২০২০ সাল যেন এক স্থবির পৃথিবী। বছরের ছয় মাস চলে গেল শুধু একটি ভাইরাস থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য লড়াই করে। একে অপরের থেকে দূরে থেকে জীবন চালানো হয়ে গেছে এখন দায়। মানুষের আশা পরিকল্পনা সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে কোভিড-১৯। কর্মহীন জীবনে সঞ্চিত অর্থ আর সরকারি সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে চলা খুব সহজ নয়। তথাপি করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে ঘরবন্দি থাকা ছাড়া আর কোন পথ নেই। তাতেও মুক্তি মিলছে না অদৃশ্য এ ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে। কী হবে আগামীতে এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারও। মানুষের মাঝে মানসিক অশান্তি ক্রমশ বাড়ছে আগামী দিনের চিন্তায়। জীবন ও জীবিকা সবটাই অনিশ্চিত।
কোভিড-১৯ এ মানুষের মৃত্যু এখন কেবল সংখ্যা গোণা। মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ কমে যাচ্ছে। কারণ এ ভাইরাসের আতংক সবার মনে। একে অপরকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা এ নিয়ে সন্দিহান। শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে জীবন চালানো অনেকটাই অসম্ভব বাংলাদেশের মত ঘন বসতির দেশে। ভাইরাসের ভয়ে ঘরে বন্দি জীবিকা বিহীন জীবন করোনাভাইরাসের চেয়ে ভয়ংকর। তাই লকডাউনকে কার্যকর করা কঠিন হয়েছে কোভিড-১৯ এর আক্রমণের শুরু থেকে। জীবন যুদ্ধে মৃত্যুকে নিয়তির বিধান মনে করে এদেশের মানুষ কোভিড-১৯ নিয়ে সচেতন হয়নি আজ অবধি।
রোগে মহামারীতে পৃথিবী বদলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। বিগত সময়ের ইতিহাস তার সাক্ষী। তবে কোভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবী নিয়ে অন্যরকম একটা প্রত্যাশা ছিল জনমনে। ধারণা ছিল প্রকৃতি এ অদৃশ্য ভাইরাস দিয়ে মানুষকে বদলে দিতে পারবে। অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম দুর্নীতি থেকে সরে আসবে মানুষ। মানুষের অর্থ বৈভবের দাম্ভিকতা কতটা অর্থহীন তা অতন্ত বুঝবে এ মহামারীতে। কিন্তু সব কিছু ক্রমশ মিথ্যা মোহতে পরিণত হচ্ছে।
কোভিড-১৯ মানুষকে পরির্বতন করতে পারেনি। বরং নির্দয় হয়ে শোষক শ্রেণী নিজেদের অন্যায়, দুর্নীতি চলমান রেখেছে। শোষণ করছে সাধারণ মানুষকে। গরীবের ত্রাণ চুরি, বাজারের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, চিকিৎসা খাতের অনিয়ম সমাজে ভালো কোন ইঙ্গিত বহন করে না।
করোনামুক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সবার আগে দরকার পারস্পরিক সহমর্মিতা। অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে শুধু নিজের কথা চিন্তা করলে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হবে বেশি। সীমিত পরিসরে বাংলাদেশ সরকার লকডাউন উঠিয়ে দেবার পর মানুষ অনিশ্চিত জীবনের সম্মুখীন হচ্ছে বেশি। জীবন যাত্রায় সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আয় কমে গেছে মানুষের। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে বলে চাকরি চলে যাচ্ছে অনেকের। বাসা ভাড়া দিতে না পেরে শহর ছেড়ে মানুষ চলে যাচ্ছে গ্রামে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, মানুষ এখন অন্যের কথা ভাবতে নারাজ। যে মরার মরবে, কিন্তু খেয়ে পরে নিজে টিকে থাকাটাই মুখ্য বিষয়। এ মানসিকতা থেকেই বোধগম্য হয় কোভিড-১৯ পরর্বতীতে যে পৃথিবী আসছে তা মানব জাতিকে আরো বিভাজিত করবে। কোভিড -১৯ কালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নৈতিকতা শব্দটি উহ্য রাখবে ক্ষমতাবান শ্রেণী।
প্রকৃতি থেকে মানুষ শিক্ষা নিতে পারছে না এটাই সত্যি । তাই বৈষয়িক চিন্তার জগতে সম্পদ ও ক্ষমতার জন্য মহামারীকে পুঁজি করছে সমাজের ক্ষমতাবান পুঁজিপতি শ্রেণী। আর এ শ্রেণীর হাতে জিম্মি সমাজ দেশ তথা সারা বিশ্ব। এদের অনিয়ম দুর্নীতিকে প্রকৃতি এত বড় দুর্যোগ সৃষ্টি করে থামাতে পারেনি। আর তারা নিজেদের বিবেকবোধ দিয়ে মানবিক পৃথিবী গড়তে সংশোধিত হবে সে আশা দূরাতীত।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)