বাহাত্তর বছর বয়সী ইসমাইল সাহেব কলেজের অধ্যাপনা থেকে রিটায়ার করেছেন বেশ অনেকদিন। ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনী নিয়ে সংসার। ইসমাইল সাহেবের নাতনীর নাম অনুসূয়া। অনুসূয়া একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। দাদা নাতনির বেশ চমৎকার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
সম্প্রতি, ইসমাইল সাহেব অস্থির হয়ে উঠেছেন দুটি বিষয়ে। একটি হলো বাংলায় ছাত্রদের নকল। অন্যটি নিজ গ্রামে পুরনো একটি শিমুল গাছের কেটে ফেলার সংবাদ। বাংলায় কেন ছাত্ররা নকল করবে তা ভেবে অস্থির ইসমাইল সাহেব। তিনি মানতে পারেননা। তিনি ঠিক করেছেন নকল করে বহিষ্কার হওয়া একজন ছাত্রের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। ইসমাইল সাহেব তার নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে একজন নকল করা ছাত্রের সঙ্গে দেখা করেন। একজন অভিভাবক একজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যেই গ্রাম থেকে তিনি একটা সংবাদ পান।
এদিকে একটা পুরানো শিমুল গাছ কেটে ফেলার সংবাদ শুনে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। যে করেই হোক এই গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। তিনি নানা জায়গায় ফোন করতে চেষ্টা করেন। এর মধ্যে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। একটা গাছ কাটা নিয়ে তিনি এতটা আবেগী এবং অসুস্থ হবেন কেউ ভাবতে পারেনি। অনুসুয়া তার এক বন্ধুকে নিয়ে গ্রামে ছুটে যায় যে, করেই হোক গাছ কাটা থামাতে হবে। গাছ কাটার কথা শুনে ইসমাইল সাহেব এমন হবার কারণ, এর গাছের নিচে পণ্ডিত মশাইয়ের কাছে হাতে খড়ি নিতে আসতো গ্রামের ছেলেরা। ইসমাইল সাহেবকেও তার বাবা সেই পাঠশালায় দিয়ে যান। সেটা ছিল ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। পণ্ডিত মশাই তাদের বলেছিলেন, তোরা জানিস, মাতৃভাষার জন্যে ঢাকায় লড়াই হয়েছে গতকাল। অনেক রক্ত ঝরেছে। এখানেই তিনি শেখেন বাংলা স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ। পরবর্তীতে সেই গাছের পাশেই গড়ে উঠে বিদ্যালয়। সেই শিমুল গাছ ঘিরে ইসমাইল সাহেবের ছেলেবেলার কত স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু অনুসুয়া ও তার বন্ধু গ্রামে ছুটে গিয়ে কী গাছ কাটা বন্ধ করতে পারবে?
টেলিফিল্মটিতে নাতনি অনুসূয়ার চরিত্রে অভিনয় করছেন তানজিন তিশা। এ প্রসঙ্গে তিশা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ভাষা দিবস ভিত্তিক কোন কাজ এই প্রথম আমার। দুদিন কাজ করতে গিয়ে এমন একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম গল্পে তা বলে বোঝাতে পারবনা। দর্শক প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’ মাসুম শাহরীয়ারের রচনায় ‘নতুন ফাগুন’ টেলিফিল্মটি পরিচালনা করেছেন আবু হায়াত মাহমুদ। অভিনয়ে আরও রয়েছেন ওয়াসেক, সৈয়দ হাসান ইমাম প্রমুখ।
এদিকে আরেকটি গল্পে দেখা যাবে, হারুনুর রশীদ একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে এসিসটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। বেতন ভালো পান, স্ত্রী আলতা গৃহিণী তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ। তাদের একমাত্র ছেলে সিয়াম একটা ইংরেজি স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ছে। সায়েমের ফাস্ট টার্ম রেজাল্ট খুব খারাপ। তিন সাবজেক্টে ফেল করেছে। ছেলে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে এসেছে স্কুল থেকে, বাবা মাকে ভাইস প্রিন্সিপাল ডেকেছে। প্রতিদিনই রাত করে বাড়ি ফেরে হারুন। হারুনের অফিস, কাগজ কলমে ৯টা থেকে ৫টা, কিন্তু বাস্তবে ৯টা থেকে ৯টা। বাড়ি ফেরেন হারুন নিত্য মাথায় ব্যথা নিয়ে। দ্রুত ডিনার শেষে একটা ট্যাবলেট খেয়ে শোয়া প্রায় অভ্যাস হয়ে গেছে। রাতে ফেরার পর আলতা হারুনকে ছেলের রিপোর্ট দেখানো বা পেরেন্টস কলের কথা বলতে পারে না। সকালের নাস্তার টেবিলে আলতা জানায় আজ বিকেল তিনটায় স্কুলে যেতে হবে দুজনকেই। হারুন ক্ষেপে যায়। কোনোমতে অফিস থেকে দু’ঘণ্টার ছুটি নিয়ে স্কুলে আসে। ভাইস প্রিন্সিপাল পরামর্শ দেয় যাতে মা বাবা সময় দেয় অথবা প্রাইভেট টিউটরের কাছে পাঠায়। হারুন একদিকে তার অফিসের মার্কেটিং এর চাপ আর ছেলের এই অবস্থা আলতা কি করবে? আলতা জানায় গত বছর পর্যন্ত সে ছেলেকে পড়াতে পেরেছে কিন্তু ক্লাস সিক্সের ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেকে পড়াতে তার পক্ষে সম্ভব না। হারুন জানায় প্রতি সাবজেক্টের জন্য প্রাইভেট টিউটরের কাছে পাঠানো তার সাধ্যের বাইরে। হঠাৎ এক সকালে আলতা তার ছেলেকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে সিয়াম পুরনো স্কুলের জন্য, বন্ধুদের জন্য কান্নাকাটি করে। হারুন বিষয়টা নিয়ে বিরক্ত হয়। আলতার যুক্তি পড়াশুনা তো ক্লাসের জন্য। যে জ্ঞান অর্জনের জন্য পুরো পরিবার অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে সেই জ্ঞান দরকার নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সিয়াম নতুন স্কুলে যায়।এই বড় মাঠ দেখে সে বিস্মিত হয়ে ভাবে, এত বড় মাঠ আমাদের! কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিয়ামের পড়ালেখা কী হবে? এমন প্রশ্নে গড়ে উঠেছে টেলিফিল্মটি ‘বাবা মা’র স্কুল’ উপভোগ করার মাধ্যমে জানা যাবে।
আজাদ আবুল কালামের রচনায় টেলিফিল্ম ‘বাবা মা’র স্কুল’ পরিচালনা করছেন আবুল বাশার সোহেল। এতে অভিনয় করেছেন ইন্তেখাব দিনার, তানিয়া আহমেদ, সাবেরী আলম, শ্যামল তন্বী প্রমুখ। নাট্যকার আজাদ আবুল কালাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ভাষা দক্ষতা কেবল। জ্ঞান নয়। শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে নিছক দক্ষতা বাড়াতে ভাষা শিক্ষা কোন কার্যকর সিদ্ধান্ত নয়। পাশাপাশি একটি দেশে নানান ধরণের শিক্ষাব্যবস্থায় বিভ্রান্ত অভিভাবকের স্বরূপ তুলে ধরতে চেয়েছি আমি। ভাষা কেন্দ্রিক কোন পাণ্ডুলিপি রচনা এই প্রথম করলাম।
দুটো টেলিফিল্ম প্রচার হবে ২১ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে। চ্যানেল আই এর বিশেষ অনুষ্ঠানমালায়। নতুন ফাগুন প্রচার হবে রাত ৮টায় । অন্যদিকে ‘বাবা মা’র স্কুল’ প্রচার হবে বেলা ৩.০৫ মিনিটে।