টাকার জুতা চায়না থেকে আমদানী করতে হবে না এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমি মনে করি এসএমই ও চামড়া ব্যবসায়ীদের এখণ স্বর্ণযুগ, কারণ আগে ব্যবসা শুরুতে ঋণের ঘাটতি ছিল, এখন তিনটা প্যাকেজ বাজারে চালু আছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের টাকা আসলে চতুর্থ প্যাকেজ বাজারে চলে আসবে। সুতরাং টাকার জন্য ব্যবসা হয় না, টাকার অভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হতে পারে না, সেদিন শেষ।’’
পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস সম্পর্কে মোশতাক আহমেদ বলেন: আয়োজক পিপলস লেদার ট্রেনিং সেন্টারের একটা বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান। এখানে প্রায় ১৮০ জন শিক্ষার্থী চামড়াজাত পণ্য সম্পর্কে ট্রেনিং পেয়েছেন। তারাও চামড়া শিল্পের বিকাশে ভবিষ্যতে অবদান রাখবে। চামড়াজাত শিল্পের অগ্রযাত্রার পথে সহায়ক থাকায় পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের চামড়া শিল্পে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হবে, উদ্যোক্তাদের সহায়ক যেসব নীতিমালা লাগে, যে সকল উপাদান লাগে সেগুলো উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছানো ব্যবস্থা করতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে আমরা আরও সতেষ্ট থাকব, আমি চাইব উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারী বেসরকারী প্যাকেজগুলোকে উদ্যোক্তার ঘরের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’’
চামড়াজাত পণ্যের উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভারতীয়, বার্মা ও চায়না জুতার বাজার দেশীয় উদ্যোক্তাদের ধরতে হবে। আপনারা জুতার গুণগত মান, ডিজাইন, সাশ্রয়ী মূল্য সব সঠিক ভাবে দিতে পারলে ক্রেতা দেশীয় পণে আকৃষ্ট হবে।’’
পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস-এর স্বত্বাধিকারী রেজবীন হাফিজ বলেন, `পিপলস লেদার ট্রেনিং সেন্টারের আমরা চাই হাতে কলমে চামড়া জাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে। যাতে করে তারা তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে দেশের নাম বিদেশের মাটিতেও উজ্জ্বল করতে পারে।’
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিসিক স্কিটির বিজয় মেলায় এ আলোচনা অনুষ্ঠানটি হয়। অনুষ্ঠান শেষে কেক কেটে পিপলস লেদার ট্রেনিং সেন্টারের বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছা জানানো হয়। পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস।