এক রহস্যময়ী নারীর প্রহেলিকাময় জগতের গল্প আছে বাংলাদেশি লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা থ্রিলারধর্মী উপন্যাস ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ বইটিতে। যে বইটি নিয়ে আগেই স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম হইচইয়ের জন্য ওয়েব সিরিজ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন পশ্চিম বঙ্গের জনপ্রিয় নির্মাতা সৃজিত মুখার্জী। চলতি মাসে শুরু হয়েছে এর শুটিং।
সিরিজটিতে কারা কারা অভিনয় করছেন? এ নিয়ে বাংলাদেশি দর্শকেরও ছিলো বেশ আগ্রহ। কারণ, শোনা যাচ্ছিলো- বাংলাদেশি লেখকের থ্রিলারধর্মী বইটি থেকে ওয়েব সিরিজটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। শুধু তাই নয়, খবর রটে- এই সিরিজে কলকাতার অনির্বাণ ভট্টাচার্য ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অভিনয় করতে যাচ্ছেন মোশাররফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরী!
তবে শেষ পর্যন্ত মূল কাস্টিংয়ে দেখা গেল বেশ রদবদল। ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ সিরিজে পরীমনি নয়, মূল চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের লাক্সতারকা খ্যাত অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। আরো অভিনয় করছেন অঞ্জন দত্ত, রাহুল বোস, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অনির্বাণ চক্রবর্তী প্রমুখ।
চলতি মাসের ১৬ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান-দুর্গাপুর অঞ্চলে শুরু হয়েছে শুটিং। ওইদিনেই শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন বাঁধন। সেখান থেকেই মুঠোফোনে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী:
‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ এই ওয়েব সিরিজে আপনার ইনভলবমেন্ট কীভাবে?
প্যান্ডেমিকের শুরুতে নির্মাতা সৃজিত মুখার্জী আমার সাথে যোগাযোগ করেন, তখন ওয়েব সিরিজের জন্য স্ক্রিপ্ট তৈরী হয়নি। সৃজিত মুখার্জী বলেন- ‘প্রথম থেকেই তিনি আমাকে এই চরিত্রের জন্য ভেবে রেখেছেন।’ তবে প্রথমে উপন্যাসটি পড়ি আমি, মুগ্ধ হই। প্যান্ডেমিকের মধ্যেই নির্মাতার সাথে বহুবার আলোচনা হয়। চরিত্রটির জন্য ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরী করি।
শুটিং কবে থেকে শুরু হলো, শেষ কবে?
১৬ ডিসেম্বর থেকে আমাদের শুটিং শুরু হয়েছে। আমি কলকাতায় এসেছি ১১ ডিসেম্বর, ১২ তারিখ হয়েছে লুক সেট। টানা ৮ রাত ধরে কাজ হয়েছে। শুটিং শেষ হবে ১০ জানুয়ারি। এরপরই আমি দেশে ফিরবো।
নারী কেন্দ্রিক চরিত্র তো বাংলা প্রায় হয়নি বললেই চলে। মুশকান জুবেরী চরিত্র নিয়ে আপনার ভাবনা যদি শেয়ার করেন?
গত তিন বছরে ধরে আমি কাজ নিয়ে যখন সচেতন হলাম, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমাদের দেশ বা উপমহাদেশে নয়, পুরো পৃথিবীতেই নারী প্রধান গল্প খুবই কম। কিংবা টুকটাক কোথাও হলেও নারী প্রধান গল্পগুলোতে নারীদের চরিত্র খুব একটা স্ট্রং না। কী রকম দুর্বল একটা ব্যাপার থেকেই যায়। কিন্তু ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র মুশকান জুবেরী যে চরিত্রটি, এটি খুবই শক্তিশালী একটি চরিত্র। এরকম চরিত্র সিনেমা গল্পে খুবই বিরল। এরকম দারুণ একটি চরিত্র যে আমি পেয়েছি, এজন্য আমি সত্যিই খুব হ্যাপি!
স্বপ্নের চরিত্র?
আসলে এরকম চরিত্র পাওয়া খুব কঠিন। এই মুশকান জুবেরী চরিত্রটির ভেতরে এতো শ্যাড, এটা খুব গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমি যখন ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ উপন্যাসটি পড়েছি, তখনও স্ক্রিপ্ট তৈরীর প্রক্রিয়া চলছিলো। কিন্তু উপন্যাসটি পড়েই আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি সত্যি সত্যি মুশকানের প্রেমে পড়েছি প্রথম দফায় পড়েই। মুগ্ধ হয়েছি। আমার মনে হচ্ছে, এ ধরনের একটি চরিত্র করতে পারার সুযোগ আমার হয়েছে- আমি চেষ্টা করছি চরিত্রের সাথে শতভাগ সৎ থাকতে এবং চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে।
এছাড়া সৃজিত মুখার্জীর বেশির ভাগ কাজই কিন্তু ছেলে প্রধান। মানে মেইল প্রটাগনিস্ট। তার খুব কম কাজই আছে, যেটা ফিমেইল প্রটাগনিস্ট। সেদিক থেকেও কিন্তু আমি খুব ভাগ্যবান যে, তার ফিমেইল প্রটাগনিস্টের কাজটা আমি করতে পারছি। আর আমি লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে বিশেষ ধন্যবাদ দিবো, এরকম দুর্দান্ত একটি চরিত্র সৃষ্টির জন্য। তিনি যদি এমন চরিত্র সৃষ্টি না করতেন, তাহলে স্ক্রিনে এমন দুর্দান্ত চরিত্র উপস্থাপনের কথা কীভাবে ভাবতো কেউ!
সিরিজে যে মানুষেরা কাজ করছেন, মানে আপনার সহঅভিনেতা যারা আছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই বাঙালি দর্শকের কাছে বেশ সমাদৃত। অঞ্জন, রাহুল, অনির্বাণ; আবার পরিচালক হিসেবে আছেন সৃজিত। এমন সব মানুষের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন আসলে?
অঞ্জন দত্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অনির্বাণ চ্যাটার্জীর সাথে এই সিজনে সরাসরি কোনো সিন আমার নাই। আমার সাথে এই সিজনে সরাসরি সিন আছে রাহুল বোসের। উনার সহযোগিতা ছাড়া ক্লাইমেক্স সিন সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। কারণ ওইটা বেশ ক্রিটিক্যাল সিন ছিলো, দুটো এপিসোড দর্শক ওই ক্রিটিক্যাল সিনেই দেখতে পারবেন। অবশ্যই সিন শেষ করতে সৃজিত বড় ভূমিকা রেখেছে, তবে রাহুল বোস সেই সিনটা করতে আমাকে কমফোর্টটা দিয়েছেন। এটা কো-আর্টিস্ট হিসেবে বেশ জরুরী। এরজন্য রাহুল বোসের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। শুরুতে যদিও আমি জানতাম না রাহুল বোসের সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি, অসম্ভব ভালো একজন মানুষ তিনি, দারুণ একজন কোআর্টিস্ট। বড় মানুষরা যে নমনীয়, বিনয়ী হন- এটা আমি তাকে দেখে শিখলাম। আর সৃজিত মুখার্জীতো সৃজিত মুখার্জীই। তার সাথে কাজ করতে পারাই বড় ব্যাপার। তিনি প্রচণ্ড সাপোর্টিভ একজন মানুষ, মুশকান চরিত্রটি যেন আমি ঠিকভাবে ধারণ করতে পারি এরজন্য উনার চেষ্টার কমতি ছিলো না।