মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গী হামলায় নিহত হওয়ার খবর পেয়েই বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় তাদের সহযোগিতা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে।বাংলাদেশ একা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে পারবেনা সেজন্যই তারা পাশে দাঁড়াতে চায়। এ কথা খুব জোরেসোরে ও বারবার তারা বলে আসছে।
তারা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াবার ইচ্ছা প্রকাশ করে সত্যিই মহানুভবতার পরিচয় দিচ্ছেন।শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের যে কোন দেশে আইএস জঙ্গীর অবস্থান থাকলে সেদেশে প্রবেশ ও পাশে দাঁড়ানোর তুমুল আগ্রহ তাদের।তাদের উদ্দেশ্য সেদেশে শান্তি স্থাপন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
তারা ইতোমধ্যেই ইরাক, কুয়েত, আফগানিস্তান,পাকিস্তান ও সিরিয়ায় পরদেশ মিত্রতার স্বাক্ষর দিয়ে যাচ্ছেন।তারা তাদের বানানো অভিধানে শান্তি ও বন্ধুত্ব শব্দটির মার্কিন অর্থের দ্যোতনা ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তারা সেসব দেশে প্রবেশ করে সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কী বিশাল বন্ধুত্ব ছড়াচ্ছেন।
সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন সেদেশের তাদের বশংবদ অনুগত মহলের। যেমন ১৯৭১ সালে কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী ও সালাহ্ উদ্দিন কাদের চৌধুরী সহ অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক(বাংলায় বললাম,বিদেশী শব্দ রাজাকার বললাম না) যারা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় ব্রতী হয়েছিলেন আমেরিকা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
কিন্তু তারা অখন্ডতা রক্ষা করিয়ে দিতে পারলেন না।এজন্য তারা মোটেই নীতিগত অবস্থান বদল করেন নি।তাই তাদের মহান স্বেচ্ছাসেবকদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর মানতে পারেন নি।মানবিকতা ও বিবেকের তাড়নায় তারা ফাঁসি ঠেকাতে নানা তৎপরতা দেখিয়েছেন।বন্ধুর দুঃসময়ে পাশে না থাকার লোক তারা নন। জাতিসংঘের মহাসচিবকে দিয়ে ফোন করিয়েও তাদের ফাঁসি কার্যকর ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন।
যারা অন্যদেশে আইনি প্রক্রিয়ায় খুনেরও বিরুদ্ধে দাঁড়ান।যারা খুনীর মৃত্যুও সইতে পারেন না।এমন একটি মানবিক দেশ আজ নিজেই আক্রান্ত হল।জঙ্গী হামলায় ৫০টি প্রাণ ঝরে গেল। মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের শোক সইবার তৌফিক দান করুন।
জুলহাস মান্নানের মৃত্যুতে অশ্রু ছলছল আমেরিকা বলেছিল,তিনি আমাদের সহকর্মীর চেয়েও বেশী ছিলেন।তাদের ইন্ধনেই জুলহাস মান্নান বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রূপবান নামক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে যাচ্ছিলেন। আর আজ তাদের দেশেই এইসব সমকামীরা জীবনের অধিকার হারালো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বারাক ওবামা,জনকেরী,নিশা দেশাই ও বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ অন্যরা যে শোকে এখনও হার্টফেল করেন নি সেটা সৃষ্টিকর্তার কৃপা।
বাংলাদেশে জঙ্গী হামলায় নিহতের খবর পেয়েই তারা তৎপর হয়ে ওঠেন। জঙ্গী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের ইচ্ছা করেন তারা।এরকম একটি মিত্রপাগল রাষ্ট্র আজ আক্রান্ত হল। বাংলাদেশের উচিত আজ তাদের পাশে দাঁড়ানো। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আপনি সংসদে এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করুন ও শোক প্রকাশ করুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশে জঙ্গীদের গুপ্ত হামলায় খুনের ঘটনায় নিজেই বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীকে ফোন করেছেন। তিনি খুন সইতে পারেননি। কত আবেগ ও বিবেকতাড়িত মানবিক লোক তিনি! নিজের দেশে এই ৫০ খুনের ঘটনা কিভাবে সইবেন। বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর উচিত তাকে ফোন করে স্বান্তনা দেয়া। সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাব দেয়া উচিত, আমাদের সেনাবাহিনী,পুলিশ,বিজিবি আইএস দমনে আমেরিকায় সক্রিয় ভূমিকায় নামতে চায়।
প্রয়োজনে আমাদের জাতীয় সংসদে এই সিদ্ধান্তটি পাশ করিয়ে নেয়া যেতে পারে।কোন দেশে আইএস থাকলে অন্যদেশ আইএস দমনে যেতে পারেই। কারণ আইএস শুধু বিশেষ কোন দেশের জন্য হুমকি নয়। গোটা দুনিয়ার জন্য এরা হুমকি। এই কথাটি বেশ জোরেসোরে প্রচার করে আসছেন আমেরিকাই। আমেরিকার মত প্রবল শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর দেশে যে আইএস টিম হামলা চালাতে পারে সেটাই আইএসের মূল টিম। এত উন্নত প্রযুক্তি ও সুরক্ষিত নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর দেশে আইএস ঢুকলো কিভাবে। ঢুকে ক্লাব পর্যন্ত গেল কিভাবে।
কি ভূমিকা রাখলো আমেরিকান পুলিশ ও গোয়েন্দারা। আইএস প্রতিরোধ ও নজরদারিতে আমেরিকা পুরোপুরি ব্যর্থ।এত বড় একটা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আইএস জঙ্গীদের আক্রান্ত দেশ হতে পালাতে পারার কথা নয়। আমাদের ধারণা আমেরিকাতেই আইএস জঙ্গীদের মূল নেতৃত্ব লুকিয়ে আছে। এটাকে পরাভূত করলেই বিশ্ব আইএস মুক্ত হতে পারে। আইএস আতঙ্কে ভোগা পৃথিবীর সকল দেশের উচিত আইএস দমনে সোচ্চার হওয়া।
আইএসের অস্তিত্ব সম্পর্কে অজ্ঞাত আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ও আইএসের প্রবেশ ও হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ সেদেশের পুলিশ, নিরাপত্তা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ হয়ে বসে থাকার সময় নেই। সময় পাশে দাঁড়াবার। বাংলাদেশে সন্দেহ জনক হামলার খবর পেয়েই আইএসের হামলা বলে আমেরিকা আমাদের পাশে দাঁড়াতে চায়।
আমেরিকার দুঃসময়ে বাংলাদেশ বসে থাকতে পারেনা। আমাদের সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিমিশনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। তারা আমেরিকার আইএস দমনেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোরও সোচ্চার হওয়া উচিত। আমরা আইএস মুক্ত বিশ্ব চাই। সারা বিশ্বের দেশে দেশে এই আহবান জেগে উঠুক, চল,চল আইএস দমনে আমেরিকা চল।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)